যেসব দেশে লজিস্টিক অর্থাৎ পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার ব্যয় অনেক বেশি, তার অন্যতম বাংলাদেশ। এই ব্যয় বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। অতিরিক্ত এই ব্যয় কমাতে পারলে যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা তৈরি হবে, তাতেই রপ্তানি ২০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। 

গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজিত ‘কনডাক্টিভ অটোমাবাইল পলিসি ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় একথা বলা হয়। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। 

ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যাল ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো.

আব্দুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. মাশরুর রিয়াজ। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, উত্তরা মোটর্সের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘যে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।’ দেশে গত ১৬ বছরে বহু প্রতারণামূলক বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে ঋণের নামে আমরা ১ টাকার জিনিস ২০ টাকা করেছি। আমরা তো পরিবেশেরও বড় ক্ষতি করে ফেলেছি। এসব উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক দায় তৈরি করেছি, যা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এটা তো টেকসই বিষয় নয়। দীর্ঘ মেয়াদে চলনশীল নয়। এখান থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। এখান থেকে দেশের অর্থনীতিকে বের করে আনার জন্য সমন্বিত অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এমনকি এটার জন্য রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।’ 

দেশের অর্থনীতিকে এই দায় থেকে বের করে আনার জন্য সমন্বিত বহুমুখী নীতি গ্রহণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যয়গুলোকে এমনভাবে করতে হবে, যাতে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। দেশের জনমিতিক সুবিধার সুফল পেতে হলে সারাদেশে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’ জনমিতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য তিনি দেশে অটোমোবাইল শিল্পের ব্যাপক প্রসারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে অন্তত ২০০টি এমন নদী রয়েছে, যেগুলো দিয়ে নৌ পরিবহনের মতো সস্তা ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে পণ্য পরিবহন করা যায়। দেশে পরিবেশবান্ধব সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থা তৈরির জন্য সমন্বিত পরিবহন নীতি গ্রহণ করতে হবে। 

মূল প্রবন্ধে মাসরুর রিয়াজ বাংলাদেশে লজিস্টিকস ব্যয় বেশি থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, লজিস্টিকের অন্যতম উপাদান হচ্ছে উন্নত সড়ক এবং উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা। পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি আমদানি করতে হবে। শুধু নতুন গাড়িই যে পরিবেশবান্ধব তা নয়। বরং উন্নত প্রযুক্তির বা উন্নত দেশে তৈরি করা পুরোনো গাড়ি অনেক বছর পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব থাকে এবং উন্নত সেবা দেয়।

বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক বলেন, দেশে পুরোনো গাড়ি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ব্যাখ্যা দিয়ে অতিরিক্ত আমদানি কর চাপানো আছে। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির তৈরি গাড়ি বিশেষ করে জাপানের মতো দেশের তৈরি পুরোনো গাড়িও অনেক বছর ধরে পরিবেশবান্ধব থাকে। যেটা অনেক দেশের নতুন গাড়িও দিতে পারে না। সুতরাং জাপানসহ উন্নত দেশের প্রযুক্তির তৈরি ব্যবহৃত এবং পুরোনো গাড়ি আমদানিবান্ধব নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন বারভিডার সভাপতি। 

উত্তরা মোটর্সের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, দেশে গাড়ি সংযোজনে ভ্যালু এডিশন হচ্ছে না। বাংলাদেশের যে অটোমোবাইল পলিসি রয়েছে, সেটা তখনকার এনবিআর নিজেদের মতো পরিবর্তন করে জটিল করে রেখেছে। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ সমন ব ত পর বহন পর ব শ আম দ র র জন য গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি

চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।

এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।

আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।

বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।

এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।

এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে কফি–সংস্কৃতি প্রসারে ‘আমা কফি’
  • রাজশাহীতে আইনি ব্যবস্থা নিন
  • বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের ৩ প্যাকেজ ঘোষণা
  • চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি