এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় সেবা, কাজে যোগ না দিলে কঠোর ব্যবস্থা: সরকারের বিবৃতি
Published: 29th, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সংস্থাটির আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সরকার বলেছে, কাজে যোগ না দিলে দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হবে। আজ রোববার সরকার এক বিবৃতিতে এমনটা জানিয়েছে।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, অতি জরুরি আমদানি-রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কার্যক্রম চলমান রাখার জাতীয় স্বার্থে সরকার এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস বা সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার আশা প্রকাশ করে বলেছে, অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ অনেক কম। এর মূল কারণ হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার নানা দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী এনবিআর পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নজিরবিহীনভাবে ২ মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থবছরের শেষ ২ মাসে আন্দোলনকারীরা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থী। সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বিবেচনায় নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয় এবং আলোচনায় আসার আহ্বান জানালেও তাঁরা তা অগ্রাহ্য করেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে তাঁরা আন্দোলনের নামে অনমনীয় অবস্থান নিয়ে ক্রমাগত দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে চলেছেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা এই কর্মসূচির কারণে গতকাল শনিবার থেকে ঢাকার এনবিআর ভবন থেকে শুরু করে সংস্থাটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর এবং ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সব ধরনের শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ব যবস থ সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়: ফরহাদ মজহার
গণ-অভ্যুত্থানের পর পতিত সরকারের সংবিধান ও আমলাতন্ত্র রেখে দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। বর্তমান সরকারের বৈধতা নিশ্চিত না করে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং নির্বাচন আয়োজনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার এ কথা বলেন।
ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে মুক্ত না হলে নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কোনো অর্থ নেই বলে মনে করেন এই চিন্তক। উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি তো গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছেন, আপনি গণ-অভ্যুত্থানের কেউ নন। আমি আবারও বলছি এখানে ভুল বোঝার কোনো অপশন নেই। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের কেউ নন। এখানে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা অনেকে সরাসরি গণ-অভ্যুত্থানে রাস্তায় ছিলেন, বুক পেতে দিয়েছেন। আমরা বছরের পর নির্যাতিত হয়েছি। আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি।’
এরপরও অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে গ্রহণ করা হয়েছে এবং কোনো বিরোধিতা করছেন না উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘কিন্তু তিনি (ইউনূস) গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় বোঝেননি। এখন তিনি যে জায়গায় গিয়েছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাঁর প্রথম ভুল তিনি এসেই তরুণ শিক্ষার্থীদের মাস্টারমাইন্ড বলে পরিচয় করিয়েছেন। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের সত্তা হচ্ছে জনগণ, কোনো ব্যক্তি নয়। সবাই মিলে এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে।’
সফল নির্বাচন আয়োজন নিয়ে শঙ্কাএই চিন্তক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর প্রথম কাজ হওয়া দরকার ছিল ফ্যাসিস্ট সরকার এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উৎখাত করা। তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থানে অনেকে শহীদ হয়েছেন এবং অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রতি তাঁর প্রশ্ন, ‘এত বড় আত্মত্যাগের পরে আপনি কিসের ভিত্তিতে নির্বাচনের কথা শুরু করলেন?’
নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সফল নির্বাচনের কোনো লক্ষণ দেখছি না। আপনি কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন দিচ্ছেন? দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ফেলে দেবেন না। আপনার যে জনপ্রিয়তার হ্রাস হয়েছে, এটা আমাদের জন্য বিপজ্জনক। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
এই চিন্তক বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক দল মানে যারা জনগণের সেবা করে, জাতিকে যারা পথ দেখায়, নতুন কথা বলে। এখানে যেটা আছে, সেটা লুটেরা শ্রেণি, দুর্নীতিবাজ। তাদের সঙ্গে আপনি কথা বলেছেন, জনগণের সঙ্গে কথা বলতে বলেননি।’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক দল মানে যারা জনগণের সেবা করে, জাতিকে যারা পথ দেখায়, নতুন কথা বলে। এখানে যেটা আছে, সেটা লুটেরা শ্রেণি, দুর্নীতিবাজফরহাদ মজহার, কবি ও চিন্তকশেখ হাসিনার সংবিধান রেখে সে সংবিধানের অধীনে শপথ নেওয়ার সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনি একটা অবৈধ সরকার। তবে অবৈধ সরকার বলার মানে এই না যে আপনাকে আমরা চাই না। এর মানে হচ্ছে, আপনার প্রথম কাজ নিজের বৈধতা নিশ্চিত করা।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করেছি আপনার যেন মতি হয়। আপনি যেন রাজনীতি কাকে বলে, এটা বোঝেন; আইন কাকে বলে, বোঝেন। কারণ, রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো না।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, জনগণ কী চায়, নতুন গঠনতন্ত্র চায় কি না। কিন্তু জনগণকে বঞ্চিত করে মাফিয়া শ্রেণির সঙ্গে কথা বলছেন। বিদেশ থেকে লোক এনে বসানো হয়েছে, যাঁরা বিদেশে কাজ করেছেন করপোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য।
তরুণেরা মন্ত্রণালয় চালাতে পারেনিএই চিন্তক বলেন, কিছু তরুণ ছাত্রদের মন্ত্রণালয়ে নিয়েছেন, এ জন্য অভিনন্দন। কিন্তু মন্ত্রণালয় তারা চালাতে পারেনি। তরুণেরা দেশ চালাবে, এটাই তো স্বপ্ন। কিন্তু তরুণদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করা হয়েছে। কারণ, শেখ হাসিনার আমলাতন্ত্র রয়ে গেছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে দলের নাম পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার জানান, জামায়াতের অনেক ইতিবাচক ভূমিকা আছে। কিন্তু এই এক কালো দাগের জন্য আগামী দিনে যে সম্ভাবনা, নতুনভাবে ইসলামের যে পুনর্জাগরণ, তার সর্বনাশ হয়ে যাবে।
সভায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) মতো নির্বাচনে উপদেষ্টাদের যুক্ত হতে হয়। যখন ৩০০ আসনে নির্বাচনে হবে, তখন কী হবে?
কল রেকর্ড ফাঁসের ভয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফোনে কথা না বলে সরাসরি দেখা করে কথা বলেন—এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি কী এমন কথা বলেন। এখানে সন্দেহ করার মতো বিষয় আছে।
সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ও কূটনীতিক আবদুল্লাহ আল মামুন, আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাক, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার প্রমুখ।