জুলাই বিপ্লবকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ ঘোষণা ষড়যন্ত্র: বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ
Published: 1st, July 2025 GMT
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ রেজিমের বিরুদ্ধে চব্বিশের ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক সংগ্রামকে ‘জুলাই বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে সরকার ঘোষিত জুলাই অভ্যুত্থানের কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। একইসঙ্গে সংগঠনটি পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ১৪ জুলাই ‘বিপ্লব দিবস’ ও ৫ আগস্ট ‘বিজয় দিবস’ পালন করবে বলে জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের অন্যতম প্রধান গৌরবময় অধ্যায় জুলাই বিপ্লব। এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা, তার আগের ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা সেই সময়ের প্রজন্মগুলোর কাছে যে গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে, আমাদের প্রজন্মের কাছে চব্বিশের জুলাই বিপ্লব তেমন গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। কারণ এ বিপ্লবের রক্তাক্ত লড়াইয়ের বীরত্ব ও তাবেদার ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করার সাফল্য আমাদের রাজনৈতিক কর্তা সত্ত্বায় পরিণত করেছে। এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তনের ম্যান্ডেট তথা এখতিয়ার, অধিকার ও সুযোগ আমাদের অপরিহার্য হকে পরিণত হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাবির ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
ঢাবিতে নবীনদের আবাসন সংকট নিরসনে ছাত্র শিবিরের ৪ দাবি
তিনি আরো বলেন, “শব্দ শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রাজনীতিরও হাতিয়ার। একটি ঘটনাকে কী নামে ডাকা হবে, তার ওপর নির্ভর করে এর ভবিষ্যৎ গতিপথ ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন। যেমন জুলাইকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ শব্দ দিয়ে আখ্যায়িত করে একে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রেজিমের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের গণঅসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ বোঝানো হয়েছে। এর মাধ্যমে হাসিনা রেজিমের পতনে আমাদের যে সাফল্য, তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা একটি প্রজন্ম যে দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রতাপশালী ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে পুরোপুরি পরাজিত করে ৫ আগস্ট বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে নিজেদের বাসনা অনুযায়ী গড়ে তোলার ম্যান্ডেট অর্জন করেছি, তা গণঅভ্যুত্থান নামক শব্দে স্বীকৃত হয় না।”
আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিপ্লবী তরুণ প্রজন্মকে রাষ্ট্র পুনর্গঠন তথা নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বঞ্চিত করতেই জুলাই বিপ্লবকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ বলছে। তারা নিজেদের পছন্দের পুরনো ফ্যাসিবাদী সংবিধান ও রাজনৈতিক কাঠামোয় ফিরে যাওয়ার পথ সুগম করতে চায়। এজন্য গত ১০ মাস ধরে তারা সংবিধান সংশোধন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর করাসহ লোক দেখানো কিছু সংস্কার করে জাতীয় ঐকমত্যের নামে সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ তৎপরতা মূলত আমাদের তরুণ প্রজন্মের মহান অর্জন জুলাই বিপ্লবকে বেহাত করার ফন্দি।”
আব্দুল ওয়াহেদ আরো বলেন, “আমরা পরিষ্কার করে বলছি, জুলাই বিপ্লবকে গণঅভ্যুত্থান নাম দিয়ে এবং বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষাকে সংস্কারের মুলা দেখিয়ে আমাদের থেকে ছিনতাই করা যাবে না। আমাদের নিজেদের অনভিজ্ঞতা, বিভক্তি, সংগঠিত হতে না পারার দুর্বলতা সত্ত্বেও জুলাই বিপ্লব আমাদের মাঝে আছে ও থাকবে।”
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় দানব শেখ হাসিনাকে হটিয়ে দিয়েছি, তার বন্দুক থামিয়ে দিয়েছি। এখন আমাদের সামনে বাধা হলো পুরনো ফ্যাসিস্ট সংবিধান, পুরনো শাসন কাঠামো ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা। বিগত ১৬ বছর হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন জারি রাখতে এসব কিছু নিয়োজিত থাকায় জুলাই বিপ্লব শতভাগ বাস্তবায়নের স্তরে এসব উপড়ে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ তৈরি হওয়ার আগে জুলাই বিপ্লব জারি থাকুক, এটিই আমাদের প্রজন্মের চাওয়া।”
সংবাদ সম্মেলনে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ঘোষিত গণঅভ্যুত্থান বার্ষিকী পালনকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জুলাই বিপ্লব উদযাপনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচিগুলো হলো- ১৪ জুলাই বিপ্লব দিবস, ১৫ জুলাই নারী প্রতিরোধ দিবস, ১৬ জুলাই শহীদ দিবস, ১৮ জুলাই গণপ্রতিরোধ দিবস, ১৯ জুলাই প্রবাসী সংহতি দিবস, ৩ আগস্ট জুলাই বিপ্লব ইশতেহার দিবস এবং ৫ আগস্ট বিজয় দিবস।
সংবাদ সম্মেলেনে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ফজলুর রহমানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব জিহাদী ইহসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক বোরহান উদ্দীন, ঢাবি শাখার সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লা, মাদ্রাসা-ই-আলিয়া শাখার আহ্বায়ক রাকিব মণ্ডল, সদস্য সচিব মো.
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ জ ল ই ব প লবক গণঅভ য ত থ ন ও র জন ত ক প রজন ম র আম দ র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আ.লীগ ও তাদের দোসররা
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের জামিন ও তদন্তাধীন মামলা প্রত্যাহারে আবেদন শুনানিকালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা আদালতে অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনটি বলেছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা।
আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ‘বিচারকাজে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। প্রশ্নের জবাব ও সূচনা বক্তব্য দেন ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল। এ সময় ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল, ফোরামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কুদ্দুস ও সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, গ্রেপ্তারের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন ও তদন্তাধীন মামলা প্রত্যাহারে আবেদন শুনানিকালে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা আদালতে অপেশাদার আচরণ করেছেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হট্টগোল সৃষ্টি করে বিচারকার্যের পরিবেশ বিঘ্নিত করেছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে পলাতক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা।
সংবাদ সম্মেলন ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ফ্যাসিস্ট রেজিমের যাঁরা তল্পীবাহক আছেন, তাঁরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনা। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আইনজীবীরা ও দেশের মানুষ মনে করছে, সেই বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত ও প্রতিহত করার একটা ট্রায়াল (মহড়া) ছিল গত ১১ আগস্ট। অর্থাৎ শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর যিনি গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন, খায়রুল হকের জামিন চাওয়ার নামে আইনজীবীরা যাঁরা ছিলেন, প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট রেজিমের দোসর। তাঁরা সেদিন আদালতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রমাণ করার অপপ্রায়স চালিয়েছিলেন যে আদালত সঠিকভাবে কাজ করছেন না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘খায়রুল হকের কীর্তি বা কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ জানে। তিনি আজকে আইনের আওতায় এসেছেন।…তাঁর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করি। বিচার চাই যেন ভবিষ্যতে আর নতুন কোনো খায়রুল হক এই জুডিশিয়ারি থেকে সৃষ্টি না হয়। আর জামিনের বিষয়ে অবশ্যই সবাই চাইতে পারে। কিন্তু জামিন চাওয়ার আবেদন সামনে নিয়ে আদালতের পরিবেশ নষ্ট করা, আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা—তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’
লিখিত বক্তব্যে আদালতের ভেতরে বিশৃঙ্খলাকারী আওয়ামী লীগের দোসর আইনজীবী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য পদক্ষেপ নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি দাবি জানিয়েছে ফোরাম। একই সঙ্গে আদালতের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করে সংগঠনটি।
উন্মুক্ত আদালতে বিচারপতিদের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি আদালতের প্রতি অবহেলা এবং সহকর্মী আইনজীবীদের গায়ে হাত তোলা পেশাগত অসদাচরণের শামিল উল্লেখ করে আইনজীবীদের এই অপেশাদার আচরণের বিরুদ্ধে ‘পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধিমালা’ অনুসারে ‘ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন’ গ্রহণ করে সনদ বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রতিও দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এই সংগঠনটি।