আগামী জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম বিশেষ সুবিধা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ বিশেষ ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ রোববার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদ ও অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বিশেষ ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যাদের নিট পেনশন ১৭ হাজার ৩৮৮ টাকা বা তার বেশি তারা পেনশনের ১০ শতাংশ বিশেষ ভাতা হিসেবে পাবেন। আর যাদের নিট পেনশন এ পরিমাণের কম তারা পাবেন ১৫ শতাংশ বিশেষ ভাতা।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশেষ ভাতা বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আলাদা আদেশ জারি করবে সরকার।

এর আগে গত ৩ জুন সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বেতন গ্রেড–১ থেকে গ্রেড–৯ পর্যন্ত চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ওপর ১০ শতাংশ ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবেন। আর গ্রেড–১০ থেকে গ্রেড–২০ পর্যন্ত ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবেন ১৫ শতাংশ হারে। কর্মরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ ‘বিশেষ সুবিধা’র ন্যূনতম পরিমাণ একহাজার টাকা, আর পেনশনভোগীরা ন্যূনতম ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। 

এর আগে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র জন য ন য নতম ৫০০ ট ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টা পরিষদে আজ পাস হতে পারে বাজেট

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আজ (রোববার) প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের নির্ধারিত ৭ লাখ ৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হতে পারে। আর সভায় এই বাজেট পাস বা অনুমোদন করা হতে পারে। 

আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছরের যাত্রা শুরু হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে সভাটি সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এর আগে অর্থ উপদেষ্টা গত ২ জুন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটটি জাতির সামনে উপস্থাপন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থ উপদেষ্টার ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের পক্ষ থেকে নতুন অর্থবছরে বাজেটটি উপদেষ্টা পরিষদে পাস করার জন্য উত্থাপন করা হবে। এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আওতাধীন কয়েকটি করের হার পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। এতে আলোচিত কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুবিধা বহাল রাখা হবে কীনা সে বিষয়ে উপদেষ্টার পরিষদের মতামত নেওয়া হতে পারে।

গত ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা যে বাজেট প্রস্তাবটি ঘোষণা করেন তাতে আবাসনখাতে ৫ গুণ বেশি কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ব্যাপক সমালোচনা মুখে এই সুবিধা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আবাসন মালিকদের সংগঠন রিহ্যাব অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআর চেয়ারম্যান সাথে দেখা করে দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থার স্বার্থে বিদ্যমান সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছিল।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে এখন এ বিষয়টি নিষ্পত্তি উপদেষ্টার পরিষদের সভায় হতে পারে বলে সূত্র জানায়।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৯ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সুযোগ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২ সেপ্টেম্বর এনবিআর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে সে সময় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্লোর স্পেস ও ভ’মি আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত থাকলে তা নির্ধারিত হারে আয়কর দিয়ে বৈধ করার বিধানটি বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়িয়ে কিছু কাটছাঁট করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।  এক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে তিন থেকে পাঁচ গুণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতেই দেখায় দেয় বিপত্তি অর্থনীতিবীদসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে সরকারের এই প্রস্তাবের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়।

অর্থ বিলে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে নির্ধারিত এলাকা ভেদে ফ্ল্যাট বা ভবন কেনা এবং নির্মাণে কালোটাকা সাদা করতে হলে প্রতি বর্গফুটে নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হবে। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট বা ভবনের ক্ষেত্রে কর হবে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা। একই এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের কম আয়তনের ক্ষেত্রে কর নির্ধারিত হয়েছে ১৮০০ টাকা।

ধানমন্ডি, উত্তরা, মহাখালী, লালমাটিয়া, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কাওরান বাজারসহ অন্যান্য অভিজাত এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট বা ভবনের ক্ষেত্রে কর হবে ১৮০০ টাকা এবং অনধিক আয়তনের ক্ষেত্রে ১৫০০ টাকা।

অপরদিকে, ঢাকা ও চট্রগ্রাম মহানগরীর বাইরে সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে বড় ফ্ল্যাটের (১৫০০ বর্গফুটের বেশি) ক্ষেত্রে কর প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটে (১৫০০ বর্গফুটের কম) কর ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা সদরের পৌর এলাকায় বড় ফ্ল্যাটের জন্য কর প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটের জন্য ২৫০ টাকা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বড় ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে কর ১৫০ টাকা এবং ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা।

ভবন নির্মাণেও সুযোগ

শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা নয়, ভবন নির্মাণেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। এলাকা ভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত কর দিয়ে এই সুবিধা নেওয়া যাবে।

শর্তসাপেক্ষে বৈধতা

তবে দুটি শর্ত উল্লেখযোগ্য: ১. অর্থটি যদি অপরাধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়, তবে তা বৈধ করা যাবে না। ২. অর্থের উৎস বৈধ না হলে, আইনের এই ধারায় সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

এদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে (অনুদানসহ- দুই লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৩ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে বড় একটি অঙ্ক পূরণ করা হবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকবহিভর্’ত ঋণ আসবে ২১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ সহায়তা ধরা হয়েছে নিট ৯৬ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে করসমূহ থেকে আসবে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় আদায়ের টার্গেট ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর-বহিভর্’ত ১৯ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথ প্রশস্ত হবে এবারের বাজেট বাস্তবায়নে। পাশাপাশি, রাজস্ব আয় ও সরকারি ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটা যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নও এ বাজেটের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঢাকা/হাসনাত/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা বাড়ল
  • সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন বাড়ছে ১৫০০ টাকা
  • বিশেষ সুবিধায় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়বে কমপক্ষে ১৫০০ টাকা, অবসরভোগীদের ৭৫০ টাকা
  • সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল ১০ হাজার কোটি টাকা
  • কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
  • বাজেট অনুমোদনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক চলছে
  • উপদেষ্টা পরিষদে আজ পাস হতে পারে বাজেট
  • তেমন পরিবর্তন ছাড়াই পাস হচ্ছে বাজেট
  • রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে আয় বাড়াতে চায় সরকার