মরা খালে চার কোটি টাকার সেতু, সুফল নিয়ে প্রশ্ন
Published: 23rd, June 2025 GMT
কুমিল্লার তিতাস-বাতাকান্দি-মাছিমপুর-রায়পুর সড়কের দক্ষিণ আকালিয়ায় মরা খালের ওপর পৌনে চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ চলছে। তবে খালটির প্রকৃত অবস্থা ও সেতুর নকশা নিয়ে অসংগতির প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
নির্মাণাধীন সেতুর দুই পাশে একাধিক ব্যক্তি খাল ভরাট করে বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ফলে খাল দিয়ে আর স্বাভাবিক পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল পুনরুদ্ধার না করেই সেতু নির্মাণ শুরু করায় প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। আরও উদ্বেগের বিষয়, নির্মাণাধীন সেতুটি তুলনামূলক নিচু। ভবিষ্যতে খাল পুনরুদ্ধার হলেও নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি অর্থ লুটপাটের জন্যই এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। পানি চলাচল না থাকায় সেখানে সেতুর প্রয়োজনীতাই দেখছেন না এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিতাস উপজেলার তিতাস-বাতাকান্দি-মাছিমপুর-রায়পুর সড়কের দক্ষিণ আকালিয়ায় ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের সেতুটির প্রাক্কলিত ব্যয় তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি পেয়েছেন ঠিকাদার আর আর কনস্ট্রাকশন। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের ২২ মার্চ সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার কথা। তবে সময় বাড়িয়ে চলতি মাসের ৩০ তারিখ করা হয়। এক বছর সময় বাড়ালেও সঠিক সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়। এখানে সেতু নির্মাণের আগে খালের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বে।
সেতু এলাকায় দেখা গেছে, নির্মাণাধীন সেতুর কাজ করছেন কয়েক শ্রমিক। সেতুর ওপরের অংশের কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। সেতুর দক্ষিণ পাশের বিকল্প সড়কটিও বেহাল। সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশে ১০০-২০০ মিটার পর থেকে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি খাল ভরাট করে বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ফলে এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিশেষ করে বর্ষা ও শুকনো মৌসুমে পানির স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কৃষিজমি ও বসত ভিটা ক্ষতির মুখে। বর্ষা মৌসুমে খালে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করতে না পারায় কৃষিজমিতে সেচ দিতে পারেন না চাষিরা। আবার বৃষ্টিপাতের পানি জমিতে আটকে থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে আগম ফসল চাষ করতে পারেন না তারা। দক্ষিণ পাশের দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামে খাল ভরাটের কারণে বর্ষার শুরুতে ও শেষে তিতাস নদী থেকে খালে পানি ঢুকতে ও বের হতে পারে না। উত্তরপারের উলুকান্দি গ্রামের কিছু ব্যক্তি খাল ভরাট করার কারণে বর্ষার শুরুতে ও শেষে তিতাস নদী থেকে খালে পানি ঢুকতে ও বের হতে পারে না। এতে বোরো মৌসুমে পানির অভাবে কৃষক জমিতে সেচ দিতে পারে না। এই বিলে প্রায় দুই হাজার বিঘার মতো জমি রয়েছে।
আর আর কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন জানান, আগে কয়েকটা গ্রুপ কাজ করেছে। তারা কাজে এসেছেন কিছু দিন হলো। আশা করছেন, তিন মাসের মধ্যে সেতুটি হস্তান্তর করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের মতো হয়েছে কাজটি শুরু হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় একই সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে তিনটা সেতুর কাজ অনেক আগেই শেষ করেছি।’
উলুকান্দি গ্রামের কৃষক মো.
দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের ভাষ্য, এই খালটি আগে তাদের চাষাবাদের কাজে আসত। এখন দুই পাশ ভরাট করে বাড়ি বানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘খাল দিয়েই তো পানি আসত জমিতে। এখন শুকনো। খাল না থাকলে সেতু দিয়ে আমরা কী করব? আবার সেতুর উচ্চতাও কম।’
বাতাকান্দি গ্রামের গৃহবধূ শিউলি আক্তার বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। খাল যদি খোলা থাকত তাহলে পানি চলে যেত। এখন নিচু সেতু বানিয়ে রাখছে, আবার খালও বন্ধ! এটা তো আমাদের কোনো উপকারে আসবে না।’
বলরামপুরের ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, এত টাকা দিয়ে সেতু বানালেও খালটি তো দখলেই আছে। পানি চলাচল নেই, আবার নৌকাও চলতে পারবে না এত নিচু সেতুর নিচ দিয়ে। এগুলো ভেবে কাজ করলে ভালো হতো। এত টাকার সেতুটি কাজেই আসবে না।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সেতুটির উচ্চতা ও কাঠামো পরিকল্পনার সময় খালের বিদ্যমান অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। তবে সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশের খালের যেসব জায়গা অবৈধভাবে দখল করা আছে, এসব স্থাপনা যদি না সরানো হয়, তাহলে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হবে। তাঁর ভাষ্য, প্রশাসনের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে খাল পুনরুদ্ধার করতে দখল উচ্ছেদ করলে সেতুর সুফল পাওয়া সম্ভব। সেতু নির্মাণকাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। এই মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ওজুর ফরজ কয়টি
ওজু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজের জন্য পবিত্রতার পূর্বশর্ত। কোরআনে আল্লাহ ওজুর ফরজ কাজগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তবে ওজু শুধু শারীরিক পবিত্রতাই নিশ্চিত করে না, বরং এটি মানুষের মনকে আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য প্রস্তুত করে।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওজু করে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তার গুনাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়ে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৫) আরেকটি হাদিসে আছে, ‘ওজু হলো ইমানের অর্ধেক।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৮৯)
ওজুর ফরজ কয়টিওজুর ফরজ চারটি, যা কোরআন (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬) এবং হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত। এগুলো হলো—
১. মুখমণ্ডল ধোয়া: পুরো মুখ, অর্থাৎ কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক পর্যন্ত এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা। এটি ওজুর প্রথম ফরজ।
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাতের হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ধোয়া, যাতে কোনো অংশ বাদ না যায়।
৩. মাথায় মাসেহ করা: মাথার সামনের অংশে ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করা। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই যথেষ্ট।
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত ধোয়া, যাতে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো অংশ ভিজে।
আরও পড়ুনপবিত্রতায় অজু ও গোসলের বিকল্প তায়াম্মুম২৪ ডিসেম্বর ২০২১ওজুর ফরজের বিস্তারিত ব্যাখ্যাফরজগুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, কেননা, স্পষ্ট বিধান জানা না থাকায় অনেকের ভুল হয়ে যায়।
১. মুখমণ্ডল ধোয়া: মুখ ধোয়ার সময় কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। এর মধ্যে মুখের ভেতরে কুলি করা বা নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ফরজ নয়, তবে এগুলো সুন্নত। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় পুরো মুখমণ্ডল ধুয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাত ধোয়ার সময় হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। হানাফি মাজহাবে কনুই পর্যন্ত ধোয়া ফরজ এবং কনুইয়ের ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ওজু করার সময় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬)
৩. মাথা মাসেহ করা: মাথায় মাসেহ করার জন্য ভেজা হাত দিয়ে মাথার সামনের অংশে মাসেহ করতে হবে। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই ফরজ আদায় হয়। শাফিই মাজহাবে পুরো মাথা মাসেহ করা ফরজ। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় দুই হাত ভিজিয়ে মাথায় মাসেহ করতেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১১১)
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পা ধোয়ার সময় পায়ের আঙুলের ফাঁক থেকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। টাখনুর ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যারা ওজুতে পা টাখনু পর্যন্ত না ধুয়ে বাদ দেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৫)
আরও পড়ুনঅজু করার নিয়ম কানুন১৯ ডিসেম্বর ২০২৩কয়েকটি পরামর্শওজু পালন করার জন্য ব্যবহারিক কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
সময় ব্যবস্থাপনা: ওজুতে সাধারণত দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। নামাজের আগে পরিকল্পনা করে ওজুর জন্য সময় রাখা যায়।
পানি সংরক্ষণ: নবীজি (সা.) অল্প পানি দিয়ে ওজু করতেন। আধুনিক সময়ে পানির অপচয় এড়িয়ে ওজু করা পরিবেশের জন্যও উপকারী। একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) এক মুদ (প্রায় ৬২৫ মিলিলিটার) পানি দিয়ে ওজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০)
কর্মক্ষেত্রে ওজু: অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজুর জন্য ওয়াশরুম বা নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা যায়। অনেক মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে ওজুর ব্যবস্থা থাকে।
ওজুর ক্ষেত্রে সতর্কতাপূর্ণতা নিশ্চিত করা: ফরজ অংশগুলোর কোনোটি বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন পায়ের আঙুলের ফাঁক বা কনুইয়ের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হলে ওজু পূর্ণ হবে না।
ক্রম বজায় রাখা: হানাফি মাজহাবে ফরজ কাজগুলো ক্রমানুসারে করা ওয়াজিব।
পানির ব্যবহার: পানি অপচয় না করে সুন্নত অনুযায়ী অল্প পানি ব্যবহার করা।
নিয়ত: মনে মনে ওজুর নিয়ত করা সুন্নত, যা ওজুকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে।
(আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা: ২০১৫)
ওজুর ফরজগুলো পালনের মাধ্যমে মুমিন নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ওজু পালন করা সহজ হয়েছে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ওজু করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতকে আরও পরিপূর্ণ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
আরও পড়ুনঅজু ভাঙার কারণ: পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতা১০ জুলাই ২০২৫