প্রধান উপদেষ্টা-সিইসির বৈঠকের আলোচিত বিষয় স্পষ্ট করার আহ্বান সালাহউদ্দিনের
Published: 27th, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের বৈঠকে আলোচিত বিষয় স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ওই বৈঠক নিয়ে বিএনপির ধারণা- ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসি। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নেওয়া সম্ভব। বৈঠকে হয়তো প্রধান উপদেষ্টা সিইসিকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিতে তার বার্তা দিয়েছেন। যদি উভয়পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয় তাহলে আমরা আশস্ত হবো।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকবারই বলা হয়েছে- তাদের সমস্ত প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের ভেতরে সমাপ্ত হয়ে যাবে। এর আগে তারা জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন বলেও নির্বাচন কমিশন বলেছিল।
তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে এবং সব কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছেন সেই হিসেবে বলা যায়, সেপ্টেম্বর এনাফ টাইম। নির্বাচনের জন্য যে সমস্ত জিনিস প্রয়োজন সেটা হচ্ছে- ভোটার তালিকা প্রণয়ন, হালনাগাদ করা এটা হয়ে গেছে এবং অন্যান্য যে সমস্ত বিষয় আছে- নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়, সেটাও তারা করে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, আর বাদ বাকি যেটা আছে ডিলিটেশন। সেটা তিন মাসের মধ্যে সমাপ্ত করা যায়। এরপরে তপশিল ঘোষণার পরে অনেক কার্যক্রম থাকবে পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগসহ ভোটকেন্দ্র ঠিক করা, ট্রেনিং করা এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। এগুলোর জন্য প্রস্তুতি লাগে না।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়। তবে বৈঠকের আলোচিত বিষয় সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এর আগে গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড.
আগামী রমজানের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের প্রস্তাবে জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, জুলাই গণহত্যার বিচার ও সংস্কার সন্তোষজনক হলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে তারা অনেক কথাই বলতে পারেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সম্মত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব পক্ষ এবং সব রাজনৈতিক দল একমত। দ্বিমত তো হতে দেখিনি কাউকে। যদি তাই হয়, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা বা আয়োজন করা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ প্রতিটি স্তরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে কমপক্ষে ৬ মাসের বেশি সময় লাগে। সেটা ইউনিয়ন পরিষদ হোক, পৌরসভা হোক, উপজেলা পরিষদ হোক, সিটি করপোরেশন হোক। এটা অনেক বড় কর্মযজ্ঞ।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগেও বলা হয়েছিল- স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে করতে হয়তো পারব না। আর যেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল চায়- আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেখানে তো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তো কোনো সুযোগই নেই, প্রশ্নই নেই।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান হচ্ছে- আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যই এতদিন সংগ্রাম করেছি, ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য এতদিন সংগ্রাম করেছি, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আমরা গণঅভ্যুত্থান করিনি। জাতির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন করাই এখন নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ এবং প্রধান উপদেষ্টার ও এই সরকারের প্রধান কাজ। নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স থ য় কম ট র সদস য স ইস স ল হউদ দ ন আহম দ স ল হউদ দ ন আহমদ প রস ত ত ন র জন য ব এনপ র সমস ত
এছাড়াও পড়ুন:
৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।
নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।
পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।
সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসুনির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’
সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য
চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।
সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’
চাকসু ভবন