দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে: র্যাব মহাপরিচা
Published: 24th, September 2025 GMT
শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনে সারা দেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দিনাজপুরের রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দির পরিদর্শন শেষে তিনি এ সব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
পূজায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা: র্যাব
টেকনাফে মানব পাচারকারী চক্রের আস্তানা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার
মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘‘এ বছর দেশে প্রায় ৩১ হাজার ৫২৬টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক পাহারা ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সমন্বিতভাবে কাজ করছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শুভ ষষ্ঠীর মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে ২ অক্টোবর বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে। আমাদের দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা, মুসলমানদের ঈদ এবং খ্রিস্টানদের বড়দিন সব সময়ই উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। এবারের পূজাও সেই ধারাবাহিকতায় সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী।’’
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘‘কিছু অসুস্থ মানসিকতার ব্যক্তি গোপনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪-১৫টি বিচ্ছিন্ন ঘটনার চেষ্টা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার রাখা হয়েছে।’’
একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা/মোসলেম/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকাত-মহাজনদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন
সুন্দরবনে দস্যুতা ফিরে আসা শুধু জীবিকার জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জন্য হুমকি নয়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের ত্রাতা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়া মহাপ্রাণ বনটির প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের জন্যও অশনিসংকেত। ডাঙার মহাজন কোম্পানি ও বনের ডাকাতদের যৌথ চক্র এক বছরের মধ্যে যেভাবে বন ও বনজীবীদের অশেষ দুর্দশার কারণ হয়ে উঠেছে, তা আমাদের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা ও ভঙ্গুরতার মূর্ত প্রতীক।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার সুযোগে সুন্দরবনে দস্যুতার প্রত্যাবর্তন হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩২টি বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সুন্দরবন ডাকাতমুক্ত হয়েছিল। ফলে অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজি, মাছ লুট, জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করার মতো অপরাধের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা। বর্তমানে ছোট–বড় অন্তত ১৪টি বাহিনী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সুন্দরবনের নদীতে তাদের ভাসমান আস্তানা গড়ে উঠেছে। জেলে, মৌয়াল, কাঁকড়া সংগ্রহকারীসহ বনজীবীরা তাদের হাতে অসহায়ভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। চাঁদা আর মুক্তিপণ দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার।
সুন্দরবনে কার্যত এখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ শূন্যের কোঠায়। কেননা বনদস্যুদের কাছে যে ধরনের অস্ত্র রয়েছে, তাদের প্রতিরোধ করার মতো সক্ষমতা বনরক্ষীদের নেই। কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর টহল ও নজরদারিও অপ্রতুল। ফলে সুন্দরবনে এখন বনদস্যুদের সমান্তরাল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর লোকালয় থেকে এ কাজে তাদের সহায়তা করছেন ‘মহাজন কোম্পানি’ হিসেবে পরিচিত মহাজনেরা। তাঁরাই নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ডাকাতদের সঙ্গে বনজীবীদের বন্দোবস্ত করে দেন। আবার তাঁরাই দর-কষাকষি করে জিম্মি বনজীবীদের মুক্তিপণের টাকা পাঠান। কিন্তু এই ‘উপকারে’ বনজীবীরা ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ছেন। এর মধ্য দিয়ে সুন্দরবনে একধরনের আধুনিক দাসতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করি।
দস্যু ও ‘মহাজন কোম্পানির’ যে সমান্তরাল প্রশাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তাতে সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এবার অবৈধ জাল ব্যবহার করে ও নির্বিচার বিষ ছিটিয়ে মাছ শিকার কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া আগের মতো মিলছে না। জলজ প্রাণী দেদার মারা পড়ায় সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানে স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। আবার বিষে মারা যাওয়া মাছ, কাঁকড়া খেয়ে নাগরিকেরাও স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। বনদস্যুরা অবাধ হরিণ নিধন করেও সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
বনদস্যুমুক্ত সুন্দরবন আবারও ডাকাতদের অভয়াশ্রমে পরিণত হওয়া যারপরনাই উদ্বেগজনক। আত্মসমর্পণকারী ডাকাতদের একটা অংশ আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অর্থ হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসন করা যায়নি। তারা যেন দস্যুবৃত্তিতে ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য যে প্রশাসনিক ও সমাজভিত্তিক নজরদারি দরকার ছিল, সেটাও যে নেই, তারও প্রমাণ এ ঘটনা। ফলে শুধু ঘটা করে আত্মসমর্পণ করানোই যে যথেষ্ট নয়, এই শিক্ষাটাও নেওয়া প্রয়োজন।
সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এবং বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত করতে বনদস্যু মুক্ত করার বিকল্প নেই। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বনরক্ষীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডাকাতদের হাতে। সুন্দরবনের বনদস্যু ও মহাজনদের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর অভিযান চালানো প্রয়োজন।