বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমরা জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও যোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দিতে চাই। এই জুলাই-আগস্টেই তাদের সম্মান দিতে হবে।’

শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভা ও বিশেষ অনুষ্ঠানের ভেন্যু পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে ১ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে সেখানে বিশেষ অনুষ্ঠান হবে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক সংকট রয়েছে। মব কালচার আছে। এসব থেকে মুক্ত হতে হবে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত অগণতান্ত্রিক সরকার দেশের অর্থ লোপাট করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে, যার অন্যতম নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়া। তারা কখনও প্রকৃত গণতন্ত্র চায়নি। জনগণ মনে করে ড.

মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর মনের প্রত্যাশা মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবকে স্মরণীয় করে রাখতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমাদের দাবি ও প্রত্যাশা– খুব শিগগিরই শেখ হাসিনার বিচারকাজ দৃশ্যমান হবে। জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই নির্বাচনে জনগণের দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয়লাভ করবে এবং জনগণের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব ও গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিব, ড. মাহদী আমিন, ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন পুতুল।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

মামদানির জয় থেকে ডেমোক্র্যাটরা কি শিক্ষা নেবেন

ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। পার্টি চাইলে আগের মতোই এমন সব নীতি চালিয়ে যেতে পারে, যেসব নীতি বস্তাপচা ও পক্ষপাতদুষ্ট অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আঁকড়ে বসে আছে। চাইলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেই ৬০ শতাংশ মানুষের কষ্টকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়েও চলতে পারে, জীবন চালাতে হিমশিম খাওয়া যে মানুষগুলো সপ্তাহ শেষে বেতন পাওয়ার পরের দিনই পরবর্তী বেতনের জন্য দিন গোনে। 

ডেমোক্র্যাটরা চাইলে সেই তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নকে অবহেলা করতে পারেন, যে প্রজন্ম সম্ভবত তাদের মা-বাবার চেয়েও খারাপ সময়ের মুখোমুখি হবে। তাঁরা চাইলে কোটি কোটি ডলার চাঁদা দেওয়া ধনকুবের আর বাস্তবতা না-জানা সেই পরামর্শকদের ওপর নির্ভর করে চলতে পারেন, যাঁরা লাখ লাখ ডলার খরচ করে দলের প্রচারে একঘেয়ে, ক্লিশে ও সাধারণ মানুষের কাছে গুরুত্বহীন ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন বানান। 

ডেমোক্র্যাটরা চাইলে সেই ভয়াবহ বাস্তবতাকেও এড়িয়ে যেতে পারেন, যে বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি নাগরিক গণতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কারণ, তারা অনুভব করে না যে সরকার তাদের জীবনযন্ত্রণা বোঝে বা কোনো সমাধান দিতে চায়। অথবা ডেমোক্র্যাটরা চাইলে জোহরান মামদানির মঙ্গলবারের বিজয় থেকে একটি শিক্ষা নিতে পারেন। সেই শিক্ষা হলো, মানুষের মুখোমুখি হয়ে প্রকৃত অর্থনৈতিক ও নৈতিক সংকটগুলো সাহস করে তুলে ধরতে হবে। সেই সঙ্গে ধনিক শ্রেণির লোভ ও ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং এমন একটি কর্মসূচির পক্ষে লড়তে হবে, যা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনকে উন্নত করতে পারে।

মোদ্দাকথা, ডেমোক্রেটিক পার্টির সামনে এখন দুটি রাস্তা। একটি হলো পুরোনো ভুল পথে চলতে থাকা; আরেকটি হলো, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নতুন কিছু করা। অনেকে বলছেন, মামদানির বিজয় কেবল তাঁর ব্যক্তিত্ব আর ক্যারিশমার ফল। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি এক চমৎকার প্রার্থীর উদাহরণ। কিন্তু শুধু ভালো প্রার্থী থাকলেই এমন বিজয় আসে না। জয়ের পেছনে থাকতে হয় অসাধারণ এক তৃণমূল আন্দোলন। হাজার হাজার মানুষ যদি আগ্রহ নিয়ে দরজায় দরজায় গিয়ে তাঁর পক্ষে প্রচার না করত, তবে এমন জয় সম্ভব হতো না। 

বর্তমান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা মামদানির নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শিক্ষা নেবেন কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। সম্ভবত নেবেন না। কারণ, তাঁদের অনেকেই এমন অবস্থায় আছেন, যেখানে তাঁরা নিজেরাই সেই ডুবতে থাকা জাহাজ ‘টাইটানিক’-এর ক্যাপ্টেন হয়ে থাকতে চান; কিন্তু দিক পরিবর্তন করতে চান না।

আর এই আন্দোলন গড়ে ওঠে তখনই, যখন এর পেছনে থাকে এমন একটি অর্থনৈতিক কর্মসূচি, যা সাধারণ মানুষের প্রয়োজন আর কষ্টের কথা বলে। নিউইয়র্কের মানুষ এবং গোটা আমেরিকান জনতা জানে, এই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত একটি দেশে কারও জন্য শুধু খাওয়া, ঘরভাড়া দেওয়া বা ডাক্তার খরচ মেটাতে যুদ্ধ করার মতো কষ্ট করা উচিত নয়।

ডেমোক্রেটিক পার্টির পেইড কনসালট্যান্টরা হয়তো জানেনই না, এই সাধারণ মানুষগুলো আসলে কী চায়, তারা কোথায় থাকে। মামদানির ‘চরমপন্থী’ বা ‘অবাস্তব’ অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু তৃণমূল মানুষ জানে, এই নীতিগুলো আসলে তাদেরই কথা বলছে।

আজকের দুনিয়ায় যেখানে ধনী আর সাধারণ মানুষের মধ্যে আয় ও সম্পদের পার্থক্য ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে, সেখানে ধনী ব্যক্তি আর বড় করপোরেশনগুলোর উচিত তাদের ন্যায্য পরিমাণ কর দেওয়া। মামদানির মতো নেতাদের দাবি এটিই। যখন অনেক নিউইয়র্কবাসী আর সস্তায় ভাড়া বাসা খুঁজে পাচ্ছে না, তখন ভাড়া না বাড়ানোর জন্য একটি স্থগিতাদেশ দরকার—এটিও মামদানির দাবি। যখন একজন শ্রমিকের প্রতিদিন কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পেছনে বেতনের একটি বড় অংশ চলে যায়, তখন গণপরিবহন বিনা মূল্যের হওয়া উচিত। এটিও মামদানির ভাবনা। 

আরও পড়ুনজোহরান মামদানি যেভাবে ইতিহাস বদলে দেওয়ার পথে২৬ জুন ২০২৫

যখন অনেক নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া পরিবার ভালো খাবার কিনতে পারছে না; তাদের জন্য সরকার পরিচালিত পাড়াভিত্তিক মুদিদোকান প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এই দাবিও এসেছে তাঁর পক্ষ থেকে। এসব দাবি শুনে অনেকেই বলবে ‘চরমপন্থী’। কিন্তু আসলে এগুলো খুবই সাধারণ মানুষের বাস্তব চাহিদা। হ্যাঁ, ধনীরা বা বড় দাতারা বা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা হয়তো এসব চান না। কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ঠিক এই জিনিসগুলোই চায়। তাই হয়তো এখন সময় এসেছে এই মানুষগুলোর কথা শোনার। 

মামদানির জয় কোনো তারকাখ্যাতির জন্য হয়নি। এটি হয়েছে সাধারণ মানুষের শক্তিতে। এই আন্দোলন মানুষকে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে, গণতন্ত্র মানে কেবল ভোট নয়, বরং নিজের জীবনে যেসব সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলে, সেগুলো নিয়ে কথা বলার অধিকার দাবি করাও গণতন্ত্র। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মামদানি সেই নৈতিক প্রশ্ন থেকে পালিয়ে যাননি, যা শুধু নিউইয়র্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কোটি মানুষের মনে আঘাত দিচ্ছে। সেটি হলো ইসরায়েলের চরমপন্থী নেতানিয়াহুর সরকারের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র যেন সামরিক সহায়তা না দেয়। গাজার শিশুদের অনাহারে মারা যাওয়া কেউ চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে পারে না।  

মামদানি জানেন, আসলেই, ইহুদিবিদ্বেষ (অ্যান্টিসেমিটিজম) একটি জঘন্য ও বিপজ্জনক চিন্তাধারা। কিন্তু নেতানিয়াহুর মতো একজন নেতার অমানবিক নীতির সমালোচনা করা মানেই ইহুদিবিদ্বেষ নয়। মামদানির নির্বাচনী লড়াই আমাদের শেখায়, শুধু ট্রাম্পের বা তাঁর ধ্বংসাত্মক নীতির সমালোচনা করলেই চলবে না; আমাদের দরকার একটি ইতিবাচক ভবিষ্যৎ চিন্তা। দরকার এ প্রশ্নের জবাব—এই পরিস্থিতি কেন হলো, কেন আজ অধিকাংশ আমেরিকান পিছিয়ে পড়ছে?

বর্তমান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা মামদানির নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শিক্ষা নেবেন কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। সম্ভবত নেবেন না। কারণ, তাঁদের অনেকেই এমন অবস্থায় আছেন, যেখানে তাঁরা নিজেরাই সেই ডুবতে থাকা জাহাজ ‘টাইটানিক’-এর ক্যাপ্টেন হয়ে থাকতে চান; কিন্তু দিক পরিবর্তন করতে চান না। তবে তাঁরা কী ভাবছেন, সেটা এখন খুব একটা গুরুত্বপূর্ণও নয়। কারণ, মামদানির বিরুদ্ধে এই ‘সিস্টেম’-এর পক্ষ থেকে সবকিছুই মাঠে নামানো হয়েছিল। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সুপার প্যাক অর্থায়ন, নামীদামি মানুষের সমর্থন, পক্ষপাতদুষ্ট গণমাধ্যম—সব নামানো হয়েছিল। তবু তাঁরা মামদানিকে হারাতে পারেননি।

বার্নি স্যান্ডার্স মার্কিন সিনেটর এবং সিনেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম ও পেনশন-সংক্রান্ত কমিটির প্রধান সদস্যদের একজন

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনড় অবস্থান নয়, নমনীয়তাই রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি
  • একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার দিকে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা
  • বিরোধী দল নিষিদ্ধ করে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব নয়
  • নির্বাচন বিলম্বে কৌশল খুঁজছে কিছু দল: আসাদুজ্জামান
  • মামদানির জয় থেকে ডেমোক্র্যাটরা কি শিক্ষা নেবেন
  • বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
  • গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে ‘জনগণ’ কীভাবে কথা বলবে
  • নেই অফিস, নিবন্ধনের আড়ালে লোক দেখানো রাজনীতি!
  • তরুণদের নিয়ে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে: ড. কামাল হোসেন