উচ্চ ঝুঁকিতে দেশের ১৫ জীবন বীমা কোম্পানি
Published: 3rd, July 2025 GMT
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম বলেছেন, সময়মতো দাবি পরিশোধ না করায় ব্যাপক আস্থাহীনতার কারণে সংকটে পড়েছে বীমা খাত। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত জীবন বীমা কোম্পানির ১৩ লাখ গ্রাহকের অপরিশোধিত বীমা দাবির পরিমাণ ৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। দেশের ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫টি, যেগুলো পরিচালনার অযোগ্য। ১৫টি রয়েছে মধ্যম ঝুঁকিতে। ভালো অবস্থানে রয়েছে ছয়টি।
গতকাল বুধবার আইডিআরএ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা বীমা কোম্পানির তালিকা আইডিআরএ চেয়ারম্যান উল্লেখ করেননি। তবে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ১৫টি কোম্পানিতে এরই মধ্যে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে সংস্থাটি। এসব প্রতিষ্ঠান হলো– সানফ্লাওয়ার লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, বেস্ট লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ এবং এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান জানান, সব মিলিয়ে বীমা খাতে অপরিশোধিত রয়েছে ৬ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক মানুষের অর্থ আটকে আছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫১ দাবির বিপরীতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। আর নন-লাইফ জীবন বীমায় ২০ হাজার ২৯৮ দাবির বিপরীতে আটকে আছে ২ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নন-লাইফ ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, জীবন বীমার ক্ষেত্রে অপরিশোধিত অর্থের বেশির ভাগই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ কোম্পানিতে আটকে আছে। ২০২৪ সাল শেষে এসব কোম্পানির অপরিশোধিত দাবির পরিমাণ ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। মোট অপরিশোধিত অর্থের যা ৯০ শতাংশের বেশি। এসব জীবন বীমা কোম্পানির ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরের বিশেষ নিরীক্ষা করাচ্ছে আইডিআরএ। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ না করায় এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে গত ১৪ বছরে শুধু জীবন বীমায় ৫৪ লাখ পলিসি কমে ২০২৪ সাল শেষে চলমান পলিসি নেমেছে ৭১ লাখে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ছাড়া আস্থা বাড়বে না। সময়মতো দাবি পরিশোধ, মানুষের আস্থা বাড়াতে বিভিন্ন আইন ও বিধি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক রেজল্যুশনের আদলে বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আলোকে শুধু বীমা প্রতিষ্ঠান একীভূত হবে, তেমনটি নয়। অবসায়ন, অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আসলাম আলম বলেন, জিডিপির অনুপাতে ২০১০ সালে বীমার হার ছিল শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা কমে শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশে নেমেছে। ২০২৪ সালে আরও কমেছে। তিনি জানান, আস্থা বাড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক, আইনগত ও ডিজিটাল দিকগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে এখন ৩৬টি লাইফ ও ৪৬টি নন-লাইফ কোম্পানি রয়েছে। যেখানে এজেন্টসহ কর্মরত জনবল ১ লাখ ৫৮ হাজার। অথচ আইডিআরএতে ১৬০ জন অনুমোদিত জনবলের বিপরীতে মাত্র ১০৭ জন কর্মরত রয়েছে। জনবল বাড়ানোর জোর চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপর শ ধ ত ২০২৪ স ল আইড আরএ জ বন ব ম ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।