ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় আইন হচ্ছে, জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠনের চিন্তা: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
Published: 28th, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় নতুন ‘পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন আইন’ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে তথ্যের অপব্যবহার ঠেকাতে ‘ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি’ গঠনের কথাও ভাবা হচ্ছে।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) সেমিনারকক্ষে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতিপ্রকৃতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ কথা বলেন। সেমিনারটি আয়োজন করে পিআইবি।
সেমিনারে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, সরকার এমন একটি আইনি কাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য—যেমন এনআইডি, মুঠোফোন নম্বর, লোকেশন, বায়োমেট্রিক, ছবি, ভিডিও, যোগাযোগের ইতিহাস—এসব স্পষ্ট শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে পড়বে। এসব তথ্যকে ‘রেস্ট্রিক্টেড, কনফিডেনশিয়াল, প্রাইভেট ও পাবলিক’ এই চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, রেস্ট্রিক্টেড তথ্য, যেমন জাতীয় নিরাপত্তা, সামরিক বা পররাষ্ট্রসংক্রান্ত, সেগুলো দেশের বাইরে সংরক্ষণ একেবারেই নিষিদ্ধ থাকবে। কনফিডেনশিয়াল তথ্য, যেমন হেলথ রেকর্ডস বা ফিন্যান্সিয়াল ডেটা, ব্যবহার করা যাবে নির্ধারিত শর্তে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
বিদেশি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ তথ্য দেশের বাইরে নিতে না পারে, সে জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আনা হচ্ছে বলেও সেমিনারে জানান ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, ‘নতুন আইনের পর যদি কেউ ডেটা প্রক্রিয়া করতে চায়, তাহলে তাঁকে বাংলাদেশেই ডেটা স্টোরেজ অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের প্রয়োগ ও তদারকির জন্য সরকার একটি ‘ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স অথরিটি’ গঠনের চিন্তা করছে বলে জানান ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান, কী ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করবে, সে বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হবে এর কাজ। কোন ধরনের সফটওয়্যার বা ভেন্ডর ব্যবহার করা যাবে, তা নির্ধারণ করা; সরকারের মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো যেন নিরাপদভাবে তথ্য প্রক্রিয়া করে, তা নিশ্চিত করা এবং তথ্য ফাঁস বা অবৈধ স্থানান্তর রোধে নজরদারি চালাবে এই কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনভাইরাল ঘটনার খবর গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার হয়: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব১ ঘণ্টা আগেদেশে বহু প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের কোনো সুরক্ষিত ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানে অননুমোদিত ভেন্ডর ও কনসালটেন্টের মাধ্যমে এসব তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে ডার্ক ওয়েবে।’
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষের এনআইডি, ফোন নম্বর, ঠিকানা ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এসব তথ্য দিয়ে ফেক এনআইডি তৈরি করে জালিয়াতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এই ঝুঁকি আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।
নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।
পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।
সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসুনির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’
সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য
চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।
যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।
সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’
চাকসু ভবন