সরকারি জায়গা বন্দোবস্তে সীমা ছাড়িয়েছে ‘সীমান্তিক’
Published: 9th, May 2025 GMT
সিলেটকেন্দ্রিক এনজিও ‘সীমান্তিক’। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নিজের এই এনজিওকে কাজে লাগিয়ে একচেটিয়া দেশি-বিদেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও তিনি। আত্মীয়তার কারণে কবিরের ছায়া হয়ে ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও তাঁর ভাই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সময়কালে সরকারি জায়গা বন্দোবস্তে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ড. কবির। তাঁর এনজিও সীমান্তিক সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সিলেট নগরীতেই ১৩০ শতক জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ এলাকায় সীমান্তিকের এখন অন্তত ২০টি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে।
জানা গেছে, সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা ড. কবিরের গ্রামের বাড়ি জকিগঞ্জের কালীগঞ্জে। মন্ত্রীর আত্মীয়তার সুযোগে ২০০৯ সালে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান তিনি। কয়েক বছর আগে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও হন।
গত সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন কবির। নির্বাচনী হলফনামায় আহমদ আল কবির তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৬ হাজার ৩২৯ টাকার। বার্ষিক আয় দেখান ৪৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর সম্পদ দেখান ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৭ টাকার। নগরীর উপশহরে একাধিক বাড়িসহ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে নীতিমালার তোয়াক্কা না করে গড়ে তোলেন একের পর এক প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে ড. কবির নগরীর পূর্ব শাহি ঈদগাহ এলাকায় ৩৩ শতক জায়গা বন্দোবস্ত নেন আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ও মানবসম্পদ কেন্দ্রের নামে। দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে ৯ তলা ভবন করেন। তৎকালীন মন্ত্রী আবুল মাল মুহিতের নাম ভাঙিয়ে জায়গা বাগিয়ে নেন ড. কবির।
সরেজমিন দেখা গেছে, ওই ভবনে আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ও মানবসম্পদ কেন্দ্রের পাশাপাশি আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আরটিএম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মা ও শিশু স্বাস্থ্য ক্লিনিক, সিলেট সদর উপজেলা ডায়াবেটিক সমিতি, আরটিএম নার্সিং কলেজ, আরটিএম ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড পুনর্বাসন কেন্দ্র, আরটিএমআই ম্যাটস ও আইএইচটি নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে একটি ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠানও। স্বাস্থ্যসহ জনগণের সেবার কথা বলে বন্দোবস্ত নেওয়া হলেও করা হয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নিয়মে না থাকলেও দেওয়া হয়েছে ভাড়া।
পূর্ব শাহি ঈদগাহের মতো নগরীর মাছিমপুর এলাকায় সিলেট ল’ কলেজের পাশে একইভাবে ড. কবির এনজিও সংস্থার নামে বন্দোবস্ত নেন ৯৭ শতক জমি। জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ২০১২ সালে ৯৭ শতক জায়গা ৯৯ বছরের জন্য সীমান্তিকের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে ওই জায়গায় গড়ে তোলা হয় সীমান্তিক হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, সীমান্তিক আইডিয়াল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটউট এবং সীমান্তিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেখানে চারটি ভবন আছে। ২০১৯ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) থেকে ছয় তলার অনুমোদন নিয়ে ভবন করা হয়েছে আট তলা পর্যন্ত। বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান।
২০০৭ সাল থেকে সিটি করপোরেশনের মাতৃসদন বিনোদিনী হাসপাতালটি সীমান্তিক পরিচালনা করে আসছে। পরিবার পরিকল্পনাসহ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়ন করে এই এনজিও। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে সীমান্তিকের চেয়ারপারসন শফি মিয়া সমকালকে বলেন, ঢাকা ও সিলেটে তাদের সম্পদ রয়েছে। ভবন অনুমোদনের বাইরে করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। ইউএসআইডির ফান্ড নেই দাবি করে শফি মিয়া জানান, আগামী জুনে তাদের সব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
ড. আহমদ আল কবির দাবি করেন, সীমান্তিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। নিয়ম মেনে বন্দোবস্ত ও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনজ ও এল ক য় এনজ ও শতক জ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় জ্বলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন
ফতুল্লার মুসলিম নগর নয়াবাজার এলাকার দীর্ঘদিনের জ্বলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকার সর্বস্তরের জনগন।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকালে মুসলিম নগর এলাকায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ গ্রহন করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈন উদ্দিন আহমদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার। এরআগে তারা মুসলিম নগর এলাকার জ্বলাবদ্ধতা পরিদর্শন করেন।
মানববন্ধনে মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ বলেন, বিগত দিনে যারা জন প্রতিনিধি ছিলো তারা এই এলাকার মানুষকে বঞ্চিত করেছে। তারা যদি যথাযথ ভাবে কাজ করতো তাহলে এই জন দূর্ভোগ সৃষ্টি হতোনা।
আবদুল জব্বার বলেন দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অতি দ্রুত এই এলাকার জ্বলাবদ্ধতা দূর করতে হবে। আমরা সব সময় জনগনের খেদমতে জনগনের সাথে থাকতে চাই, আমরা চাই একটি কল্যাণ রাস্ট্র। আপনারা আমাদের যদি সুযোগ দেন ইনশাআল্লাহ একটি ইনসাফ পূর্ণ দেশ উপহার দেবো।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবু সাঈদ মুন্না, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি মাওলানা আবদুল মোমিন সহ অনেক সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য দীর্ঘদিন যাবত মুসলিম নগর এলাকা জ্বলাবদ্ধতার জন্য প্রায় পাচ লাখ মানুষের যাতায়াতের রাস্তা জ্বলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পরেছে এলাকার সর্বস্তরের জনগন ।
আব্দুল মোমিন বলেন আগামী পনের দিনের মধ্যে যদি দৃশ্যমান কাজের কোন অগ্রগতি না দেখি এর চেয়ে কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
অন্যান্যের মধ্যে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন মফিজুল ইসলাম, সালেহ আহমদ, মোক্তার হোসেন ডাক্তার আবুল হোসেন, মহিউদ্দিন, আলম, প্রমুখ।