কোনো তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা তাঁর প্রথম ছবি দিয়ে ভারতীয় সিনেমার মানচিত্রে আলোড়ন তুললেন; ছবিটি পেল জাতীয় পুরস্কার। আর পুরস্কার ঘোষণার একই দিনে সেই তরুণ চিরতরে চলে গেলেন। এই অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটেছিল অবতার কৃষ্ণ কৌলের জীবনে।
১৯৩৯ সালে কাশ্মীরের শ্রীনগরে জন্ম নেওয়া কৌলের শৈশবই ছিল বেদনার। বাবার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে একদিন তিনি ঘর ছেড়ে পালালেন। রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দিন কাটত, চায়ের দোকানে কিংবা ছোট হোটেলে কাজ করতেন। অভুক্ত থেকেও বই আর শব্দের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। এই অপূর্ণ শৈশবই হয়তো পরে তাঁকে সিনেমার ভেতর মানুষ আর সমাজকে ভিন্ন চোখে দেখার শক্তি দিয়েছিল।

নিউইয়র্কে নতুন জীবন
পরবর্তী সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি পেয়ে পৌঁছে গেলেন নিউইয়র্কে। দিনের চাকরির ফাঁকে রাতগুলো কাটত সিনেমা ও সাহিত্য নিয়ে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস আর পরে ব্রিটিশ ইনফরমেশন সার্ভিসে কাজ করলেও তাঁর আসল পৃথিবী ছিল অন্যত্র। সহকর্মীরা প্রায়ই দেখতেন, হাতে উপন্যাস বা নোটবুক নিয়ে বসে আছেন কৌল। তাঁর চোখে তখন এক স্বপ্ন—চলচ্চিত্র নির্মাণ।

‘২৭ ডাউন’–এর শুটিং চলছে। ইনস্টাগ্রাম থেকে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে

ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এত দিন তা বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল; কিন্তু গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র, নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনের ফল সে চিত্রই তুলে ধরেছে। বিষয়টি রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন। তিনি এখন এসব নির্বাচনে নিজের ভূমিকা খাটো করে দেখাচ্ছেন।

তিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির তিন প্রার্থীর কাছে হার রিপাবলিকান পার্টির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নির্বাচনটা দেখেছি। তবে এসব ব্যাপারে আমি তেমনভাবে জড়িত ছিলাম না।’ নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন করার কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্রার্থীকে সমর্থন করিনি। নিউ জার্সির প্রার্থীকেও খুব একটা সহায়তা করিনি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বলেছিলাম—আপনি কি একজন “ঠগ” চান, নাকি একজন “বামপন্থী”?’

ট্রাম্প নিজেকে যতই দূরে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, মঙ্গলবারের নির্বাচনে জনগণ আসলে তাঁর বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। বলা চলে, ভোটের ব্যালটে ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এর আগে কখনো কোনো নির্বাচনে এতটা স্পষ্টভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেখা যায়নি।

ট্রাম্পপন্থী ভোট কমেছে

এ সপ্তাহে সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পবিরোধী ভোট আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে এবং ট্রাম্পপন্থী ভোট আগের চেয়ে কমেছে। নির্বাচনের আগেই গত সোমবার সিএনএনের করা এক সমীক্ষায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪১ শতাংশ কংগ্রেস নির্বাচন হলে ট্রাম্পের বিরোধিতা জানানোর জন্য ভোট দেওয়ার কথা বলেন। অপর দিকে মাত্র ২১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা বলেন; অর্থাৎ ট্রাম্পবিরোধী ভোট প্রায় দ্বিগুণ। এটা স্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টরা এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সিএনএনের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত প্রায় ২০ বছরে এ রকম বড় ফারাক আর দেখা যায়নি।

এর আগে ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৩৬ শতাংশ মানুষ আর মাত্র ১৫ শতাংশ বলেছিলেন তাঁর পক্ষে। ২০১৮ সালের ট্রাম্পের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেও এই ব্যবধান এতটা বড় ছিল না। তখন ট্রাম্পবিরোধী ছিলেন ৩৮ শতাংশ। ট্রাম্পপন্থী ছিলেন ২৫ শতাংশ।

এত দিন সমীক্ষায় ট্রাম্পবিরোধী ভোট বাড়ার কথা বলা হলেও গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলও সেটা প্রমাণ করেছে। সারা দেশে ভোট না হলেও, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির বুথফেরত জরিপের তথ্য বলছে, ট্রাম্পবিরোধী ভোটের ব্যবধান বেড়েছে।

২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (৩৪%-১৭%), এবার তা বেড়ে ২২ পয়েন্টে (৩৮%-১৬%) দাঁড়িয়েছে। নিউ জার্সিতে ব্যবধান আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (২৮%-১১%)। এবার ২৮ পয়েন্টে (৪১%-১৩%) পৌঁছেছে।

‘নো কিংস’

ট্রাম্পবিরোধী ভোট বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে ‘নো কিংস’ আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত মাসে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ঘিরে যে সমাবেশ হয়েছিল সেগুলো নিছক কাকতালীয় ছিল না। এসব ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলন এখনো আগের মতোই শক্তিশালী, আশাব্যঞ্জক এবং সক্রিয়। এই আন্দোলনের সদস্যরা হয়তো এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে খুব আস্থাশীল নন, কিন্তু তাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি; বরং ভোট দিতে প্রস্তুত।

দ্বিতীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর মূল ভোটারগোষ্ঠী এখন তেমন উৎসাহী নন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচিত হওয়ার পর নিউইয়র্কের শীর্ষস্থানীয় দুই পদে কাদের মনোনয়ন দিলেন মামদানি
  • জোহরান মামদানির কাজে কীভাবে ট্রাম্প বাগড়া বাঁধাতে পারেন
  • জোহরান মামদানির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর মায়ের চলচ্চিত্রের কাছে কতটা ঋণী
  • ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে
  • মামদানিকে ঠেকাতে নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন রিপাবলিকানরা, তা কি সম্ভব
  • ডেমোক্র্যাটরা সাবধান! ট্রাম্প প্রতিশোধের ছক কষছেন
  • আমার সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামদানি
  • নিউইয়র্কের মেয়রের নতুন ঠিকানা কি গ্রেসি ম্যানশন
  • এক কক্ষের বাড়ি থেকে ‘রাজপ্রাসাদে’