ট্রেন-অটোরিকশার সংঘর্ষে যেভাবে বেঁচে গেল সাড়ে তিন বছরের আতাউল্লাহ
Published: 3rd, August 2025 GMT
একসঙ্গে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের সবাই ছিলেন শোকে কাতর। এরই মধ্যে হঠাৎ রাতে ফিরে এল এক শিশু। দুর্ঘটনায় তারও মৃত্যু হয়েছে বলে ভেবেছিলেন সবাই। শিশুটির অপ্রত্যাশিত এই বেঁচে যাওয়া শত শোকের মধ্যে যেন সান্ত্বনার পরশ পরিবারটির কাছে।
কক্সবাজারের রামুর রশিদনগর রেলক্রসিংয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় এক পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর জানা গিয়েছিল গতকাল শনিবার দুর্ঘটনার পর। হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও এক পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছিলেন। মৃতদের তালিকায় নাম ছিল সাড়ে তিন বছর বয়সের আতাউল্লাহরও। কিন্তু রাতে আতাউল্লাহকে নানাবাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যান শিশুটি যে মাদ্রাসায় পড়ে, সেখানকারই কেউ একজন। নানা জাফর আলম তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভেবেছিলেন দুই মেয়ে, নাতিদের কেউই বেঁচে নেই। আতাউল্লাহর এই ফিরে আসা তাই তাঁর কাছে ছিল অবিশ্বাস্য।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালীর সাবেক পাড়ায় জাফর আলমের বাড়ি। শনিবার দুপুরে সেখান থেকেই জাফর তাঁর দুই মেয়ে ও দুই নাতিকে বিদায় দিয়েছিলেন। ভারুয়াখালী থেকে তাঁরা ঈদগাঁও উপজেলার মেহেরঘোনায় যাচ্ছিলেন। সেখানে জাফরের বড় মেয়ে আসমাউল হোসনার শ্বশুরবাড়ি। মেয়ে ও নাতিদের বিদায় দেওয়ার আধঘণ্টা পরই জাফর দুর্ঘটনার কথা জানতে পারেন। দুর্ঘটনাস্থল রশিদনগরে ছুটে গিয়ে দেখেন খণ্ড খণ্ড হয়ে যাওয়া দেহাবশেষ। অটোরিকশায় থাকা দুই মেয়ে ও দুই নাতি-নাতনির সবাই মারা গেছে বলে ভেবেছিলেন তখন। কিন্তু আতাউল্লাহর ফিরে আসার পর জানতে পারলেন, বেঁচে আছে তাঁর নাতি।
কিন্তু কীভাবে বেঁচে গেল আতাউল্লাহ? আজ রোববার সকালে মুঠোফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাফর আলম। তিনি বলেন, অটোরিকশায় ঈদগাঁওয়ের মেহেরঘোনায় রওনা দেন তাঁর দুই মেয়ে আসমাউল হোসনা (২৭) ও রেণু আরা আক্তার (১৩) এবং আসমার সাড়ে তিন বছরের ছেলে আতাউল্লাহ ও দেড় বছরের ছেলে আশেক উল্লাহ। খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, কেউই বেঁচে নেই। মারা গেছেন অটোরিকশাচালক হাবিব উল্লাহও (৫০)।
কক্সবাজারের রামুতে ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই মেয়ে ও এক নাতিকে হারিয়ে আহাজারি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাফর আলম। গতকাল বিকালে রামুর রশিদনগরে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কুমিল্লার মুরাদনগরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় মামলা করেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে খোলা কাগজের জেলা প্রতিনিধি মো. শাহে ইমরান চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলার বাদী শাহে ইমরান কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বাসিন্দা।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন উপজেলার রহিমপুর উত্তরপাড়া এলাকার মো. শুকুর আলী, খামারগ্রাম গ্রামের আশিকুল ইসলাম সিদ্দিকী, সিদ্ধেশ্বরী গ্রামের মো. নাহিদুল ইসলাম ওরফে নাঈম, গুঞ্জর উত্তর গ্রামের কামাল হোসেন। তাঁদের মধ্যে শুকুর আলী রড দিয়ে এক সাংবাদিককে পেটাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরের আল্লাহু চত্বরে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আসিফের অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিককে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে সাত সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন।
আরও পড়ুনমুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫৩০ জুলাই ২০২৫ঘটনার পর থেকে প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত সাংবাদিকেরা বলছেন, আসিফ মাহমুদের অনুসারীদের ওপর যারা প্রথমে হামলা করেছে, তারাই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে। আসিফের অনুসারীদের দাবি, সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা বিএনপি নেতা কায়কোবাদের অনুসারী। তবে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জনের দাবি, সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা উপদেষ্টা আসিফের লোক।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বুধবার বিকেলে সমাবেশের একপর্যায়ে কর্মসূচি পালনকারীদের ওপর বিক্ষোভ বিরোধীরা হামলা চালায়। এ সময় সংবাদকর্মীরা হামলার ফুটেজ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে বিক্ষোভ বিরোধীদের মধ্য থেকে একদল সন্ত্রাসী সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। এ সময় বাদীসহ ৭ জন সাংবাদিক আহত হন। হামলার সময় সাংবাদিকদের ক্যামেরা, মুঠোফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেন আসামিরা।
মামলার বাদী মো. শাহে ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমরা হামলার শিকার হয়েছি। আমাদের মারধরের পাশাপাশি ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার পরপরই আসামিরা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। যার কারণে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
আরও পড়ুনউপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি৩১ জুলাই ২০২৫