ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ৯ নং দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভবন বেশ কয়েক দিন ধরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে  ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজমুল আহসান নান্টু মল্লিকের বিরুদ্ধে। যদিও তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে, ১০ দিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ তালাবদ্ধ থাকায় ইউনিয়নবাসী সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা। তিনি জানান, এরপরও তিনি প্রতিকার পাচ্ছেন না। তিনি আরো অভিযোগ করেন, চাঁদা না দিলে ‘মবসৃষ্টি করে’ তাকে প্রাণনাশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

আরো পড়ুন:

‘অনিয়ম’ এলজিইডির কাজে, পদত্যাগ করানো হলো ইউপি চেয়ারম্যানকে

গাজীপুরে ২২ ইউপির দায়িত্বে প্যানেল চেয়ারম্যান

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাজমুল আহসান নান্টু মল্লিকেরসহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা বলেন, ‘‘২০ জুন তারা আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন চাঁদা না দিলে রাস্তাঘাটে আমাকে পেলে মেরে ফেলবেন, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবেন। গত ২২ জুন অস্ত্রশস্ত্রসহ তারা দলবল নিয়ে মহড়া দেন এবং ২৩ জুন ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন। স্থানীয়রা আপত্তি জানালে তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।’’ 

অন্য অভিযুক্তরা হলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির ভাই ইকবাল মল্লিক, তাদের সহযোগী রিপমন মল্লিক, উজ্জল মল্লিক এবং জসিম হাওলাদার। 

দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড মেম্বার আয়শা আক্তার রিনা বলেন, ‘‘আমি জেনেছি বিএনপির লোকজন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এতে ইউনিয়ন পরিষদের জনস্বার্থের কাজ বন্ধ রয়েছে।’’  

ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার হারুন খন্দকার বলেন, ‘‘ইউনিয়ন পরিষদ তালাবদ্ধ থাকায় লোকজন সেবা পাচ্ছেন না। কী জন্য তালা ঝুলিয়েছেন তা জানি না। এ সব নিয়ে কথা বলতে যাওয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির কিছু লোকজন মিলে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।’’  

অভিযোগের বিষয়ে দপদপিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নান্টু মল্লিক বলেন, ‘‘ইউনিয়ন পরিষদ পাবলিক অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। বিনা ভোটের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর সারা বাংলায় একজনও নেই, উনি থাকবেন কিসের জন্য?’’ 

চেয়ারম্যানের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘অসম্ভব। আমার এলাকায় এসে জিজ্ঞেস করেন, প্রশাসনের কাছে জিজ্ঞেস করেন, ৫ আগস্টের পরে কোনো ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে একটি টাকার বিষয়েও অভিযোগ আনতে পারবেন না।’’  

নলছিটি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুর রহমান হেলাল খান বলেন, ‘‘কিছু ফ্যাসিস্ট তাড়াতে কিছু ত্যাগ করতে হয়। দপদপিয়া ইউনিয়নের বিষয়টি প্রশাসনিক ব্যাপার, এটি প্রশাসন দ্রুত সমাধান করবে বলে আশা করি।’’  

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি লিখিতভাবে অভিযোগ পাইনি। তবে মৌখিকভাবে খবর পেয়েছি, কিছু লোক ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। সেবা প্রত্যাশী বা অন্য কারো লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’ 

এ দিকে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধার অভিযোগপত্র দপ্তর গ্রহণ করেছে।

গত ২২ জুন সকালে দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ এবং গ্রেপ্তারের দাবিতে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের জিরো পয়েন্ট এলাকা অবরোধ করে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর পরপরই তারা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দপদপিয়া ইউনিয়নের সভাপতি। 

ঢাকা/অলোক/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ দপদপ য়

এছাড়াও পড়ুন:

আবার জনগণের ভোটাধিকার হরণের ষড়যন্ত্র চলছে: জামায়াত

আবারও দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণের পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জনগণের বিপরীতে দাঁড়াবেন না। আরেকটি এক-এগারোর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জামায়াতের এই নায়েবে আমির এ কথা বলেন। জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত।

আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘নির্বাচন যে তারিখে দিছে, এটা ঠিক আছে। আমরা তার আগেও নির্বাচন চাইছিলাম। ডিসেম্বর হলেও আমরা করতাম। মানুষ আশা করে, এবার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা ইলেকশন চাই, সিলেকশন চাই না।’

বিদেশের ডিজাইনে (ছকে) পরিকল্পিত নির্বাচনের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সমাবেশে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, দেশের মানুষ জীবন এবং রক্ত দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়, কিন্তু তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের জন্য আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সরকারকে আলোচনা টেবিলে বসার জন্য আহ্বান জানান জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, ‘দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবেন না। জনগণের বিপরীতে দাঁড়াবেন না। আরেকটি এক-এগারোর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না।’

আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদেরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে সবাই মিলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। অতীতের মতো অংশগ্রহণহীন নির্বাচন করলে এবার বাংলাদেশ টিকবে না, স্বাধীনতা টিকবে না।’

জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ তাহের বলেন, এই সরকারের প্রধান কাজ সংস্কার করা। তারা সংস্কারের জন্যই কমিশন তৈরি করেছে। সে কমিশনের সবাই ঐকমত্য হওয়ার পর সরকার বলে এটির আইনি ভিত্তি নেই। তাহলে সংস্কার হলো কোথায়? তিনি বলেন, যেসব বিষয় ঐকমত্য হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী নির্বাচন হতে হবে।

একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তারা পিআরের পক্ষে। কিন্তু আপনারা যাঁরা বিরোধিতা করছেন, আপনাদের কি বিরোধিতা করার অধিকার আছে?’

জামায়াতের সহকারী সেক্রটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেই দেখছি, কোনো কোনো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জিহ্বা কেটে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমরা লক্ষ করছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ঘোষণা করছেন; কিন্তু এখনো জিহ্বা কেটে নেওয়ার কথা বলা এই সন্ত্রাসীকে কেন গ্রেপ্তার করতে পারেননি?’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বিজয়নগর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কাকরাইল ও মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় নেতা-কর্মীদের হাতে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা চ্যালেঞ্জের
  • লাঙ্গল কাউকে দিতে চাইলেই আন্দোলন: জি এম কা‌দের
  • আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: জি এম কাদের
  • আবার জনগণের ভোটাধিকার হরণের ষড়যন্ত্র চলছে: জামায়াত
  • গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত ও ঢালাও অভিযোগের প্রতিবাদ সম্পাদক পরিষদের
  • আমরা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
  • জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চাইছে: তারেক রহমান
  • সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে: ফরহাদ মজহার
  • স্লোগাননির্ভর রাজনীতির যুগ শেষ: তারেক রহমান
  • ‘আমাদের অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় কেউ এমপি হতে পারেন না’