কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমাই পাহাড়ে প্রাচীন শিব চণ্ডী মন্দিরের ফটকের সামনের বিরোধপূর্ণ একটি জমির দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। উত্তেজনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

প্রায় ১ হাজার ৪০০ বছরের পুরোনো মন্দিরটি ‘চণ্ডীমূড়া মন্দির’ নামে পরিচিত। দ্বন্দ্বটি মূলত মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবদুল আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির। বিএস খতিয়ানে ওই সম্পত্তি মন্দিরের নামে। কিন্তু একই সম্পত্তিকে নিজের পৈতৃক ভূমি দাবি করে গতকাল শনিবার সেখানে টিনের ঘর নির্মাণ করেন আবদুল আলী। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বড় ধর্মপুর গ্রামের আইউব আলীর ছেলে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চণ্ডীমূড়া মন্দিরের প্রবেশপথ লাগোয়া পশ্চিম পাশের ছয় শতক জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। সম্প্রতি সেখানে বিশ্রামাগার নির্মাণ করে মন্দির কর্তৃপক্ষ। এরপর গতকাল সকাল থেকে আবদুল আলী সেখানে টিন দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। খবর পেয়ে মন্দিরের সেবায়েত চন্দনা রাহুত বাধা দিতে গেলে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে দখলের বিষয়টি মন্দির কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে জানালে দুপুরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ইউএনও রুবাইয়া খানম এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। এ সময় ইউএনও দুই পক্ষকে নির্মাণ করা স্থাপনা সরিয়ে নিতে মৌখিক নির্দেশ দেন।

স্থাপনা নির্মাণকারী আবদুল আলী বলেন, ‘ক্রয়সূত্রে আমার বাবা এই জমির মালিক। কিন্তু বিএস খতিয়ানে জমিটি মন্দিরের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। আদালতে আমরা রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেছি। আমরা জমিটিতে একটি টিনের ঘর করেছি। এতেই উত্তেজনা দেখা দেয় তাঁদের সঙ্গে। পরে ইউএনও স্যার বলেছেন ঘরটি সরিয়ে নিতে। আমরা নির্দেশনা মেনে নিয়েছি।’

শিব চণ্ডী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি দীপক সাহা বলেন, ‘মন্দিরের প্রবেশ ফটকের পশ্চিম পাশের ছয় শতক জমি মন্দিরের নামে বিএস খতিয়ান রেকর্ড হয়েছে। সম্প্রতি জমিটিতে মন্দিরে আগত পুণ্যার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু আজ শনিবার সকালে হঠাৎ তাঁরা জমিটি দখল করে টিনের ঘর নির্মাণ করেন। পরে আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে ইউএনও রুবাইয়া খানম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানতে পেরে দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি। দুই পক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আদালতের যেই নির্দেশনা, সেটি বহাল থাকবে। এখানে কোনো পক্ষই এখন স্থাপনা রাখতে পারবে না। পরে স্থানীয় পক্ষটি পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়েছে তারা রোববার স্থাপনা সরিয়ে নেবে এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ সোমবার তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেবে। দুই পক্ষই নির্দেশনা মেনে নিয়েছে, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।’

কুমিল্লা নগর প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে বরুড়া সড়কের সংযোগস্থলে লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় চণ্ডীমুড়া মন্দিরটি অবস্থিত। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। এ মন্দিরের প্রবেশপথে আছে ১৪২টি সিঁড়ি। সিঁড়ির শেষ মাথায় মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথ।

জনশ্রুতি আছে, সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধ রাজা দেব খড়গ তাঁর স্ত্রী প্রতিভা দেবীর অনুরোধে তাঁর স্মৃতিকে অমর করে রাখতে এখানে চণ্ডী মন্দির ও এর পাশে আরও একটি শিবমন্দির নির্মাণ করেন। এর মধ্যে চণ্ডী মন্দিরে সরস্বতী ও শিবমন্দিরে শিবকে স্থাপন করে দুজনের আলাদা আলাদা পূজা-অর্চনা করা হতো। বিভিন্ন উৎসবে এ মন্দির প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া মন্দিরের পাশেই আছে বেশ কয়েকটি ভবন, যেগুলো ধর্মীয় আচার ও আলোচনার কাজে ব্যবহার করা হয়। এ মন্দিরে পূজা–অর্চনার পাশাপাশি অনেক পর্যটক ভিড় করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ন র ম ণ কর মন দ র র প আবদ ল আল প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে ১১ বসতঘর ভেসে গেছে

টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ১১ বসতভিটা পানির স্রোতে ভেসে গেছে। ওই পরিবারগুলো স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনির জানান, বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে মহারশি নদীর ব্রিজ সংলগ্ন খৈলকুড়া এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। একইসঙ্গে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারে পানি প্রবেশ করে। স্রোতে অন্তত ১১টি বসতভিটা ভেসে গেছে। 

ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি অফিস জানিয়েছে, বাঁধ ভেঙে আকস্মিক বন্যায় ৫০টিরও বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ৩৪৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১০ হেক্টর সবজি ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে।

ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির সভাপতি মোখলেছুর রহমান খান বলেন, ‘‘হঠাৎ করে নেমে আসা বন্যায় অনেক দোকানে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।’’ এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে মহারশি নদীর পাশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, বাজার এলাকায় টেকসই ড্রেন নির্মাণের জোর দাবি জানান তিনি।

ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনির বলেন, ‘‘২০২২ সালের ঢলের পানিতে ব্রিজপাড়ের এই বাঁধ ভেঙে গেলেও সংস্কার হয়নি। তাই এ বছর একই জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা নেয়নি।’’ 

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখিনুজ্জামান বলেন, ‘‘মহারশি নদীর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘‘বৃষ্টি না থাকায় নদীর পানি কমে এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’’

এদিকে, ঝিনাইগাতী উপজেলায় মহারশি নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে আসা গাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ইসমাইল হোসেনের (১৭) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল। 
 

ঢাকা/তারিকুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাগমারায় মাটিতে পড়ে ছিল অসুস্থ ইগল, উদ্ধার করলেন কৃষক
  • হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভাঙ্গার আন্দোলন স্থগিত
  • পাথর লুট ঠেকাতে ধলাই সেতুর নিচে নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
  • মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে ১১ বসতঘর ভেসে গেছে