প্রায় তিন হাজার ইয়াবাসহ হোছন আহমদ (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
বিমানবন্দর এপিবিএনের কর্মকর্তারা বলেন, হোছন আহমদ একজন মাদক কারবারি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি ও বহনের সঙ্গে যুক্ত। গত বুধবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাঁকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়। তিনি উড়োজাহাজের যাত্রী সেজে পেটের ভেতর ইয়াবা লুকিয়ে তা পরিবহন করছিলেন। আজ শুক্রবার তাঁর বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে বিমানবন্দর এপিবিএনের কর্মকর্তারা বলেন, গত বুধবার বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসেন হোছন আহমদ। তিনি ইয়াবা পরিবহন করছেন—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা ভবনের উত্তর পাশ থেকে আটক করা হয়। বিমানবন্দর এপিবিএন কার্যালয়ে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হোছন আহমদ স্বীকার করেন, তাঁর পাকস্থলীতে ইয়াবা লুকানো আছে। বিমানবন্দরে কর্তব্যরত চিকিৎসক এক্স-রে করে হোছন আহমদের পেটে ডিম্বাকৃতির ৩০টি বস্তু দেখতে পান।
বিমানবন্দর এপিবিএনের কর্মকর্তারা বলেন, পরবর্তী সময়ে হোছন আহমদকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর পেট থেকে টেপ মোড়ানো অবস্থায় ৩০ পোঁটলা বের করা হয়। এগুলো খুলে মোট ২ হাজার ৮২০টি ইয়াবা পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি অভিযানে ১৬ হাজারের বেশি ইয়াবাসহ পাঁচজন মাদক কারবারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান বিমানবন্দর এপিবিএনের কর্মকর্তারা।
বিমানবন্দর এবিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিতা রানী সূত্রধর বলেন, বিমানবন্দর ব্যবহার করে মাদক পরিবহনসহ সব ধরনের অপরাধ রোধে তাঁরা সচেষ্ট আছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারের সাবেক ডিসি ও জেলা জজসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ
জালিয়াতির একটি মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিন; সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মাতারবাড়ীতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলা থেকে ডিসির নাম বাদ দিতে এ জালিয়াতি হয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে আসে। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান এই মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন।
দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এর আগে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে অভিযোগ গঠন থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। আগামী ৩ আগস্ট থেকে মামলার সাক্ষ্য শুরু হবে।
কাজী ছানোয়ার আহমদ আরও বলেন, কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন ২০১৭ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যান। পরে তিনি জামিনে বের হন। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। অন্য তিন আসামি হলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ। আজ শুনানির সময় আদালতের কাঠগড়ায় পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী এই দুর্নীতির ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন দুদককে। তবে মামলার পরপরই তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো কাগজপত্র থেকে ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে তা পাঠান। বিষয়টি জানাজানির পর বাদী কায়সারুল একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত শেষে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক রিয়াজউদ্দিন গত বছরের ১ জুলাই পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব নথিপত্র আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। পরদিন (২০ নভেম্বর) সকালে আদালতের কর্মচারী সৈয়দ আকবর নথিপত্র কক্সবাজার ডাকঘরে জমা দেওয়ার জন্য রওনা দিলে তাঁকে আবার আদালতে ফিরিয়ে এনে খামটি স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজের কাছে পাঠানো হয়। পরে নানা কৌশলে আবেদন থেকে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়া হয়।
তদন্তে আরও উঠে আসে, ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্ট্রারে ২৮ জন আসামির নাম থাকলেও পরে ৩টি পৃষ্ঠা পাল্টে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমের নাম বসানো হয় এবং বাদীর স্বাক্ষর জাল করে ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জনকে আসামি দেখিয়ে দুদকে নথি পাঠানো হয়। এই জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চিংড়িঘের বাবদ ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ওই অর্থের মধ্যে মনগড়া ২৫টি ঘের দেখিয়ে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি তুলে আত্মসাৎ করা হয়। আরও বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করা হয় টাকা। ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘শুরুতে লুট ২২ কোটি টাকা’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরদিন মামলাটি দায়ের হয়।