সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘এক্সকিউজ’ দেওয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত : হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 26th, June 2025 GMT
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘এক্সকিউজ’ দেওয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আগে এক কোটি টাকার কাজের মধ্যে ৩০ লাখ টাকাই আত্মসাৎ করা হতো। কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। গত ২০ বছর ধরে এমন জবাবদিহিহীন সমাজ তৈরি হয়েছে। এখনও কেউ কেউ ভাবছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে না—এটাই তাদের ভুল। আমরা যেহেতু কমিশন খাই না, তাই আমরা কারও কাছে দায়বদ্ধ নই। আমি ঠিকাদার নিয়ে এখানে কাজ করি না, আমার কোনো ঠিকাদারও না। সুতরাং এই কাজের জন্য সরকারের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই হবে।’
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে দেবিদ্বার অংশে যানজট নিরসনে দুই কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ এবং বিভাজক স্থাপনকাজে অনিয়ম হাতেনাতে ধরার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘তারা হচ্ছে যেকোনো এক্সকিউজ দেওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের কাছে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকে এক্সকিউজ। আর দায়িত্ব পাস করা—এই চেয়ার, সেই চেয়ার—আমাদের সঙ্গেও এমন আচরণ করে। এটি মেনে নেওয়া যায় না।’
সড়কের অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই কোটি ৪৩ লাখ টাকা খরচ করে কাজটি জনগণের উপকারে আসছে না, বরং আরও দুর্ভোগ বেড়েছে। কথা ছিল ডিভাইডার বসানোর আগে ৬ ইঞ্চি গাঁথুনি হবে, কিন্তু তা করা হয়নি। পিচঢালা রাস্তার ওপরেই ডিভাইডার বসানো হয়েছে—একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। ব্লক দেওয়ার কথা ছিল, তাও দেওয়া হয়নি। যেখানে এক রোড থেকে অন্য রোডের দূরত্ব থাকার কথা ৩০০ মিমি, সেখানে তারা দিয়েছে ৪০০ মিমি। যেখানে প্রয়োজন ১০০টি রড, সেখানে ব্যবহার করেছে মাত্র ৭০টি। এই অনিয়মের দায়ভার ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা এমন যেন কাজীর গরু কিতাবে আছে কিন্তু গোয়ালে নেই।’
জানা গেছে, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বার অংশে যানজট নিরসনে রোড ডিভাইডার স্থাপন ও সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে সরকারের পক্ষ থেকে দুই কোটি ৪৩ লাখ টাকার বরাদ্দ নিশ্চিত করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এই কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে হাসনাত আবদুল্লাহ নিজেই সরেজমিনে গিয়ে অনিয়ম ধরেন।
তিনি বলেন, ‘গতকালও আরেকটি সড়কে অনিয়মের কারণে কাজ বন্ধ করেছি। এ কাজের ঠিকাদার উপস্থিত ছিলেন, তাকে বলা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে। দেবিদ্বারের মানুষের দুর্ভোগ আমি হতে দেব না।’
ঠিকাদার আশিকুর রহমান ভূঁইয়াকে উদ্দেশ্য করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই টাকা আমার বা আপনার বাবার টাকা নয়—এটা জনগণের টাকা। কেন এই টাকা অপচয় হবে? জনগণের টাকা হারাম করা যাবে না। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। তাদের গালমন্দ শুনতে হয়। এই কাজ ঠিকভাবে করতে আরও ৫০ লাখ টাকা বেশী বরাদ্দ হলেও সমস্যা হতো না। আপনি কেন অনিয়ম করলেন? ভাই, গজব পড়বে। সাওয়াবের নিয়তে করলে এমন কাজ হতো না। দেবিদ্বারে প্রায় ৪০টি হাসপাতাল রয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ১৫টি ডেলিভারি হয়। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—এই দায়ভার আপনাকে নিতে হবে।’
এ বিষয়ে মেসার্স ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প কর মকর ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার
বাংলাদেশে জনগণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি হলেও এখানে পেশা হিসেবে নার্সদের অমর্যাদাসম্পন্ন একটা অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নার্সদের ডাক্তারি ব্যবস্থার অধীন একটা পেশা হিসেবে যে দেখা হয়, আমরা মনে করি এটা ভুল। এখান থেকে মুক্ত হতে হবে। নার্স সেবাটা স্বাস্থ্যসেবার একটা মৌলিক দিক। ফলে তাঁদের স্বাধীনভাবে এই পেশাকে চর্চা করবার সুযোগ–সুবিধা দিতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও স্বাস্থ্য আন্দোলন। স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার।
সরকার স্বাস্থ্যকে এখন আর জনগণের অধিকার হিসেবে স্বীকার করছে না বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যকে অধিকার নয়, বাজারজাত পণ্য বানানো হয়েছে। টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে নয়।’
নার্সদের স্বাধীন পেশাগত চর্চা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সদেরকে ডাক্তারদের হুকুমমতো চলতে হবে—এই ধারণা ভাঙতে হবে। স্বাস্থ্য মানে শুধু প্রেসক্রিপশন নয়, প্রতিরোধও একটি বড় দিক। নার্সদের মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জনগণ প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার এক মৌলিক দিক। কিন্তু আমাদের সমাজে চিকিৎসাকে ডাক্তারিকরণ বা মেডিক্যালাইজেশন করা হয়েছে। অনেক রোগে ডাক্তার কিংবা ওষুধের প্রয়োজনই হয় না। এ জায়গায় নার্সরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম। এক মাসের মধ্যে নার্সিং কমিশন গঠনের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বিএনএর সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন তমাল। এতে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপারসন জরিনা খাতুন, সহসভাপতি মনির হোসেন ভূঁইয়া এবং সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী।