আদালতে চুপ মমতাজ, হাসিমুখে ছিলেন সাবেক এমপি তুহিন
Published: 30th, June 2025 GMT
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি মমতাজ বেগম ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাবিনা আক্তার তুহিনকে আজ সোমবার পৃথক মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। এসময় দেখা যায় আদালতে চুপচাপ ছিলেন মমতাজ আর হাসিমুখে ছিলেন সাবেক এমপি তুহিন। আদালতে সাবিনা আক্তার তুহিন কয়েকবার মমতাজ বেগমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাতে তিনি সাড়া দেননি।
পরে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার শাওন হত্যা মামলায় মমতাজ বেগমকে আদালতে তোলা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
মমতাজের মামলার সূত্রে জানা যায়, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর কোতোয়ালি থানার তাঁতীবাজার মোড়ে আন্দোলনে অংশ নেন শাওন মুফতি (২৩)। এদিন রাত সাড়ে ১১টায় আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত দেড়টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় নিহতের মা মাকসুদা বেগম গত ২৮ মে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এ মামলায় মমতাজ ১৪ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।
এদিন সকাল ১০টা ৩৩ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয় সাবেক এমপি মমতাজ বেগমকে। মুখে মাস্ক, হাতে হাতকড়া, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। কাঠগড়ায় উঠানোর পর পুলিশ হেলমেট জ্যাকেট ও হাতকড়া খুলে দেন। এসময় তিনি মুখ থেকে মাস্ক খুলে রাখেন। এরপর তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। বিচারক ১০টা ৩৮ মিনিটে এজলাসে আসলে সবাই চুপ থাকেন। মামলার শুনানি শুরু হলে মমতাজ বেগম নিশ্চুপ হয়ে শুনানি শুনছিলেন।
এদিন শুনানি চলাকালে সাবেক এমপি তুহিন মমতাজের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কোনো কথা বলেননি। এদিন শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নেও কোনো উত্তর দেননি মমতাজ। আদালতে শুনানি চলাকালীন সময়েও তিনি কোনো কথা বলেনি। এদিন তাকে বেশ বিমর্ষ দেখা যায়।
অন্যদিকে হাসিমুখে ছিলেন সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন। তিনি আদালতকে বলেন, আমার ওষুধ শেষ হয়ে গেছে ওষুধ প্রয়োজন।
আদালত চলাকালে তুহিনের শুনানির সময় তার আইনজীবী হোসেন শাহিন ওষুধ দেখিয়ে আদালতকে বলেন, উনার ওষুধ প্রয়োজন এগুলো দিতে হবে।
এসময় বিচারক বলেন, এখান থেকে ওষুধ দেওয়ার নিয়ম নেই। যথাযথ নিয়মে ওষুধ নিবেন। বাইরে থেকে দেওয়া যাবে না।
এসময় শুনানিতে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করলে তুহিন হাসি দিয়ে মাথা নাড়াতে থাকেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী যখন শুনানিতে কথা বলেন তখন তিনি মুচকি হাসি দেন এবং আগ্রহ সহকারে পিপির কথা শুনতে থাকেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাবেক এমপি তুহিনের উদ্দেশ্যে বলেন, সে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। বিভিন্ন মিটিং মিছিলসহ হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিল। তার বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য তার পরবর্তী রিমান্ড প্রয়োজন।
এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবী হোসেন শাহিন আদালতকে বলেন, একটা অনুমানের ওপর নির্ভর করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রিমান্ড চাইতে পারে না। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। এটা আইন লঙ্ঘন। তিনি বলেন, একজন পার্লামেন্ট সদস্যের কাছে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সুসমন্নিত থাকে। ভাবমূর্তি বিপন্ন হয় না। আমরা রিমান্ড বাতিলসহ জামিন চাই।
এর উত্তরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুকী বলেন, বিনা ভোটের পার্লামেন্ট মেম্বার তিনি। তার পক্ষে এত বলার কিছু নেই। সাবেক সিইসি যখন বলেছেন যে এটা ডামি নির্বাচন। সেখানে বিনা ভোটের পার্লামেন্ট মেম্বার ও শেখ হাসিনার সহচরকে এত ভালো প্রমাণের যৌক্তিকতা নেই।
এদিন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জুলাই আন্দোলনে হত্যা মামলায় শেরেবাংলা নগর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এসময় আদালত শেষে গারদে প্রবেশকালে সাংবাদিকদের তুহিন বলেন, ‘জয় বাংলা বলা কি অপরাধ? বিশ্ববাসীর কাছে বিচার চাই।’
এর আগে গত ২২ জুন গভীর রাতে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের আওনা গ্রামে বাবার বাড়ি থেকে তুহিনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এক দিনের রিমান্ডে মুরাদ
এদিন একই সঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার আব্দুল মোতালেব হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কার্যনির্বাহী সদস্য শাহে আলম মুরাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে গত ১৭ এপ্রিল সকালে উত্তরা এলাকা থেকে শাহে আলম মুরাদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
শাহে আলমের মুরাদের বিরুদ্ধে মোতালেব হত্যা মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে থাকা আবদুল মোতালেব নামের এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে ২৬ আগস্ট তার বাবা আব্দুল মতিন বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭৬ জনকে আসামি করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মমত জ ষ র আইনজ ব স ব ক এমপ ধ নমন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে মহাষ্টমীতে মণ্ডপ পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার
শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে মহাষ্টমীর দিন সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ও জেলা পুলিশ সুপার জসিম উদদীন।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তারা সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ও পঞ্চমীঘাটের পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “জেলার ২২৪টি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। আমরা বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে দেখছি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ রয়েছে। এটি আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরই প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। অতীতের মতো এখনো আমরা সেই ঐতিহ্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতেও এই ধারা বজায় থাকবে। বিশ্ববাসীর কাছে আমরা জানাতে চাই, আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির মূল শক্তি হলো সম্প্রীতি।”
জেলা পুলিশ সুপার জসিম উদদীন বলেন, “জেলার সাতটি থানায় উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি অন্য বাহিনীগুলোও নিরাপত্তায় অংশ নিয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। কোনো ধরনের আশঙ্কার খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি যোগ করেন, “বিসর্জন পর্যন্ত নিরাপত্তার এ ব্যবস্থা চলমান থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, এর ফলে আনন্দমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন সফলভাবে সম্পন্ন হবে।”
এসময় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জসিম উদদীন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর আয়াজ আব্দুল্লাহ,জেলা প্রশাসকের সহধর্মিণী মিসেস হেমা জেরিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নায়মা ইসলাম,সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার 'খ' আসিফ ইমাম, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বারদী শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম কমিটির ব্যবস্থাপক নয়ন চন্দ্র গোলদার, সভাপতি অশোক কুমার রায়, সেক্রেটারি শংকর কুমার দে, পঞ্চমীঘাট সার্বজনীন পূজা উদযাপন মণ্ডপ ও পানাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবু অমল পোদ্দার (সিআইপি) এবং মণ্ডপ কমিটির সভাপতি প্রদীপ পোদ্দার,বারদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুল হালিম, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল করিম,বারদী ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব দেলেয়ার হোসেন দুলু উপস্থিত ছিলেন।