লাকসামে রেলের জমিতে হকার্স মার্কেট, ইজারা দিচ্ছে পৌরসভা
Published: 6th, May 2025 GMT
নানা সংকটে দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে বন্ধ আছে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম। এই স্টেশনের লাগোয়া রেলওয়ের জমি ও লুপলাইন দখল করে নির্মিত হয়েছে ‘হকার্স মার্কেট’ নামে ৫২৪টি দোকানবিশিষ্ট একটি স্থায়ী মার্কেট। স্টেশন বন্ধ থাকলেও লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথে ট্রেন চলাচল অব্যাহত আছে, কিন্তু রেলক্রসিংয়ের জন্য ব্যবহৃত লুপলাইনটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, কুমিল্লার রেলওয়ের ইতিহাসে দৌলতগঞ্জের এই দখলকে সবচেয়ে বড় দখল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দীর্ঘ ৯ বছরেও রেল বিভাগ এটি উচ্ছেদ করতে পারেনি। উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে গেলে রাজনৈতিক চাপ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনীহার কারণে রেলের কর্মীদের অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতগঞ্জ স্টেশন লাগোয়া লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথ ও লুপলাইনের মাঝখানে আগে একটি জলাশয় ছিল। ২০১৫ সালের অক্টোবরে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো.
২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তাজুল ইসলাম নিজে মার্কেটটির উদ্বোধন করেন। পরে দোকানগুলো টোকেনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। মার্কেট নির্মাণ ও দোকান বিক্রির পুরো প্রক্রিয়া তদারক করেন লাকসাম পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবুল খায়ের। ৫ আগস্টের পর তাজুল ইসলাম ও আবুল খায়ের পলাতক থাকায় এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে লোকবল–সংকটে হঠাৎ দৌলতগঞ্জ স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। লুপলাইনটি দখল হওয়ায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা ছিল। স্টেশন চালু থাকা অবস্থায় আগে ট্রেন ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও দখলের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্টেশন ভবনের পাশ থেকে শুরু করে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মিটারজুড়ে আছে মার্কেটটি। মার্কেটের কারণে লুপলাইনের কোনো অস্তিত্ব নেই। টিনশেড ও ভিটি পাকা মার্কেটে প্রতিটি দোকানের আয়তন দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ছয় ফুট। অনেক ব্যবসায়ী একাধিক ভিটি একত্র করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ এসব দোকান অন্যদের ভাড়া দিয়েছেন। দোকানগুলোতে মাছ, মাংস, মুদি, ফল, কাঁচাবাজার, জামাকাপড়সহ নানা পণ্যের বেচাকেনা চলছে।
মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, তাঁর দোকানটিতে মোট চারটি ভিটি আছে, প্রতিটি ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘এই মার্কেট (লাকসাম) পৌরসভার উদ্যোগে তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা দোকানগুলো টোকেন দিয়ে বিক্রি করেছিলেন। এখন প্রতিদিন ভিটিপ্রতি ৫০ টাকা খাজনা দিই।’
মোট আটটি ভিটি ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে যুক্ত করে শুঁটকির দোকান দিয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ৫০ টাকা দৈনিক ভাড়া দিই। যার কারণে প্রতিদিন ৪০০ টাকা ভাড়া ও ৪০০ টাকা খাজনা দিচ্ছি। এসব দোকান বিক্রি করেছে পৌরসভা; রেলের জায়গা তারা কীভাবে বিক্রি করেছে, আমরা জানি না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আগে দৌলতগঞ্জ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। সাবেক মন্ত্রী তাজুলের নির্দেশে মেয়র খায়ের তাঁদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে এখানে এনে বসান। এরপর কাঁচাবাজারের জায়গায় বহুতল ভবনের কাজ শুরু হয়েছিল; কিন্তু তাঁদের পতনের পর সেটি আর শেষ হয়নি।
প্রতিবছর লাকসাম পৌরসভা থেকে মার্কেটটি ইজারা নিয়ে আগে খাজনা তুলতেন আওয়ামী লীগের লোকজন; এখন সেই কাজ করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। চলতি বছরের পয়লা বৈশাখ থেকে মার্কেটটি ইজারা পেয়েছেন লাকসাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল মজুমদার।
কুমিল্লার লাকসাম দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিমে মার্কেটের এই জায়গায় একসময় লুপলাইন ও জলাশয় ছিল। দখলের পর সেখানে হকার্স মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি তোলাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র লওয় প রসভ
এছাড়াও পড়ুন:
বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট
সারা দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
প্রস্তাবে জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠনের বিষয়টিও প্রস্তাবে উঠে এসেছে। প্রস্তাবে মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে মামলা দায়েরের আগেই অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হবে এবং আদালতের ওপর মামলার ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো বাণিজ্যিক মামলা বা আবেদনের মূল্যমান ৫০ লাখ টাকা হলে তা বাণিজ্যিক আদালতে বিচার্য হবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার সময়ে সময়ে এই নির্ধারিত মূল্যমান সীমা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।
সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বণিকদের সাধারণ লেনদেন থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বিমা এবং অংশীদারত্ব চুক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা খাত এবং শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ–সম্পর্কিত বিরোধকে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এর ফলে আধুনিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ–সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের বিরোধ একটি বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।
বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে প্রস্তাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চূড়ান্ত শুনানি অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে সংক্ষিপ্ত বিচারের সুযোগও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবে আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আর বলা হয়, বাণিজ্যিক আপিল আদালত ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।