শিগগির ইরানে হামলা গুটিয়ে আনার পথ খুঁজছে ইসরায়েল। এই বার্তা ইসরায়েল ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে পৌঁছে দিয়েছে। ইসরায়েলের তিনজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তবে ইসরায়েল এই হামলা অচিরেই বন্ধ করে পাল্টা হামলা থেকে রেহাই পাবে কি না, সেটা অনেকাংশে ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে।

অপর দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের নেতারা চলমান এই সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার সুনির্দিষ্ট কৌশল বের করার চেষ্টা করছেন। যাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলা বন্ধের পাশাপাশি ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বন্ধ হয়। ইরানের পাল্টা হামলায় ইতিমধ্যে ইসরায়েলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ইসরায়েলি নেতাদের এই অবস্থান সম্পর্কে অবগত অপর এটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানে তাদের লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল তার ইচ্ছেমতো ইরানে আকস্মিক হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এই সংঘাত কখন শেষ হবে, সেটা তাদের হাতে নেই। তেহরান এই লড়াই চালিয়ে যেতে চাইলে ইসরায়েলের চড়া মূল্য দেওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে হবে।

১৩ জুন ভোররাতে ইরানে হামলা চালিয়ে দেশটির সেনাপ্রধানসহ ২০ জনের বেশি ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকজন পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে দেশটির একাধিক পারমাণিবক স্থাপনা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আসছে।

এর মধ্যে শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালানোয় ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পায়। এই হামলার কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েল তার লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এবং এই অভিযান দীর্ঘমেয়াদি করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।

এরপর রবি ও সোমবার ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এসব ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু আকাশেই ধ্বংস করতে পারলেও বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে আঘাত হানে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে লাখ লাখ ইসরায়েলিকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘোষণায় ছাত্রনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের নানা পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।

গত শুক্রবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলে রাজনীতি বন্ধের ওই ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল শনিবার দিনভর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। এ বিষয়ে করণীয় ও রূপরেখা ঠিক করতে গতকাল দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন তাঁরা।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের জন্য সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। এরপর ওই দিন মধ্যরাতে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ ছাত্র–ছাত্রী বাইরে বেরিয়ে আসেন। রাত একটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। শুক্রবার রাত দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা হয়। তখন উপাচার্য বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হল প্রভোস্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।’ উপাচার্যের এ বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা ‘না, না’ বলে আপত্তি জানান এবং হলগুলোতে সম্পূর্ণভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেন। পরে রাত তিনটার দিকে বিক্ষোভের মুখে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ হলগুলোতে ‘প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের আশ্বাসে উল্লাস প্রকাশ করে হলে ফিরে যান। প্রক্টরের ওই ঘোষণার আধঘণ্টা পর স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অফিস থেকে এক প্রজ্ঞাপন আসে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটিভুক্তরা পদত্যাগ ও মুচলেকা প্রদান সাপেক্ষে হলে অবস্থান করতে পারবেন। অন্যথায় তাদের হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। সে সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হলের হল প্রাধ্যক্ষদের কাছ থেকে আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে—এমন বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেয়। মূলত সেই বিজ্ঞপ্তির আলোকে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভ জানায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা হলের তালা ভেঙে বেরিয়ে এসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ