কুমিল্লার তিতাস-বাতাকান্দি-মাছিমপুর-রায়পুর সড়কের দক্ষিণ আকালিয়ায় মরা খালের ওপর পৌনে চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ চলছে। তবে খালটির প্রকৃত অবস্থা ও সেতুর নকশা নিয়ে অসংগতির প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
নির্মাণাধীন সেতুর দুই পাশে একাধিক ব্যক্তি খাল ভরাট করে বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ফলে খাল দিয়ে আর স্বাভাবিক পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল পুনরুদ্ধার না করেই সেতু নির্মাণ শুরু করায় প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। আরও উদ্বেগের বিষয়, নির্মাণাধীন সেতুটি তুলনামূলক নিচু। ভবিষ্যতে খাল পুনরুদ্ধার হলেও নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি অর্থ লুটপাটের জন্যই এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। পানি চলাচল না থাকায় সেখানে সেতুর প্রয়োজনীতাই দেখছেন না এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিতাস উপজেলার তিতাস-বাতাকান্দি-মাছিমপুর-রায়পুর সড়কের দক্ষিণ আকালিয়ায় ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের সেতুটির প্রাক্কলিত ব্যয় তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি পেয়েছেন ঠিকাদার আর আর কনস্ট্রাকশন। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের ২২ মার্চ সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার কথা। তবে সময় বাড়িয়ে চলতি মাসের ৩০ তারিখ করা হয়। এক বছর সময় বাড়ালেও সঠিক সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়। এখানে সেতু নির্মাণের আগে খালের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বে।
সেতু এলাকায় দেখা গেছে, নির্মাণাধীন সেতুর কাজ করছেন কয়েক শ্রমিক। সেতুর ওপরের অংশের কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। সেতুর দক্ষিণ পাশের বিকল্প সড়কটিও বেহাল। সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশে ১০০-২০০ মিটার পর থেকে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি খাল ভরাট করে বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। ফলে এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিশেষ করে বর্ষা ও শুকনো মৌসুমে পানির স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কৃষিজমি ও বসত ভিটা ক্ষতির মুখে। বর্ষা মৌসুমে খালে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করতে না পারায় কৃষিজমিতে সেচ দিতে পারেন না চাষিরা। আবার বৃষ্টিপাতের পানি জমিতে আটকে থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে আগম ফসল চাষ করতে পারেন না তারা। দক্ষিণ পাশের দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামে খাল ভরাটের কারণে বর্ষার শুরুতে ও শেষে তিতাস নদী থেকে খালে পানি ঢুকতে ও বের হতে পারে না। উত্তরপারের উলুকান্দি গ্রামের কিছু ব্যক্তি খাল ভরাট করার কারণে বর্ষার শুরুতে ও শেষে তিতাস নদী থেকে খালে পানি ঢুকতে ও বের হতে পারে না। এতে বোরো মৌসুমে পানির অভাবে কৃষক জমিতে সেচ দিতে পারে না। এই বিলে প্রায় দুই হাজার বিঘার মতো জমি রয়েছে।
আর আর কনস্ট্রাকশনের সাইট ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন জানান, আগে কয়েকটা গ্রুপ কাজ করেছে। তারা কাজে এসেছেন কিছু দিন হলো। আশা করছেন, তিন মাসের মধ্যে সেতুটি হস্তান্তর করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের মতো হয়েছে কাজটি শুরু হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় একই সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে তিনটা সেতুর কাজ অনেক আগেই শেষ করেছি।’
উলুকান্দি গ্রামের কৃষক মো.

আলাউদ্দিন জানান, আগে এই খাল দিয়েই তাদের কৃষিজমিতে পানি ঢুকত, বের হতো। এখন দুই পাশে মাটি ফেলে বাড়ি বানানো হয়েছে। ফলে পানি আটকে যায়। জমি সময়মতো চাষ করতে পারেন না।
দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের ভাষ্য, এই খালটি আগে তাদের চাষাবাদের কাজে আসত। এখন দুই পাশ ভরাট করে বাড়ি বানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘খাল দিয়েই তো পানি আসত জমিতে। এখন শুকনো। খাল না থাকলে সেতু দিয়ে আমরা কী করব? আবার সেতুর উচ্চতাও কম।’
বাতাকান্দি গ্রামের গৃহবধূ শিউলি আক্তার বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। খাল যদি খোলা থাকত তাহলে পানি চলে যেত। এখন নিচু সেতু বানিয়ে রাখছে, আবার খালও বন্ধ! এটা তো আমাদের কোনো উপকারে আসবে না।’
বলরামপুরের ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, এত টাকা দিয়ে সেতু বানালেও খালটি তো দখলেই আছে। পানি চলাচল নেই, আবার নৌকাও চলতে পারবে না এত নিচু সেতুর নিচ দিয়ে। এগুলো ভেবে কাজ করলে ভালো হতো। এত টাকার সেতুটি কাজেই আসবে না।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সেতুটির উচ্চতা ও কাঠামো পরিকল্পনার সময় খালের বিদ্যমান অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। তবে সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশের খালের যেসব জায়গা অবৈধভাবে দখল করা আছে, এসব স্থাপনা যদি না সরানো হয়, তাহলে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হবে। তাঁর ভাষ্য, প্রশাসনের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে খাল পুনরুদ্ধার করতে দখল উচ্ছেদ করলে সেতুর সুফল পাওয়া সম্ভব। সেতু নির্মাণকাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। এই মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ল ভর ট এল ক ব স

এছাড়াও পড়ুন:

বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট

সারা দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

প্রস্তাবে জেলা জজদের মধ্য থেকে বাণিজ্যিক আদালতের বিচারক নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে বাণিজ্যিক আপিল বেঞ্চ গঠনের বিষয়টিও প্রস্তাবে উঠে এসেছে। প্রস্তাবে মামলা দায়েরের আগে মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে মামলা দায়েরের আগেই অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হবে এবং আদালতের ওপর মামলার ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো বাণিজ্যিক মামলা বা আবেদনের মূল্যমান ৫০ লাখ টাকা হলে তা বাণিজ্যিক আদালতে বিচার্য হবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার সময়ে সময়ে এই নির্ধারিত মূল্যমান সীমা পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।

সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বণিকদের সাধারণ লেনদেন থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিমান ও নৌপরিবহন, নির্মাণ ও অবকাঠামোগত প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজ চুক্তি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বিমা এবং অংশীদারত্ব চুক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিষেবা খাত এবং শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ–সম্পর্কিত বিরোধকে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এর ফলে আধুনিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ–সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের বিরোধ একটি বিশেষায়িত আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।

বিচারপ্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার বিষয়ে প্রস্তাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চূড়ান্ত শুনানি অবশ্যই ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে সংক্ষিপ্ত বিচারের সুযোগও প্রস্তাবে রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবে আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আর বলা হয়, বাণিজ্যিক আপিল আদালত ছয় মাসের মধ্যে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ