সিলেটকেন্দ্রিক এনজিও ‘সীমান্তিক’। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নিজের এই এনজিওকে কাজে লাগিয়ে একচেটিয়া দেশি-বিদেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও তিনি। আত্মীয়তার কারণে কবিরের ছায়া হয়ে ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও তাঁর ভাই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.

এ কে আব্দুল মোমেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সময়কালে সরকারি জায়গা বন্দোবস্তে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ড. কবির। তাঁর এনজিও সীমান্তিক সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সিলেট নগরীতেই ১৩০ শতক জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ এলাকায় সীমান্তিকের এখন অন্তত ২০টি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে।
জানা গেছে, সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা ড. কবিরের গ্রামের বাড়ি জকিগঞ্জের কালীগঞ্জে। মন্ত্রীর আত্মীয়তার সুযোগে ২০০৯ সালে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান তিনি। কয়েক বছর আগে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও হন। 

গত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন কবির। নির্বাচনী হলফনামায় আহমদ আল কবির তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৬ হাজার ৩২৯ টাকার। বার্ষিক আয় দেখান ৪৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর সম্পদ দেখান ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৭ টাকার। নগরীর উপশহরে একাধিক বাড়িসহ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। 
সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে নীতিমালার তোয়াক্কা না করে গড়ে তোলেন একের পর এক প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে ড. কবির নগরীর পূর্ব শাহি ঈদগাহ এলাকায় ৩৩ শতক জায়গা বন্দোবস্ত নেন আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ও মানবসম্পদ কেন্দ্রের নামে। দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে ৯ তলা ভবন করেন। তৎকালীন মন্ত্রী আবুল মাল মুহিতের নাম ভাঙিয়ে জায়গা বাগিয়ে নেন ড. কবির। 
সরেজমিন দেখা গেছে, ওই ভবনে আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ও মানবসম্পদ কেন্দ্রের পাশাপাশি আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আরটিএম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মা ও শিশু স্বাস্থ্য ক্লিনিক, সিলেট সদর উপজেলা ডায়াবেটিক সমিতি, আরটিএম নার্সিং কলেজ, আরটিএম ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড পুনর্বাসন কেন্দ্র, আরটিএমআই ম্যাটস ও আইএইচটি নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে একটি ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠানও। স্বাস্থ্যসহ জনগণের সেবার কথা বলে বন্দোবস্ত নেওয়া হলেও করা হয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নিয়মে না থাকলেও দেওয়া হয়েছে ভাড়া। 
পূর্ব শাহি ঈদগাহের মতো নগরীর মাছিমপুর এলাকায় সিলেট ল’ কলেজের পাশে একইভাবে ড. কবির এনজিও সংস্থার নামে বন্দোবস্ত নেন ৯৭ শতক জমি। জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ২০১২ সালে ৯৭ শতক জায়গা ৯৯ বছরের জন্য সীমান্তিকের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে ওই জায়গায় গড়ে তোলা হয় সীমান্তিক হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, সীমান্তিক আইডিয়াল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটউট এবং সীমান্তিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ। 

সরেজমিন দেখা গেছে, সেখানে চারটি ভবন আছে। ২০১৯ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) থেকে ছয় তলার অনুমোদন নিয়ে ভবন করা হয়েছে আট তলা পর্যন্ত। বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান। 
২০০৭ সাল থেকে সিটি করপোরেশনের মাতৃসদন বিনোদিনী হাসপাতালটি সীমান্তিক পরিচালনা করে আসছে। পরিবার পরিকল্পনাসহ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়ন করে এই এনজিও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে সীমান্তিকের চেয়ারপারসন শফি মিয়া সমকালকে বলেন, ঢাকা ও সিলেটে তাদের  সম্পদ রয়েছে। ভবন অনুমোদনের বাইরে করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। ইউএসআইডির ফান্ড নেই দাবি করে শফি মিয়া জানান, আগামী জুনে তাদের সব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।  
 ড. আহমদ আল কবির দাবি করেন, সীমান্তিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। নিয়ম মেনে বন্দোবস্ত ও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনজ ও এল ক য় এনজ ও শতক জ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে আট ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার সমর্থনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার এসব কর্মসূচিকে স্থানীয় লোকজন ‘পাল্টাপাল্টি শোডাউন’ হিসেবে মনে করছেন।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মতবিনিময় সভা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা।

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে ৫ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।

আরিফুল হকের এমন ঘোষণার পর ‘স্থানীয় প্রার্থী’ হিসেবে আসনটিতে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। একই দাবিতে সভা–সমাবেশ করছেন জেলা বিএনপির আরেক উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের অনুসারীরাও।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি। কোনো দিন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তে আমি আপনাদের খেদমতে এসেছি। কারণ, বিগত ১৭ বছর যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, এর ছিটেফোঁটাও গোয়াইনঘাটে লাগেনি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’

সভা শেষে উপজেলা সদরে আরিফুল হকের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। পরে তিনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব রব চৌধুরী ও ইকবাল আহমদ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস শুকুর ও কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপির একাংশ। মিছিল থেকে সিলেট-৪ আসনে আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা ‘লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল’, ‘হাকিম ভাই হাকিম ভাই, হাকিম ছাড়া উপায় নাই’, ‘মানি না মানব না, হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

যোগাযোগ করলে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনে জামায়াত শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বিপরীতে জয় পেতে হলে বিএনপিকে একজন “স্থানীয় ও শক্তিশালী” প্রার্থী দেওয়া উচিত। যেহেতু আমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা, তাই স্থানীয়রা আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল করছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’

স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আরিফুল, হাকিম ও হেলাল ছাড়াও সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন দলটির জেলা কমিটির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একই দিনে নির্বাচন-গণভোট সঠিক পদক্ষেপ: হাফিজ উদ্দিন আহমদ
  • বিএনপির প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক আটকে বিক্ষোভ
  • সিলেটে মোটরসাইকেলে এসে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা
  • সিলেটে মধ্যরাতে অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে আগুন
  • আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার দাবি নাগরিক কোয়ালিশনের
  • সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’
  • বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংসদে আলোচনা করে কাদিয়ানিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত: সালাউদ্দিন
  • কুতুবদিয়ায় পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু
  • বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে 'মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' পুনর্বহাল করা হবে : সালাহউদ্দিন আহমদ
  • বিদ্রূপের আরশিতে প্রতিফলিত ইতিহাস