রাজশাহী অঞ্চলের আড়তদাররা প্রায় ৫২ কেজিতে মণ ধরে চাষিদের কাছ থেকে আম কেনেন। একে বলা হয় ঢলতা। এ প্রথায় ক্ষতিগ্রস্ত হন চাষিরা। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ঢলতা বন্ধে ৫ জুন সভা করে নির্দেশনা জারি করেন। বাজার তদারকি করা হয়। কয়েক দিন বন্ধও ছিল। ঈদের ছুটি শেষে সেটা আবার শুরু হয়েছে। রাজশাহীর আম বাজারে গিয়ে অন্তত ১০ চাষির সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। তারা সবাই বলেছেন, ঢলতা বন্ধ হয়নি।

রাজশাহী অঞ্চলের সর্ববৃহৎ আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এবং নওগাঁর সাপাহারেও বড় হাট বসে। প্রতিদিন শত শত চাষি এসব হাটে আম বেচেন। প্রায় এক দশক আগে এসব হাটে ঢলতা ছিল না। তখন ৪০ কেজিতে মণ ধরে আম কেনাবেচা হতো। তবে গত কয়েক বছরে এক কেজি, দুই কেজি করে বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি মণে প্রায় ১২ কেজি আম বেশি নিচ্ছেন আড়তদাররা।

সোমবার দুপুরে বানেশ্বরহাটে গিয়ে দেখা যায়, আড়তদাররা মণ হিসাবে দর করলেও ওজন দেওয়ার সময় ৫০ কেজিতে মণের মাপ নিচ্ছেন। শুধু তাই না, আমগুলো ওজন হয় প্লাস্টিক ক্যারেটে রেখে। এর ওজন দেড় কেজি হলেও আরও তিন থেকে চার কেজি আম বেশি নেওয়া হয়। চাষিরা হাসিমুখে আম নিয়ে আড়তে ঢুকলেও মাপের কারণে মন খারাপ করে বের হচ্ছেন।

চাষিরা অভিযোগ করেন, আড়তদাররা ৫০ কেজিতে মণের মাপ ধরে আম কেনেন। আম বহনের প্লাস্টিকের ঝুড়ির ওজন দেড় কেজি। এ জন্য তারা আরও তিন-চার কেজি বেশি নেন। এতে সব মিলিয়ে তারা প্রায় ৫২ কেজিতে মণ ধরছে। একদিকে এবার আমের দাম কম, অন্যদিকে ওজনে ঠকানোয় চাষিদের লোকসান বাড়ছে।

চাষিরা জানান, ৫ জুন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার আম চাষি, আড়তদার ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে ৪০ কেজিতে মণ বিক্রির নির্দেশনা জারি করেন। বিষয়টি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী মনিটর করছিল। এতে বিরক্ত হয়ে আড়তদাররা কৌশলে আম কেনা বন্ধ রাখেন। এতে ঈদের ছুটির পর আমের বাজারে ধস নামে। ঈদের ছুটিতে আমের বাজার ধসের পেছনে এটাও কারণ।

আম চাষি ও ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান, এবার বাজার খুবই খারাপ। গত বছরের তুলনায় অর্ধেক। এর পেছনে আড়তদাররা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এবার আম বেচে কীটনাশক, সার ও শ্রমিকের দাম উঠছে না। অথচ আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ৫২ কেজিতে মণ নিচ্ছেন। তারা বলছেন, ৫০ কেজিতে মণ দিতে হবে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাই দেন। কিন্তু আড়তদাররা আম বহনের ঝুড়ির দেড় কেজি ওজন হলেও এ জন্য আরও তিন-চার কেজি পর্যন্ত বেশি নেন। এতে প্রায় ৫২ কেজিতে মণ পড়ছে।  এতে চাষিদের চরম লোকসান হচ্ছে। চাষিরা ক্ষতিগ্রত হচ্ছেন।’

আম চাষি ওমর ফারুক বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর সেনাবাহিনীর কঠোর মনিটরিং থাকায় আড়তদাররা আম কেনা বন্ধ করেন। এতে আমের দাম অর্ধেকে নেমে আসে। এ সময় পাইকারও কম ছিল। ফলে বাজারের যে ধস নেমেছিল, তা আর ঠিক হচ্ছে না।’
আড়তদাররা বলছেন, চাষিদের অনেক আম আকারে ছোট থাকে, ফাটা থাকে। অনেক আম পচে যায়। এ কারণে লোকসান ঠেকাতে কিছু আম বেশি নেন। এতে চাষিদের আপত্তি থাকে না।

আড়তদার রুবেল হোসেন বলেন, আম কাঁচামাল। অনেক আম ছোট, ফাটা, পচা থাকে। পাকলে কমে যায়। ৪০ কেজিতে মণ কিনলে আম ঢাকায় পৌঁছতে পৌঁছতে ৩৬ কেজিতে নেমে আসবে। এই লোকসান ঠেকাতে ঢলতা নেওয়া হয়। সেটা চার-পাঁচ কেজির বেশি নয়।

আরেক আড়তদার সাহাবুল ইসলাম বলেন, অনেক আম পচে যায়। ছোট আম বিক্রি হয় না। এসব কারণে ঢলতা দেওয়া হয়। শুধু আম না, সব কাঁচামালে ঢলতা চলে। এই ঢলতা বন্ধ করলে আড়তদারদের কেনাবেচা বন্ধ হয়ে যাবে।

মাঠ পর্যায়ে ঢলতা চালু থাকলেও প্রশাসন দাবি করছে, এই প্রথা বাতিল হয়েছে। এখন কেজি দরে আম বিক্রি হচ্ছে। ঢলনে চাষিদের আম বেচতে বাধ্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, ঢলতা প্রথা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর কেউ অভিযোগ করছে না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম চ প ইনব বগঞ জ ৫২ ক জ ত ঈদ র ছ ট আড়তদ র আম ক ন

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়ম ভেঙে বিদেশ সফর, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ৫ নির্দেশনা

সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ব্যক্তিগতভাবে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর ফলে শুধু সরকারি বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে না, পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশ সফর নিয়ন্ত্রণে ৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, যা বিধি পরিপন্থি। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমন্ত্রণপত্রও সরাসরি প্রেরণ করা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের কাছে, যা মন্ত্রণালয় বা দপ্তর প্রধানের মাধ্যমে হওয়া উচিত ছিল। একই সঙ্গে একাধিক কর্মকর্তা একই সময়ে বিদেশ সফরে যাওয়ার ঘটনাও দেখা গেছে। এসব অনিয়ম বন্ধে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ৫টি নির্দেশনা জারি করেছে।

আরো পড়ুন:

রাষ্ট্রদূত হলেন দুই সেনা কর্মকর্তা

জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৫টি নির্দেশনা
১. বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নয়: কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সরাসরি পত্র যোগাযোগ করতে পারবেন না। যোগাযোগ করতে হবে মন্ত্রণালয়ের সচিব অথবা দপ্তর/সংস্থা প্রধানের মাধ্যমে।
২. আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহে বিরত থাকার আহ্বান: ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. বিদেশ ভ্রমণের পূর্বে অনুমতি: সব কর্মকর্তাকে বিদেশ ভ্রমণের আগে নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়কে যথাযথভাবে অবহিত করতে হবে।
৪. পূর্বানুমতি গ্রহণ: বিদেশি সংস্থার সঙ্গে আমন্ত্রণ সংক্রান্ত কোনো যোগাযোগের পূর্বে সচিব (মন্ত্রণালয়) অথবা দপ্তর/সংস্থা প্রধানের অনুমতি নিতে হবে।
৫. জনস্বার্থ যাচাই: বিদেশি সংস্থার আমন্ত্রণে অংশগ্রহণকারী অনুষ্ঠান বা সেমিনার পেশাগত উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কি না, তা যাচাই করে অনুমতি দিতে হবে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে সরকারি নিয়মনীতি বজায় থাকে এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলতে পারে।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ