হঠাৎ করেই ছুটিতে গেলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ। গত ১১ মে সকালে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। ওইদিনই এক চিঠিতে তার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায় ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের মুখপাত্র ফাসিউল্লাহ সমকালকে জানায়, সৈয়দ আহমদ মারুফ দাপ্তরিক প্রয়োজনে পাকিস্তান গিয়েছেন।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে জানায়, সৈয়দ আহমদ মারুফের পাকিস্তান যাওয়ার চিঠিতে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঢাকা ছাড়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি কবে ফেরত আসবেন তা চিঠিতে জানানো হয়নি। মৌখিকভাবে জানতে চাইলে মিশন থেকে দুই সপ্তাহের কথা বলা হয়েছে।
সাধারণত একজন রাষ্ট্রদূত কোনো দেশে দায়িত্ব পালনের সময় ছুটিতে গেলে স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। রাষ্ট্রদূত কতদিন ছুটিতে থাকবেন এবং তার অনুপস্থিতিতে কে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করবেন; সেটিও আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হয়।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সৈয়দ আহমদ মারুফ ১১ই মে থেকে ছুটিতে থাকবেন। তিনি বাংলাদেশের বাইরে থাকার সময়টাতে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের উপ-হাইকমিশনার মুহাম্মদ আসিফ।
উল্লেখ্য, সৈয়দ আহমদ মারুফ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নাই: সালাহউদ্দিন আহমদ
স্বৈরাচারের উৎপত্তি বন্ধ করতে হলে দেশে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যদি সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে সেখানেই কিন্তু স্বৈরাচারের উৎপত্তিটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান কি তা তুলে ধরতে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে, বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে এবং আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে এবং সেখানেই থাকবে একটা কমপ্লিট ব্যালেন্স অব পাওয়ার। এটাকে আমরা আইনের ভাষায় বলি একটা ‘সেপারেশন অব পাওয়ার থিউরি’। তাহলে কোনো অর্গান অন্য কোনো অর্গানের ওপরে ওভার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, একটা আরেকটা ব্যালেন্সিং পাওয়ার হিসেবে পাহারাদার হিসেবে কাজ করবে।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ। আলোচনা চলছে। তার চাইতে বেশি হয়তো খানা-পিনা চলছে। সময় অনেক লাগছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা একটা জায়গায় ঐক্যতে আসতে পারব। ঐক্যতে আসার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে কী কী বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তা পুরো জাতি দেখছে। আমরা বলেছি, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে বসতে পারবেন না। এখানেই স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়া হলো, এখানে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতন্ত্র রক্ষাকবজ হিসেবে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো হবে। তার জন্য বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা (বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) যদি আমরা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে পারি তাহলে এটা গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কোনো বিভাগের অধিকার খর্ব নয়
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা ৭০ অনুচ্ছেদের মধ্যে সংস্কার এনেছি। সবাই ঐক্যমত্য হয়েছে। এখন আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছি যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের সদস্যদের মধ্যে গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে এমপিরা ভোট দেবেন। সেটা আরেকটা বিপ্লব হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ আমরা ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করলাম। সেটা কী আমাদের বড় ধরনের অর্জন নয়? এখন আমরা যদি প্রতিক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে সীমাবদ্ধ করি আইনিভাবে-সাংবিধানিকভাবে তাহলে কিন্তু নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হবে। যদি যে যার জায়গায় নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইনসভা তার তার সীমাবদ্ধের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য থাকে সেই ব্যবস্থাটা আমরা গ্রহণ করি। তাহলে প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের সংস্কার হবে। আমরা সেই সংস্কার চাই যে, সংস্কারের মধ্যে কোনো বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হবে না।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা সেই সংস্কার চাই, যেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মিত হবে, সেই সংস্কার আমরা চাই যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার হবে, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার হবে এবং যার ফলশ্রুতিতে আমরা জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারব। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সেই সমাজব্যবস্থা আমরা কামনা করি।
চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স আনতে হবে
সালাহ উদ্দিন বলেন, এখন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের প্রচেষ্টার মধ্যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, নির্বাহী বিভাগকে যত বেশি নিয়ন্ত্রিত করা যায়। নির্বাহী বিভাগ থেকে অতীতে একজন স্বৈরাচার হয়েছিল বলে নির্বাহী বিভাগকে আমরা বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না। একজন সংসদীয় পদ্ধতিতে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেজন্য আমরা আইনসভাকে বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না। আমাদের চেষ্টা করতে হবে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং একটা হারমোনিয়াস কোঅপারেশন, একটা মধুর সম্পর্ক, একটা পাহারাদার সৃষ্টি করা, সেফ গার্ড সৃষ্টি করার জন্য সকল অর্গানগুলোকে সেইভাবে শক্তিশালী করা। শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে কিন্তু রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না। নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে, বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে এবং আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে।