পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের ঠেলে পাঠানো ১০ বাংলাদেশি কারাগারে
Published: 18th, May 2025 GMT
পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ঠেলে পাঠানো (পুশইন) নারী, শিশুসহ ১১ বাংলাদেশির মধ্যে ১০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁদের সঙ্গে আসা ১০ বছর বয়সী একটি শিশুকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিভাবকের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল শনিবার রাতে গ্রেপ্তার ১০ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। পঞ্চগড়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ আকতার তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ সময় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পক্ষে কোনো জামিন আবেদন করা হয়নি বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে সন্ধ্যায় বিজিবির নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন ডানাকাটা বিওপির জেসিও নায়েব সুবেদার দিলীপ কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে বোদা থানায় এই ১১ জনের নামে অনুপ্রবেশের অভিযোগে পাসপোর্ট আইনে একটি মামলা করেন। পরে রাতে ১১ জনের মধ্যে ১০ জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিজিবির সহায়তায় আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বোদা উপজেলার কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন ও বড়শশী ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে ডানাকাটা ও মালকাডাঙ্গা বিওপির বিজিবির সদস্যরা নারী, শিশুসহ মোট ১১ জনকে আটক করেন। বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় গতকাল সকালে মালকাডাঙ্গা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকে ঠেলে পাঠানোর বিষয়টি বিএসএফ অস্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর রিয়াদ মোর্শেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্তে আটক হওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতেন বলে জানা গেছে। তাঁদের ভারতীয় পুলিশ আটক করে মুম্বাই থেকে এনে বিএসএফের কাছে তুলে দিয়েছে। পরে তাঁদের সীমান্ত আনা হয়েছে বলে আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। সীমান্তে তাঁদের ঠেলে পাঠানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় আটকের পর তাঁদের বোদা থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে মামলা করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বাড়ি সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, নড়াইল, যশোর, নোয়াখালী, নরসিংদী, খুলনা ও মুন্সিগঞ্জ জেলায়।
বোদা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ জনকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনাজপুর এলআই বিজিবির উপপরিদর্শক (এসআই) অনিল কুমার রায়ের মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১০ বছর বয়সী শিশুটিকে বিজিবি ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রকৃত অভিভাবকের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুনপঞ্চগড় সীমান্তে ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা ১১ বাংলাদেশি আটক১৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহ সীমান্তে বিজিবির টহল বেড়েছে, এলাকাবাসীও সতর্ক
দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সম্প্রতি মানুষজনকে ঠেলে পাঠানো শুরুর পর ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি কৃষকেরা ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় গরু চরাতেও যাচ্ছেন না।
গত বুধবার দিনভর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে সবার সতর্ক অবস্থান। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা শুরুর পর গুগল মানচিত্র থেকে বিএসএফের ক্যাম্পগুলো মুছে দেওয়া হয়েছে। তবে বিজিবির ক্যাম্পগুলো মানচিত্রে আছে। সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আগের লাল বাতির বদলে সাদা বাতি স্থাপন করছে বলে বিজিবির একটি সূত্র জানিয়েছে।
বুধবার দুপুরে হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া বিজিবি ক্যাম্পের ছয়জন সদস্যকে নীল পতাকা হাতে সীমান্ত এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। বিপরীতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তোরা জেলার গাছুয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প। গোবরাকুড়া বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার মো. আজিবুল হাসান বলেন, ‘আমাদের জনবল বৃদ্ধি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। বিএসএফ কোনো অপতৎপরতা চালালে তা প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত। আমাদের এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পুশ ইনের ঘটনা ঘটেনি।’
হালুয়াঘাটের গাজীরভিটা ইউনিয়নের বরাক গ্রামে বান্দরাকাটা বিজিবি ক্যাম্প। বিপরীতে ভারতের নামছাড়া বিএসএফ ক্যাম্প। সীমান্ত সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে বিএসএফ ও বিজিবির টহল দেখা যায়। এলাকায় দাঁড়িয়ে কথা হয় বরাক গ্রামের সাইফুল ইসলামের (৪০) সঙ্গে। বলেন, বিএসএফ সদস্যসংখ্যা ও টহল নজরদারি বাড়িয়েছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে আতঙ্কে থাকলেও এখন যুদ্ধ বন্ধ হওয়ায় আতঙ্ক কমেছে।
বরাক গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন (৩৮) বলেন, ‘আগে গরুকে খাওয়ানোর জন্য বর্ডারে গেলেও বিজিবি মাইকিং করে দিয়েছে আমরা যেন না যাই। তারপর থেকে সীমান্তে গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।’ একই গ্রামের গিয়াস উদ্দিন (৬০) বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি টহল বাড়িয়েছে, সব সময় লোক আছেই। চাইলেই আমাদের দেশে কেউ ঢুকতে পারবে না। আমরাও সতর্ক আছি।’
ধোবাউড়ার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গাছুয়াপাড়া গ্রামে মাধুপাড়া বিজিবি ক্যাম্প। সীমান্তের ওপারে ভারতের নেত্রী বিএসএফ ক্যাম্প। হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া সীমান্ত সড়ক থেকে ৫ মিনিট সামনে হাঁটলেই পাহাড়ের ওপর বিএসএফের ক্যাম্প দেখা যায়। পাহাড়ের নিচ দিয়ে ভারতীয় যানবাহন চলাচল করছে। সরু একটি খাল পেরোলেই ভারতের সড়ক। হাতে দা নিয়ে খাল পার হয়ে এ পারে আসেন রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ধোবাউড়ার গাছুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
আরও পড়ুনবড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো ৪৪ জনকে পুলিশে হস্তান্তর করল বিজিবি০৯ মে ২০২৫রফিকুল বলেন, ‘জঙ্গল পরিষ্কার করার জন্য হাতে দা রাখি। সীমান্ত এলাকায় আমাদের পরিস্থিতি শান্ত আছে। এলাকায় আমরা যারা আছি, তারাও সতর্ক রয়েছি। বিজিবি টহল বাড়িয়েছে এবং আমাদেরও সতর্ক থাকতে বলেছে। সীমান্তে গরু নিতে নিষেধ করেছে।’
সীমান্ত এলাকায় মিনিট পাঁচেক থাকতেই ৩১ বিজিবির অধীনে থাকা মাধুপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা দ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে বললেন। দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘সীমান্তের মানুষ খুব সতর্ক আছি। কোনো মানুষ এ দিক দিয়ে ভারতে প্রবেশ কিংবা ভারত থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’