ট্রাম্পের ‘দুঃস্বপ্ন’ জোহরান কি রিপাবলিকানদের জন্য আশীর্বাদও হয়ে উঠতে পারেন
Published: 28th, June 2025 GMT
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে চার দিন আগে ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি ম্যানহাটনে জনসংযোগ করছিলেন। তিনি ম্যানহাটনের ইনউড হিলপার্ক থেকে স্ট্যাটেন আইল্যান্ড টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ১৩ মাইল বা ২১ কিলোমিটার হাঁটলেন। ওই দিন হাঁটার পর তিনি বললেন, ‘নিউইয়র্কবাসীর এমন একজন মেয়র দরকার, যাঁকে তাঁরা দেখতে পারবেন, তাঁর কথা শুনতে পারবেন, এমনকি তাঁর সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলতে পারবেন।’
জোহরানের এই কর্মসূচি বিখ্যাত সাবেক মেয়র এড কোচকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি প্রায়ই মানুষকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘আমি কেমন কাজ করছি?’ তাঁর প্রশ্ন শুনে এলাকা আর বছর ভেদে কেউ তাঁর প্রশংসা করতেন, কেউ গালাগাল করতেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ২৪ জুন দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে জিতে, দলের প্রতিষ্ঠিত প্রার্থীদের হারিয়ে জোহরানকে এখনই নিউইয়র্কের মেয়রের মতো লাগছে।
মাত্র কয়েক মাস আগেও জোহরানের এলাকার বাইরে খুব কম লোকই তাঁকে চিনতেন। গত অক্টোবরে যখন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেন, তখন তাঁর প্রতি ভোটারদের সমর্থন ছিল ১ শতাংশেরও কম। অথচ তিনি হারিয়েছেন নিউইয়র্কের দুইবারের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে। মার্কিন রাজনীতিতে একসময় তাঁর বড় নাম ছিল। যিনি যৌন হয়রানির অভিযোগ ও কোভিডকালে নার্সিং হোমে মৃত্যুর সংখ্যা গোপন করার কেলেঙ্কারির মুখে পদত্যাগ করেছিলেন। অবশ্য এসব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
জোহরান একজন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট ও নিউইয়র্ক নগরের কুইন্স বরোর একটি অঞ্চল থেকে নির্বাচিত অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য। দলের সোশ্যালিস্টরা বামঘেঁষা হিসেবে পরিচিত।
জোহরানের এই জয় শুধু কুমোর বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি মূলধারার ডেমোক্রেটিক রাজনীতির প্রতিও একধরনের বিদ্রোহ। প্রাথমিক ভোটাররা সাধারণত দলের গড় ভোটারের চেয়ে বেশি বামপন্থী হয়ে থাকেন। কুমোর পক্ষে বিল ক্লিনটন আর ধনকুবের বিল অ্যাকম্যানের সমর্থন অনেক ভোটার নেতিবাচকভাবে দেখেছেন।
জোহরান মামদানি একজন অভিবাসী। নিউইয়র্ক নগরের মতো একটি বহুজাতিক শহর তাঁর পক্ষে গেছে। এই নগরের অন্তত ৪০ শতাংশ বাসিন্দাই অভিবাসী, যাঁদের বেশির ভাগের জন্ম বিদেশে।
জোহরান জন্মেছেন উগান্ডার কাম্পালায়, ছোটবেলা কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, এরপর ৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি একজন বিখ্যাত কলোনিয়ালিজম বিশেষজ্ঞ, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াতেন। মা মিরা নায়ার একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা। দুজনই গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সমালোচক।
জোহরানের জয়ে রিপাবলিকানরাও খুশি হয়েছেন। কারণ, তাঁদের ধারণা তাঁরা তাঁকে সহজ লক্ষ্য বানাতে পারবেন। কংগ্রেস সদস্য এলিস স্টেফানিক বলেন, ‘জোহরান রিপাবলিকানদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিপক্ষ।’ ট্রাম্পও সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জোহরানকে ‘শতভাগ পাগলাটে কমিউনিস্ট’ বলে উল্লেখ করেন।জোহরানও বাবা–মায়ের মতো ইসরায়েলের নীতির সমালোচক। কলেজে পড়ার সময় ফিলিস্তিনপন্থী একটি গ্রুপ গড়ে তোলেন। সম্প্রতি তিনি ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা’ বাক্যটির নিন্দা করেননি। অনেক ইহুদি এই বাক্যটিকে সহিংসতার আহ্বান বলে মনে করেন। তবে জোহরান বলেছেন, এটা সহিংসতা নয় বরং ফিলিস্তিনিদের সমতা ও অধিকার চাওয়ার প্রকাশ। তবে নিউইয়র্কের বাসিন্দা অনেক ইহুদি তাঁর যুক্তি মেনে নেননি।
রাজনীতিতে আসার আগে জোহরান কিছুদিন ‘মি.
জোহরান অকপটভাবে বামঘেঁষা। তিনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য, যাঁরা মনে করেন, সমাজ পরিচালনায় মুনাফার বদলে মানুষের প্রয়োজনকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তাঁর প্রচারের মূল বিষয়বস্তু ছিল—‘সাশ্রয়ী জীবন’। তিনি নগরের বাসভাড়া ফ্রি করতে চান, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ করতে চান, গরিব এলাকায় নগরের পক্ষ থেকে মুদি দোকান চালু করতে চান এবং ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপ করতে চান। তাঁর করারোপের বিষয়টি নিউইয়র্কের অনেক ব্যবসায়ীকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে।
তবে জোহরান কেবল বামঘেঁষাই নন, বরং অনেকের কাছে যথেষ্ট পছন্দের ব্যক্তিত্বও। ম্যানহাটন ইনস্টিটিউটের জেসি আর্ম বলেন, তাঁর সাফল্যের কারণ শুধু তাঁর মতাদর্শ নয়, বরং তাঁর আধুনিক, সামাজিক মাধ্যমে দক্ষ রাজনৈতিক কৌশল। তাঁর নির্বাচনী প্রচার ইতিবাচক, সাধারণ মানুষের ভাষায়।
জেসি আর্ম বলেন, অন্যদিকে কুমোর প্রচার ছিল বিরল ও যন্ত্রসিদ্ধ। জোহরানের পক্ষে ৪৬ হাজার মানুষ মাঠে নেমেছিলেন। তিনি তরুণদেরও টেনেছেন, মাঝারি বয়সী ভোটারদেরও। এমনকি ২০২৪ সালে যেসব এলাকায় ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন, সেখানেও তিনি জিতেছেন। যেমন কুইন্সের হিলসাইড বা স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের টটেনভিল।
জোহরান নিজেকে একজন প্রগতিশীল, মুসলিম অভিবাসী হিসেবে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি এমন একজন রাজনৈতিক নেতা, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (মাগা) আন্দোলনের উগ্রতা মোকাবিলায় যাঁকে ডেমোক্র্যাট অনেক দিন ধরে খুঁজছিল।
জোহরানের বড় বাধা হয়ে উঠতে পারেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস। তিনি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন হারিয়েছেন। অবশ্য পরে ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে জানিয়েছেন। কুমোও এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই প্রার্থী থাকছেন।তবে জোহরানের জয়ে রিপাবলিকানরাও খুশি হয়েছেন। কারণ, তাঁদের ধারণা তাঁরা তাঁকে সহজ লক্ষ্য বানাতে পারবেন। কংগ্রেস সদস্য এলিস স্টেফানিক বলেন, ‘জোহরান রিপাবলিকানদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিপক্ষ।’ ট্রাম্পও সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জোহরানকে ‘শতভাগ পাগলাটে কমিউনিস্ট’ বলে উল্লেখ।
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মেয়র নির্বাচনে জোহরানের প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। তিনি ১৯৭০-এর দশকে অপরাধপ্রবণ নিউইয়র্কে ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস’ নামে একধরনের নিরাপত্তা গ্রুপ চালু করেছিলেন। ২০২১ সালে মেয়র পদে লড়লেও তিনি এরিক অ্যাডামসের কাছে হেরেছিলেন।
তবে জোহরানের বড় বাধা হয়ে উঠতে পারেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস। তিনি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন হারিয়েছেন। অবশ্য পরে ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে জানিয়েছেন। কুমোও এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই প্রার্থী থাকছেন।
জোহরান নির্বাচিত হলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক নগরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র, সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র এবং বহু দশকের মধ্যে প্রথম অভিবাসী মেয়র। এই সবকিছুর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকালে তিনিই হবেন বামঘেঁষা রাজনীতির প্রথম বড় মুখ। এখনো স্পষ্ট নয়, জোহরানের মতো ডেমোক্র্যাটরা দলটিকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যাবেন, নাকি আরও গভীর অন্ধকারে নিয়ে যাবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বতন ত র প র র থ ন উইয়র ক র র প বল ক ন র ক নগর র র জন ত প রব ন প রথম সবচ য় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়ির ঘটনায় জাতিসংঘকে যুক্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনার তদন্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের একজন সদস্যের সমন্বয়ে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে অনতিবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। একই সঙ্গে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে তারা।
আজ বুধবার ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথের পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে, আদিবাসী কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের জন্য দায়ী দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার না করে বরং খাগড়াছড়ির নিরীহ ও নিরস্ত্র জুম্ম জনগোষ্ঠীর ওপর সশস্ত্র হামলা করা হয়েছে। এতে ৩ জন নিহত, অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উসকানিমূলক বক্তব্য খাগড়াছড়িসহ গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বিবৃতিতে ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে অন্যূন এক কোটি টাকা করে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে অন্যূন পঁচিশ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও সরকারি খরচে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবিও জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ।