টাকা ও ক্ষমতা ব্যবহার করে দল গড়া মানুষ দেখতে চায় না: জোনায়েদ সাকি
Published: 27th, June 2025 GMT
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছে, ‘গণ–অভ্যুত্থানের পর মানুষ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সত্যিকার নেতৃত্ব দেখতে চায়। টাকা ও ক্ষমতা ব্যবহার করে দল গড়া মানুষ দেখতে চায় না। এমনকি যাঁরা আজকের তুর্কি–তরুণ, তাঁরাও অনেকে এই গড্ডালিকায় গা ভাসাবেন, এমনটা আশা করেনি কেউ। মানুষ ভরসা রাখতে চায়।’
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের জুলাই স্মৃতি হলে শ্রমিকনেতা ‘প্রয়াত মির্জা আবুল বশর স্মরণসভায়’ প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি এ কথা বলেন।
সভায় তিনি সংবিধানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কার বিষয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিয়ে সবাই এখনো ঐকমত্য হতে না পারলেও অগ্রগতির জায়গা রয়েছে। আবার কিছু মতপার্থক্যও আছে। অগ্রগতির দিকটা ছোট করার কিছু নেই। আবার যেসব বিষয়ে পার্থক্য আছে, যেসব বিষয়কে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি এবং অপরিহার্য মনে করি, সেসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। মানুষ সে লড়াই চায়। মানুষ চায়, তাদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক।’
গণ–অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, গণ-অভ্যুত্থান শেষ হয়ে যায়নি। এ দেশে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার হবে, এমনটা কেউ ভাবেনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজীবনে ১০ বছরের বেশি কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, সংসদের উচ্চকক্ষের গঠনপ্রকৃতি কী হবে, বিচার বিভাগ স্বাধীন কীভাবে হবে, এমন নানা বিষয়ে ঐকমত্য হচ্ছে।
মির্জা আবুল বশর স্মৃতি পরিষদ এ স্মরণসভার আয়োজন করে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রাম জেলা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম নির্বাহী সমন্বয়কারী মির্জা আবুল বশর। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে মির্জা আবুল বশরের রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, মির্জা আবুল বশর অত্যন্ত সৎ ও প্রজ্ঞাবান নেতা ছিলেন। মেহনতি মানুষের জন্য আমৃত্যু লড়াই করেছেন তিনি। অনেকে অনেক পেশা নেন, জীবনের ব্রত নেন, কর্তব্য ঠিক করেন। পরিবর্তনের জন্য কাজ করেন। এই কর্তব্য পালনের ডাকে আজকের তরুণেরা সাড়া দেবেন। তাঁরা টাকা কিংবা ক্ষমতার দাপটের কাছে পরাজিত হবেন না, বরং সেটাকে মোকাবিলা করে টিকে থাকবেন।
স্মরণসভায় ছাত্র, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন মির্জা আবুল বশরের আত্মীয়স্বজন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শুরু হওয়া এ সভা শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। সভার সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রামের আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এই ভাষণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একমত হওয়াকেই যদি সবার ঐকমত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তা এত দিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
বাম জোটের নেতারা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও একই কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সংস্কারটুকু করার সুযোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮০ দিন জাতীয় সংসদ দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলবে অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার যে কথা বলা হয়েছে; এটাও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে যে কথা প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, তা একদেশদর্শী ও সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে আদেশ জারি বা গণভোটের কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি কেবল অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।
বাম জোটের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণভোট ও আদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের (দ্বিমতের) উল্লেখ থাকছে না। ঐকমত্য কমিশনে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন—এ তথ্যও সঠিক নয়। ৩০টি প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ১১টির বেশি নয়।
এ ছাড়া বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর নির্মাণ এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের প্রকল্পে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করে আগের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।’
বাম জোটের নেতাদের বিবৃতিতে উঠে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি। তাঁরা বলেন, মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ বাম জোটের নেতাদের।
গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে বাম জোটের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।