রাফিনিয়াদের কাঁদানো কে এই ফ্রাত্তেসি
Published: 7th, May 2025 GMT
বারবার রূপ বদলানো ম্যাচটা তখন রোমাঞ্চের চূড়ায়। নির্ধারিত সময়ে ৩–৩ সমতায় থাকার পর চলছিল অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা। কখন কী হয়, সেদিকেই চোখ সবার। কে নায়ক হয়ে উঠতে পারেন, তা নিয়েও ছিল কৌতূহল। তবে এমন পরিস্থিতিতে নায়ক হিসেবে খুব কম মানুষই হয়তো ডেভিড ফ্রাত্তেসির কথা ভেবেছিলেন।
সেন্টার মিডফিল্ডে খেললেও চ্যাম্পিয়নস লিগে আগের ১২ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ১ গোল। গোল যে তিনি সচরাচর করেন, তা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। কিন্তু ফুটবল তো মুহূর্তের খেলা। একটি মুহূর্তই বদলে দেয় সব হিসাব–নিকাশ। আর নাটকীয় এই মুহূর্তে নায়ক হয়ে উঠতে পারেন যে কেউ।
গতকাল রাতে সেই নায়ক হওয়ার উপলক্ষটা লুফে নিলেন ২৫ বছর বয়সী ফ্রাত্তেসি। বার্সার বক্সের ভেতর বল পেয়ে ভুল করেননি। নিয়মিত স্কোরার না হলেও গোল করলেন স্ট্রাইকারসুলভ ফিনিশিংয়ে। সামনে থাকা দুই ডিফেন্ডারের ফাঁদ এড়িয়ে করেছেন নিখুঁত প্লেসিং। ফ্রাত্তেসির এই গোলই মূলত পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বার্সেলোনা–ইন্টারের ধ্রুপদি চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের।
আরও পড়ুনইয়ামালের একের পর এক শট ঠেকিয়ে মহানাটকের নায়ক সমার৩ ঘণ্টা আগেগোলের পর ফ্রাত্তেসির উদ্যাপনটাও ছিল দেখার মতো। বাঁ পাশের কর্নার ধরে দৌড়ে উঠে পড়েন গ্যালারি ও মাঠের মাঝামাঝিতে থাকা গেটে। এ সময় তাঁর সঙ্গে উদ্যাপনে যোগ দেন অধিনায়ক লাওতারো মার্তিনেজও। উদ্যাপনের এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, গেটটা বোধ হয় টপকেই যাবেন ফ্রাত্তেসি। যদিও শেষ পর্যন্ত নেমে এসে সতীর্থদের সঙ্গে সারেন বাকি উদ্যাপন। তাঁর এই গোলই শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন ভেঙেছে বার্সার। কারণ হয়েছে রাফিনিয়াদের কান্নার।
সতীর্থদের সঙ্গে ফ্রাত্তেসির উদ্যাপন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৮ ছাত্র সংগঠনের কার্যালয় মধুর ক্যান্টিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ক্রিয়াশীল অন্তত আটটি ছাত্র সংগঠন তাদের কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে নিজেদের কার্যালয় বলে দাবি করে। তাদের এমন কর্মকান্ড আইনগতভাবে কতটা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। নতুন বাংলাদেশে সংগঠনগুলোর এমন দাবিতে ক্ষুব্ধ রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি সংগঠনগুলোর দেওয়া বিভিন্ন বিবৃতি ও নতুন কমিটির ঘোষণাপত্র অনুসন্ধান করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মধুর ক্যান্টিনকে নিজেদের কার্যালয় হিসেবে দাবি করা সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ৩ মাদরাসা শিক্ষার্থী নিখোঁজ, উদ্বিগ্ন পরিবার
শাবিপ্রবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ৪ দিনের রিমান্ডে ২ যুবক
গত ২০ জুন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বাংলা কলেজ সংসদের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণাপত্রে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে দাবি করা হয়েছে।
গত ১০ জুন ঢাবি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ১৮ জুন ঢাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী), ১১ জুন ঢাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), ৫ মার্চ বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, ২১ মে ঢাবি ছাত্র ফেডারেশন, ৬ মে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও ১ জুন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের দেওয়া বিবৃতিতে কার্যালয় বা ঠিকানা হিসেবে মধুর ক্যান্টিন দাবি করা হয়েছে।
বামপন্থী ছাত্র সংগঠন গুলোর জোট গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটে ‘বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’ অন্তর্ভুক্ত।
২০২২ সালের ২৬ মে ‘আট ছাত্র সংগঠন’ এর ব্যানারে দেওয়া এক বিবৃতিতেও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে দাবি করেছে। ওই আট ছাত্র সংগঠনের ভিতরে ছাত্র ইউনিয়নও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর ‘প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ’ ব্যানারে বামপন্থী নয়টি ছাত্র সংগঠনের দেওয়া বিবৃতিতেও কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিন দাবি করা হয়েছে।
ঢাবির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, “আমরা কোন রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় বলতে বুঝি, যেখানে ওই সংগঠনের দাপ্তরিক কার্যাবলী সম্পাদিত হয়ে থাকে। মধুর ক্যান্টিন হলো সব শিক্ষার্থীদের জন্য চা-কফির সঙ্গে আলাপচারিতা ও বসে সময় কাটানোর জায়গা। এটা রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সব শিক্ষার্থীদের জন্যই সমান অধিকারের জায়গা। এটাকে কোনো ছাত্র সংগঠন তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্যপারে নির্দেশনা কী তা অস্পষ্ট থেকে যায়।”
তিনি বলেন, “আদৌ মধুর ক্যান্টিনকে কি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে? উত্তর হবে ‘না’। তাহলে মধুর ক্যান্টিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠিত কার্যকলাপের জায়গা নয়।”
তিনি আরো বলেন, “যদিও ঢাবির ছাত্র সংগঠনগুলো অঘোষিতভাবেই দীর্ঘকাল থেকেই মধুর ক্যান্টিনে তাদের রাজনৈতিক আলাপচারিতা, সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভা করে থাকে। তার মানে এই নয় যে, কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই একাধিক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন মধুর ক্যান্টিনকে তাদের রাজনৈতিক প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এটা সুস্পষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি বা নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।”
ঢাবির সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক প্রান্ত মাহমুদ বলেন, “ঢাবির মধুর ক্যান্টিন শুধু বিভিন্ন দল, মত ও পথের রাজনৈতিক আড্ডা হিসেবে পরিচিত ছিল—এই ধারণাটি একপাক্ষিক ও অসম্পূর্ণ। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই ক্যান্টিন ছিল তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি, নবীন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের চিন্তা বিনিময়ের প্রাঙ্গণ। এখানে শিল্প, সাহিত্য, নাটক, সিনেমা কিংবা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে বহু আলাপ-আলোচনা হয়েছে, মতের অমিল হলেও চিন্তার বহুত্ব ছিল একটানা।”
তিনি বলেন, “দুঃখজনকভাবে, আজ মধুর ক্যান্টিনে সেই সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিক প্রাণ নেই বললেই চলে। এখন কিছু ব্যক্তি মধুর কান্টিনকে শুধুই রাজনৈতিক সংগঠনের দাপ্তরিক কার্যলয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আমার মতে, এটা মধুর ক্যান্টিনের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে সংকুচিত করে ফেলছে। আমরা চাই, এই প্রজন্ম রাজনৈতিক ফোবিয়াকে অতিক্রম করে এক বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চিন্তার চর্চা হোক। মধুর ক্যান্টিন হোক মুক্ত আলোচনার ক্ষেত্র, যেখানে রাজনীতি সঙ্গে থাকবে সাহিত্য, শিল্প, সমসাময়িক চিন্তার সমান জায়গা।”
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে মধুর ক্যান্টিনকে অফিসের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করলে আপত্তি নেই আমাদের। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মধুর ক্যান্টিন সংস্কার করে সব ছাত্র সংগঠনের জন্য আলাদা আলাদা স্পেস তৈরি করে দিলে গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির চর্চা ও বিকাশ হবে।”
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, “এটা তো অলংকারিক কার্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়। যে কোনো সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরু করে আলোচনা, মতবিনিময়ের ইতিহাস মধুর ক্যান্টিনে। সেই জায়গা থেকে আমরাও এটা করেছি আর কী। এটা একটা অলংকারিক কার্যালয় আমরা চিন্তা করতেই পারি। আমরা মনে করছি এটা একটি ঐতিহাসিক জায়গা, সেই জায়গা থেকে আমরা এটি নির্ধারণ করেছি।”
ঢাবি ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ঠিকানাটা আমরা সব সংগঠনই এভাবে লিখে আসছি। কারণ সবাই মধুর ক্যান্টিনে থাকে, আড্ডা দেয়। এটা অফিস না, এটা আগে থেকেই করে আসছে. আর কি।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) আহ্বায়ক মুক্তা বাড়ৈ বলেন, “ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও মধুর ক্যান্টিনের টেবিলগুলো সেখানে কিন্তু তারা বসে। এটা কারো কার্যালয় না। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা কার্যালয় থাকে। এটা (মধুর ক্যান্টিন) কারো সাংগঠনিক কার্যালয় বলে আমরা জানি না। এমন যদি কেউ দাবি করে, সেটা আমরা ঠিকও মনে করি না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার মিসেস ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এখন পর্যন্ত এ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করিনি। মধুর ক্যান্টিনের বিষয় নিয়ে কিছুদিন পরে কাজ শুরু করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এই স্থাপনাগুলো দেখভাল করে আমাদের এস্টেট অফিস। আমি এস্টেট অফিসের সঙ্গে কথা বলব, তারা মধুর ক্যান্টিনের সঙ্গে কথা বলুক। তারপরে আমি এটাতে হস্তক্ষেপ করব। কারণ আমি চাই, যার যেটা দায়িত্ব সে সেটা করুক।”
ঢাকা/মেহেদী