সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান। এই দেশ সবার। এই দেশে ধর্ম ও বর্ণের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে চলছি, ভবিষ্যতেও চলব।”

শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর পলাশী মোড়ে শুভ জন্মাষ্ঠমীর মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জন্মাষ্টমীর উৎসব ও কেন্দ্রীয় মিছিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির।

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “এই দেশ সবার। সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিতে আমরা বসবাস করে যাচ্ছি।”

আরো পড়ুন:

সেনাপ্রধানের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, আইএসপিআরের সতর্ক বার্তা

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রসহ যুবদল কর্মী আটক

তিনি বলেন, “সবাই একসঙ্গে এই দেশে সুন্দরভাবে ও শান্তিতে বসবাস করব। এখানে কোনো জাতি-ধর্মে ভেদাভেদ থাকবে না। সবাই আমরা এ দেশের নাগরিক। সবার অধিকার এ দেশে আছে। সেভাবেই আমরা ভবিষ্যতে আমাদের সোনালী দিনগুলো দেখতে চাই।”

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “আজকের এই আনন্দঘন পরিবেশে শ্রীকৃষ্ণের হাজার হাজার ভক্ত এখানে উপস্থিত আছেন। এখানে বাদ্য বাজছে। এই আনন্দে আমাদের সঙ্গে নেওয়ার জন্য সাধুবাদ জানাই।”

বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সব সময় বজায় রাখব। এই দেশ সবার। অনুষ্ঠানে নৌ ও বিমান বাহিনীপ্রধানও আছেন। নবম পদাতিক ডিভিশন আছে। আমরা সবাই মিলে সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।”

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “সারা বাংলাদেশে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন আছে। সশস্ত্রবাহিনী আপনাদের সঙ্গে কাজ করে যাবে। আপনারা নিশ্চিন্তে দেশে বসবাস করবেন। ধর্মীয় সব পর্ব বা অনুষ্ঠান উদযাপন করবেন। আনন্দ উদযাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব।”

তিনি আরো বলেন, “আজকের এই জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের যে আদর্শ, সেই আদর্শ এখান থেকে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। এই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সুন্দরভাবে একসঙ্গে বাস করব। এই আনন্দ মিছিল ১৯ ও ২০ শতকে একসময় হতো। তারপর এটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।আবার শুরু হয়েছে। আশা করি এই উৎসব ও মিছিল সব সময় জারি থাকবে।সশস্ত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে যত ধরনের সাহায্য সহযোগিতা চান, সেটা আমরা দেব।”

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, “আসুন, পারস্পরিক সহনশীলতার মাধ্যমে দেশকে আরো শক্তিশালী করি। শ্রীকৃষ্ণ যেমন সমাজে ন্যায় ও আলোর সত্য প্রজ্জ্বলিত করেন।”

বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, “শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা শুধু অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসই জোগায় না, ন্যায়ের পথেও চলতে শেখায়।”

তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব। সবাই মিলে কাজ করলে বিশ্বের মানচিত্রে এই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।”

মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবের সভাপতিত্বে শোভাযাত্রা পূর্ব আলোচনা সভায় নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো.

মঈন খান বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভা শেষে প্রদীপ জ্বালিয়ে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করেন তিন বাহিনীর প্রধানসহ আগত অতিথিরা।

পরে শোভাযাত্রাটি পলাশী মোড়, জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, বঙ্গবাজার, নগর ভবন, গোলাপশাহ্ মাজার, গুলিস্থান মোড়, নবাবপুররোড, রায় সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হয়।

সূত্র: বাসস

ঢাকা/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই আনন দ আম দ র স এই দ শ স অন ষ ঠ ন জন ম ষ ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা

বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ বলকে স্থান–কালের বক্রতা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছিল। এর মাধ্যমে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে যায়। যখনই আপনি একটি কাপ ফেলে দেন বা নদীতে জোয়ার আসতে দেখেন, তখনই মহাকর্ষের প্রমাণ পাওয়া যায়। আবার আপনার ওজন মাটির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে অনুভব করার বিষয়টি মহাকর্ষের অভিজ্ঞতা বলা যায়। প্রাকৃতিক বিভিন্ন বলের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলেও মহাকর্ষ বলকে সবচেয়ে রহস্যময় বলা হয়। এই বল আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথে ধরে রাখে। বলা যায়, মহাবিশ্বের সব গ্যালাক্সির ভাগ্য নির্ধারণ করে এই বল।

প্রকৌশলীরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, কক্ষপথের অবস্থান মঙ্গলে মিশন পরিকল্পনার সময় মহাকর্ষ বলের ওপর নির্ভর করেন। মাটির নিচের পানির ভান্ডার বা হিমবাহের বরফ গলে যাওয়া শনাক্ত করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে মহাকর্ষ বলের তথ্য। অনেক আগে এই মহাকর্ষ বল সম্পর্কে মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। আইজ্যাক নিউটন বিজ্ঞানের অন্যতম গভীর এই বল সম্পর্কে বেশ বিস্তারিত ধারণা প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম প্রশ্ন করেন, কোন বলের কারণে গাছের আপেল মাটিতে পড়ে? কোন শক্তির জোরে চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে অবস্থান করছে?

বিজ্ঞানী নিউটন ও আপেলগাছ নিয়ে বেশ জনপ্রিয় গল্প প্রচলিত আছে। ১৬৬৬ সালের দিকে নিউটন লিংকনশায়ারে তাঁর পারিবারিক বাড়ির বাগানে অবস্থানের সময় স্বাভাবিক এক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। একটি আপেলকে গাছ থেকে পড়তে দেখেন তিনি। সেই ঘটনা নিউটনকে নতুন ভাবনার সুযোগ করে দেয়। তিনি ভাবতে থাকেন, একটি আপেল যদি মাটিতে পড়ে তাহলে চাঁদও কি পড়ে যাচ্ছে? সেই চিন্তা থেকেই মহাকর্ষ বলের সর্বজনীন সূত্র আবিষ্কার করেন নিউটন। তাঁর ভাষ্যে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু অন্য প্রতিটি বস্তুকে এমন একটি বল দিয়ে আকর্ষণ করে যা তাদের ভরের সমানুপাতিক ও তাদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। বিজ্ঞানী নিউটন পৃথিবী ও মহাবিশ্বের গতি ব্যাখ্যা করেন এই সূত্রের মাধ্যমে।

আরও পড়ুনপৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় বলে প্রমাণিত হয় যে ছবির কারণে০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৯১৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা দেন। তিনি যুক্তি দেন যে মহাকর্ষ বস্তুকে একসঙ্গে টেনে আনা কোনো বল নয়, বরং ভর ও শক্তি দ্বারা স্থান–কালের নিজস্ব বাঁক বা বক্রতা। বিভিন্ন গ্রহ চলছে মহাজাগতিক কাঠামোর বক্রতা অনুসরণ করে। এটি বোঝার একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে স্থান–কালকে একটি টান টান কাপড়ের মতো কল্পনা করা। এর ওপর একটি ভারী টেনিস বল রাখলে কাপড়টি কিছুটা দেবে যায়। তখন কাছাকাছি থাকা সব ছোট বস্তুকে সেই দেবে যাওয়া অবস্থানের দিকে নেমে যাবে। ঠিক একইভাবে তারা ও গ্রহের মতো বিশাল বস্তুকে স্থান–কাল বাঁকিয়ে দেয়। এতে চারপাশের সবকিছু চলতে থাকে।

রহস্যময় মহাকর্ষ বল বেশ দুর্বলতম বল। এই বল সব পদার্থের ওপর, সব রকম দূরত্বজুড়ে কাজ করে। কখনোই বন্ধ হয় না। মহাজগৎকে শাসন করলেও মহাকর্ষ বল প্রকৃতির অন্যান্য বলের তুলনায় আশ্চর্যজনকভাবে দুর্বল। একটি প্রোটন ও একটি ইলেকট্রনের মধ্যেকার তড়িৎচৌম্বকীয় আকর্ষণ মহাকর্ষ বলের চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৩৬ গুণ শক্তিশালী। এ কারণেই পরমাণু, অণু ও তাদের রসায়ন তড়িৎচৌম্বকত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

আরও পড়ুনমহাবিশ্ব দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা১৩ জুলাই ২০২৫

নিউটনের সেই আপেলবাগান থেকে পাওয়া প্রশ্ন ও আইনস্টাইনের বক্র স্থান–কাল ধারণার মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা বদলে গেছে। মহাকর্ষ বল দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে চরম মহাজাগতিক ঘটনা পর্যন্ত সবকিছু শাসন করে। এই বল গ্রহকে আকার দেয়। ধূমকেতুকে পরিচালনা করে। বিভিন্ন গ্যালাক্সিকে একসঙ্গে বেঁধে রাখে। মহাজগতের সবচেয়ে ঘন কোণে এই বল নিউট্রন তারা ও ব্ল্যাকহোলের মতো বহিরাগত বস্তু তৈরি করে। আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনেক আগেই এসব বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে একসঙ্গে পাঁচ সন্তান প্রসব প্রসূতির
  • একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিলেন রেশমা
  • বিশ্বব্যবস্থা: যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে বাকি পশ্চিমাদের এগিয়ে আসতে হবে
  • একটি আপেল যেভাবে বদলে দিয়েছে মহাবিশ্বের ধারণা