নানকের স্ত্রী-কন্যাসহ ১২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
Published: 14th, May 2025 GMT
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, তার স্ত্রী সৈয়দা আরজুমান বানু নার্গিস, মেয়ে এস. আমরীন রাখীসহ ১২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৪ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক চার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, তার ছেলে ও ব্যাংকটির পরিচালক কাজী খুররম আহমদ, মশিউর সিকিউরিটিজ সিটি সেন্টারের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, পরিচালক মোগল জান রহমান ও জিয়াউল হাসান চিশতী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার আবুল কাসেম কাসু, তার স্ত্রী আসমা কাসেম, মেয়ে উম্মে কুলসুম ও ছেলে আশরাফ ফজল অনিক।
আরো পড়ুন:
স্বামীসহ সাবেক এমপি রুবিনার বিরুদ্ধে মামলা
শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটির দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক
নানক পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান।
আবেদনে বলা হয়, জাহাঙ্গীর কবির নানক একং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাত করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।
ঢাকা/এম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা, মরদেহে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন
গাজীপুরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে ওই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তির গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান।
নিহত আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভিডিও করার সময় চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ থেকে শনাক্ত করে এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত শনিবার গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। এ বিষয়ে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এন এম আল মামুন বলেন, নিহত তুহিনের গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপে সৃষ্ট গুরুতর ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আঘাতগুলো আকারে ছোট-বড় হলেও প্রতিটিই সমান, গুরুতর ও গভীর ছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়ে গেছি। আসামিদের রিমান্ড শেষে আদালতে আজ সোমবার তোলা হবে। তাঁদের সবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
এর আগে ওই হত্যাকাণ্ডে ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে আসার পর আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডসহ সারা দেশে সাংবাদিক হত্যা, গুম, খুন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবিতে টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ দুপুরে সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটি ও গাজীপুর জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক অধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান সুমন চৌধুরী, গাজীপুর জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এম কাজল খান, সাংবাদিক রাজু আহম্মেদ, আবু সালেহ, পলাশ সরকার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিক তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ফয়েজুর রহমানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হয়রানির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
আরও পড়ুনসিসিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত, স্বামী-স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৪০৮ আগস্ট ২০২৫সাংবাদিক হত্যাকান্ডে পুলিশের অবহেলা রয়েছে
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে সরকারের ব্যর্থতা, পুলিশ প্রশাসনের অবহেলা ও শক্তিশালী গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আজ বেলা ১১টায় গাজীপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলীয় আতাউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও সরকার তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে। শুধু ভিডিও ধারণ করার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেনি; এর পেছনে আরও বড় কোনো ঘটনা লুকিয়ে আছে। আমরা জানতে পেরেছি, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া কেউ গাজীপুরের বাসিন্দা নয়, তাহলে এই খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা কারা ছিল? তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে।’
আতাউর রহমান আরও বলেন, গাজীপুরে কারা এই সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করছেন, যাঁরা হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। গাজীপুরে প্রতিনিয়ত খুন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসীরা এখানে আশ্রয় নিচ্ছেন, অথচ তাঁদের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক হত্যা মামলার দ্রুত তদন্ত, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া সতর্ক করে বলা হয়, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনগণের জানার অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন গাজীপুর মহানগরের সভাপতি ফয়জ উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন মহানগর শাখার সহসভাপতি হাবিবুর রহমান মিয়াজী, এম এ হানিফ সরকার, অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম, মুফতি হোসাইন আহমদ প্রমুখ।
আরও পড়ুনশুক্রবারই মায়ের কাছে এলেন, তবে কফিনবন্দী হয়ে০৮ আগস্ট ২০২৫