দীর্ঘ ৭ বছর পর আবারো হতে যাচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন। ভোট হবে ১৯টি কেন্দ্রে।

শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করছেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার এক নতুন সূচনার জন্য। কিন্তু ভোটের ঠিক আগে প্রার্থী-ভোটারদের মুখে শোনা যাচ্ছে অভিযোগ আর অনাস্থার সুর। নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা কমিটি থেকে শুরু করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বারবার।

আরো পড়ুন:

চাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব নাকোচ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের

ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের জবাব দিল প্রশাসন

নির্বাচনের আচরণবিধি ও আইনে আছে ফাঁক-ফোকড়, এমন অভিযোগ এনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী রাকিব সংবাদ সম্মেলন করে জানান, নির্বাচনে স্ট্যাডি গ্যাপসহ কেউ-ই প্রার্থী হতে পারবে না। কিন্তু কোনো এক ক্ষমতাবলে ভিপি পদপ্রার্থী শেখ খোদার নূর ইসলাম প্রাথমিকভাবে অযোগ্য হয়েও পরে যোগ্য প্রার্থীর তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। ফলে দায়িত্বশীলদের প্রতি প্রশ্ন থেকেই যায়।

এমন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন আরো অনেক প্রার্থী। তারা বলছেন, আচরণবিধি ভঙ্গ করেও দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয়নি। বরং নির্বাচন কমিশন সবকিছু লিখিত অভিযোগের ওপর নির্ভর করছে।

নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ১৯টি কেন্দ্রে ভোট হলেও কোনো এজেন্ট নিয়োগের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি প্রশাসন। প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেও এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। এ অবস্থাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, দায়িত্বশীলরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে ভোট প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী হামিম মন্ডল বলেন, “অনেক বছর পর গকসু নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা রাখার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট থাকা জরুরি। সে ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের থেকে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, বিষয়টা শঙ্কার।”

অছাত্র ও বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই বলে অভিযোগ করছেন অনেকেই।

ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শিহাব আহসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার বিষয়ে জোরালোভাবে জানানোর পরেও এখনো বিভিন্ন অছাত্র-সাবেক ছাত্রদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, যা প্রশ্নাতীত নয়। নির্বাচন ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা বাড়তে পারে।”

বিভিন্ন সময়ে আচরণবিধি ভঙ্গের নজির থাকলেও নির্বাচন কমিশনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই অভিযোগ অন্য এক ভিপি পদপ্রার্থী নাসিমের। তিনি জানান, আচরণবিধিতে ১০ হাজারের বাধা নিয়ম থাকলেও সে নিয়ম মানেনি একাধিক প্রার্থীরা। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন হওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

এদিকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ড.

ফুয়াদ হোসেন বলেন, “আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়ম অনুযায়ী লিখিত অভিযোগ দেবেন। অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু লিখিত অভিযোগ আসছে না। যেসব বিষয়ে লিখিত জানানো হয়েছে, সেগুলা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গকস আচরণব ধ

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের আশ্বাস সিইসির

গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।

রবিবার (৯ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন ভবনে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আশ্বাস দেন।

বৈঠকের পর ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) চেয়ারম্যান রেজায়োনুল হক রাজা বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যে আচরণবিধি (নীতিমালা) তৈরি করেছে, তাতে আমাদের সাংবাদিকদের কিছু বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। আমরা ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি-আরএফইডি যৌথভাবে একাধিক সেমিনার করেছি, যেখানে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, অংশীজন ও সংবাদকর্মীদের মতামত নিয়ে আমরা একটি সুপারিশমালা তৈরি করেছি। ওই সুপারিশমালা নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দিয়েছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘বৈঠকে ইসির সিনিয়র সচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সাংবাদিকদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’’

রেজায়োনুল হক বলেন, ‘‘আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছি যে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করার যে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, সেটি সাংবাদিকদের জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধকতা। আমাদের যদি আইডি কার্ড ইস্যু করা থাকে, তাহলে আলাদা করে অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট থাকার সীমা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছি।’’

বিজেসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি কোনো কঠোর সময়সীমা নয়, বরং কেন্দ্রের জায়গার সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় একটি সাধারণ নির্দেশনা মাত্র। আমরা বুঝেছি, সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা সীমিত করার উদ্দেশ্যে এই ধারা নয়।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশ্বস্ত যে কমিশন আন্তরিকভাবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা করতে চায়। এমনকি কমিশন নিজেও মনে করে, সিসি ক্যামেরা না থাকলেও সাংবাদিকদের ক্যামেরা থাকলে সেটি ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।’’

সরাসরি সম্প্রচার নিয়েও আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, সাংবাদিকদের উচিত দায়িত্বশীল থাকা, যেন সম্প্রচারে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো বিঘ্ন না ঘটে। তবে যদি কোনো অনিয়ম বা কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে, সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এসব পরিস্থিতিতে কঠোর নীতিমালা কার্যকর রাখা সম্ভব নয়।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, নির্বাচন কমিশন দ্রুত আমাদের সুপারিশগুলো বিবেচনা করে আচরণবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনবে। এতে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সহজ হবে এবং জনগণের জানার অধিকারও আরও সুরক্ষিত হবে।’’

আরএফইডি সভাপতি কাজী জেবেল বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে যারা জড়িত থাকবে, তাদের বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ক্যামেরাপারসনের ওপর আক্রমণ বা সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা এই নীতিমালায় স্পষ্টভাবে যুক্ত করতে হবে।’’

ঢাকা/রায়হান//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনে গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের আশ্বাস সিইসির