৭ নং ওয়ার্ডে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচির উদ্বোধন
Published: 30th, June 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৭নং ওয়ার্ডের ভান্ডারী পুল চৌরাস্তায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র সহ-সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর জিএম সাদরিল।
অনুষ্ঠানে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নতুন সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করতে হবে, যাতে আওয়ামী লীগের কোনো দোসর দলে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জিএম সাদরিল প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াসউদ্দিনের অনুপস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আপনাদের প্রাণের নেতা গিয়াসউদ্দিন সাহেব এই প্রোগ্রামে আসার পথেই কেন্দ্র থেকে একটি জরুরি ফোন পান।
তাকে কেন্দ্রে তলব করা হয়েছে, তাই তিনি আসতে পারেননি। তিনি আমার মাধ্যমে আপনাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেছেন এবং কথা দিয়েছেন, ইনশাআল্লাহ অন্য কোনো প্রোগ্রামে আপনাদের সাথে এসে উপস্থিত হবেন।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে এই সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে উল্লেখ করে জিএম সাদরিল বলেন, “বিএনপি একটি বৃহত্তর দল। দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে যুদ্ধ করে বিএনপি আবারও দেশকে নতুনভাবে স্বাধীন করেছে।”
তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, “নতুন সদস্য নেওয়ার সময় বুঝে-শুনে নিবেন, যাতে আওয়ামী লীগের কোনো দোসর বিএনপিতে ঢুকতে না পারে। কারণ তারা দলে ঢুকলে বিএনপির বদনাম করবে।”
সাবেক এই কাউন্সিলর আগামী দিনের রাজনীতিতে যুব সমাজের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আপনারা যুব সমাজকে দলে টানার চেষ্টা করবেন, কারণ আগামী যুব সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ।”
বক্তব্যের শেষে তিনি নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া ৩১ দফা দাবি জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আপনারা মাঠে নেমে জনগণের দুঃখ-কষ্টগুলো শুনবেন এবং আমাদের তারুণ্যের অহংকার জনাব তারেক রহমানের দেওয়া ৩১ দফা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন।”
৭নং ওয়ার্ড বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জামান মির্জার সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন,থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হোসেন, সহ সভাপতি এস এম আসলাম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো.
এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন মহানগর যুবদলের সিনিয়র নেতা শাহজালাল কালু।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ অন ষ ঠ ন ন ত কর ম ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার প্রকৃত মালিক—জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলে, “আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি—যাতে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।”
বুধবার (১৩ আগস্ট) কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
ধসে পড়া অর্থনীতি প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে পুনরুদ্ধার হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা
অধ্যাপক ইউনূসকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিল মালয়েশিয়া
কুয়ালালামপুরে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসুস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরর কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ গ্রহণ করেন প্রফেসর ইউনূস।
সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, “এই স্বীকৃতি আমাকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গত বছর, বাংলাদেশের বহু তরুণ সাহসিকতার সঙ্গে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। শত শত ছাত্র-যুবক একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে—যেখানে প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারবে এবং ভয়, বৈষম্য ও অবিচার থেকে মুক্ত থাকবে।”
নতুন বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যত আশার নতুন অর্থ তৈরি করেছে। আজ আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি—যেখানে শাসনব্যবস্থা হবে ন্যায়সঙ্গত, অর্থনীতি হবে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবে সফল হওয়ার জন্য। আমাদের সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী রয়েছে।’
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে সংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “আমাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য বিস্তৃত পরিকল্পনা এবং এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। একটি শক্তিশালী ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।”
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা আগামী দিনের নির্মাতা। তোমাদের ভাবনা, সৃজনশীলতা এবং দায়িত্ববোধই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে—শুধু মালয়েশিয়ার নয়, সমগ্র বিশ্বের। স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে গিয়ে সবসময় মনে রেখো, প্রকৃত সাফল্য শুধু নিজের জন্য অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং কীভাবে তুমি অন্যদেরও তোমার সঙ্গে উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছো, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে সেরা উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারি তা হলো এমন এক পৃথিবী—যেখানে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না।”
তিনি বলেন, “তোমাদের সিদ্ধান্ত, কাজ এবং মূল্যবোধই নির্ধারণ করবে আমরা কোথায় যাব। তাই আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, বড় স্বপ্ন দেখো, সাহসীভাবে চিন্তা করো, এবং সেই অনুযায়ী কাজ করো। ভয় পেও না—প্রত্যেক ব্যর্থতাই সাফল্যের পথে একটি ধাপ মাত্র।”
পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত নেতার, প্রয়োজন সমস্যা-সমাধানকারীর- এ কথা উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “তোমাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা রয়েছে অসাধারণ কিছু করার—মানুষের সেবায় ব্যবসা গড়ে তোলার, জীবন বদলে দেওয়ার মতো নতুন ধারণা সৃষ্টির, অথবা এমন নীতি প্রণয়নের যা গোটা একটি সম্প্রদায়কে উন্নতির পথে নিয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “আজকের অন্যতম বড় বিপদ হলো—সম্পদ ক্রমশ কয়েকজন মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এর ফলে বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি হয়। আমাদের যা দরকার, তা হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি—যেখানে সম্পদ ন্যায্যভাবে ভাগ হবে এবং প্রত্যেক মানুষ মর্যাদা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচার সুযোগ পাবে।”
নিজের কর্মময় জীবনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূস বলেন, “আমার পথচলায়—অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করা থেকে শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালু করা থেকে সামাজিক ব্যবসার প্রচার—একটি বিশ্বাস সবসময় আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, মানুষ প্রতিভা বা স্বপ্নের অভাবে দরিদ্র নয়, তারা দরিদ্র কারণ ব্যবস্থা তাদের ন্যায্য সুযোগ দেয়নি। আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা ধনীদের সেবা করার জন্য গড়ে উঠেছে, গরিবদের জন্য নয়। এই সহজ সত্যই আমাকে ভিন্ন কিছু চেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছি, যেখানে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষও ক্ষুদ্রঋণ পেতে পারে, ব্যবসা শুরু করতে পারে এবং নিজের জীবন বদলে দিতে পারে।”
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দুই দেশ সবসময়ই দৃঢ় সম্পর্ক ভাগাভাগি করেছে—যা গড়ে উঠেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং উন্নতির যৌথ স্বপ্নের ওপর।”
তিনি বলেন,“ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া অনেক পথ একসঙ্গে হেঁটেছে। আমরা পরস্পরের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির পথে সহযোগিতা করেছি। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে মালয়েশিয়া আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে। বছরের পর বছর ধরে আমাদের অংশীদারিত্ব বাণিজ্য, শিক্ষা, উদ্ভাবন ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কসহ বিস্তৃত হয়েছে নানা ক্ষেত্রে। এটি প্রমাণ করে, আমরা যখন একটি যৌথ উদ্দেশ্যে একসঙ্গে কাজ করি, তখন কত কিছু অর্জন করা সম্ভব।”
মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এখন এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে, আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করতে চাই। সম্ভাবনাময় অনেক ক্ষেত্র রয়েছে—যেমন সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, হালাল অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন। একসঙ্গে আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি—যা হবে সমৃদ্ধ, উদ্ভাবনী, স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক।”
সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করায় মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমি এটি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করছি এবং আমাদের দুই মহান জাতির মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় করার জন্য নতুন করে অঙ্গীকার করছি। আমি পারস্পরিক শিক্ষা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করি, যাতে আমরা একসঙ্গে এমন এক বিশ্ব গড়তে পারি—যেখানে প্রত্যেক মানুষ, তার পটভূমি যাই হোক না কেন, নিজের সামর্থ্য বিকশিত করার সুযোগ পাবে।”
তথ্যসূত্র:বাসস
ঢাকা/ইভা