গান-আলোচনায় ‘আমি চাইলাম যারে’ গানের গীতিকারকে স্মরণ
Published: 24th, September 2025 GMT
‘আমি চাইলাম যারে, ভবে পাইলাম না তারে’ কিংবা ‘বন্ধুয়া বিহনে গো, বাঁচি না পরানে গো’ তুমুল জনপ্রিয় গান দুটির কথা জানেন না—এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। এমন জনপ্রিয় অসংখ্য গানের গীতিকার কফিলউদ্দিন সরকারের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার নজরুল একাডেমিতে বেলা তিনটায় বাউল কফিলউদ্দিন সরকার স্মৃতি কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে বাউল ও মালজোড়া গানের প্রখ্যাত শিল্পী কফিলউদ্দিন সরকারের রচিত গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ‘ভবসিন্ধু আমায় করো পার’ শীর্ষক অনুষ্ঠান শুরু হয়।
সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হয় আলোচনা সভা। বাউল বিরহী কালা মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় অতিথির বক্তব্য দেন কবি ও গবেষক মোস্তাক আহমাদ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক শামসুল বাসিত শেরো ও বিশিষ্ট নাট্যকার মু.
আলোচনা পর্বের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন বাউলশিল্পী শাহীনূর আলম সরকার ও কফিলউদ্দিনের ছেলে মো. মনির উদ্দিন সরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এ কে এম কামরুজ্জামান। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বাউল বিরহী লাল মিয়া, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ, আশিক আল মাইজভান্ডারি ও সূর্যলাল দাস।
বক্তারা বলেন, বাংলা বাউলগানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন শিল্পী ও গীতিকার ছিলেন কফিলউদ্দিন সরকার। মালজোড়াগানের বিকাশ ও বিস্তারে তাঁর ভূমিকা সর্বজনবিদিত। অথচ তাঁর মতো সংগীতকারের জীবন ও কর্ম নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁর রচনাবলি প্রকাশে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো উদ্যোগও নেই।
সিলেটে বাউল কফিলউদ্দিন সরকারের ১৪তম প্রয়ান দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাউলপূত্র মো. মনির উদ্দিন সরকার। গতকাল সন্ধ্যায় নগরের জিন্দাবাজার এলাকার নজরুল একাডেমিতেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নবাব ফয়জুন্নেছার জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি
মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনের পুরোটা সময়ই কেটেছে মানুষের কল্যাণে। নারীশিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মেরও সাত বছর আগে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। এমন একজন মহীয়সী নারীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে আরও অনেক আগেই অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু সেটি আজও হয়নি। তবে অতীতে কেন হয়নি, সেটি না ভেবে এখনই ফয়জুন্নেছার জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এটি এখন সময়ের দাবি।
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বক্তারা। কুমিল্লা নগরের বাদুড়তলা এলাকায় ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর প্রতিষ্ঠা করা নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নবাব ফয়জুন্নেছার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালি বের করা হয়। পরে নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চবালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার। মুখ্য আলোচক ছিলেন সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রওশন আরা বেগম। বক্তব্য দেন অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, গবেষক গোলাম ফারুক, নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (শিক্ষা ও আইসিটি) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে জন্মগ্রহণ করা মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী শিক্ষার বিস্তারে যেসব কাজ করে গেছেন, ২০২৫ সালে এসেও সেসব কাজ করা অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। প্রজাহিতৈষী ও শিক্ষানুরাগী ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী আজীবন মানুষের কল্যাণ এবং শিক্ষার বিস্তারে কাজ করে গেছেন। তাঁর আদর্শকে ধারণ করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
মুখ্য আলোচক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’ তিনি বলেন, ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বিভিন্ন সম্পত্তি অনেক অগেই দখল হয়ে গেছে। বর্তমানে অনেক স্থানে জবরদখলের চেষ্টা চলছে। এগুলো রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে আমি নবাব ফয়জুন্নেছার জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেছি। কিন্তু সেটি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও রাষ্ট্রেরই দরকার ছিল নারীশিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অনেক আগেই অন্তর্ভুক্ত করা। বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই যেন নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’
সভা শেষে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমাদের অবস্থান থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ১৮৩৪ সালে বর্তমান লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। প্রজাহিতৈষী ও শিক্ষানুরাগী এই জমিদার আজীবন মানুষের কল্যাণ এবং শিক্ষার বিস্তারে কাজ করে গেছেন। ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী মৃত্যুবরণ করেন। পশ্চিমগাঁওয়ের নিজ বাড়ির পাশে চিরনিদ্রায় তিনি শায়িত আছেন। সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৪ সালে তাঁকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। নবাব ফয়জুন্নেছা অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।