খরার কারণে বিশ্বজুড়ে অনাহারের দ্বারপ্রান্তে লাখ লাখ মানুষ
Published: 2nd, July 2025 GMT
খরা বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষকে অনাহারের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার ৯ কোটিরও বেশি মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলে রেকর্ড ভাঙা খরার পর চরম ক্ষুধার মুখোমুখি হচ্ছে, যার ফলে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি এবং গবাদি পশুর মৃত্যু হচ্ছে। সোমালিয়ায়, জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ এখন অনাহারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং কমপক্ষে দশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠাংশের গত আগস্টে খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন ছিল। জিম্বাবুয়েতে গত বছর ভুট্টার ফলন ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছিল এবং ৯ হাজার গবাদি পশু মারা গিয়েছিল।
বুধবার প্রকাশিত খরা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এই উদাহরণগুলো বিশ্বব্যাপী একটি বিপর্যয়ের সূচনা মাত্র, যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে খরা ও পানির অব্যবস্থাপনা খাদ্য সরবরাহ, জ্বালানি এবং জনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে।
মার্কিন জাতীয় খরা প্রশমন কেন্দ্র (এনএমডিসি) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং প্রতিবেদনের সহ-লেখক মার্ক সোবোদা বলেছেন, “এটি কোনো শুষ্ক আবহাওয়া নয়। এটি একটি ধীর গতিতে চলমান বৈশ্বিক বিপর্যয়, যা আমি কখনো দেখিনি।”
এনএমডিসি জাতিসংঘের মরুকরণ প্রতিরোধ কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক খরা স্থিতিস্থাপক জোটের মাধ্যমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে চারটি প্রধান অঞ্চল-আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ভূমধ্যসাগরের এক ডজনেরও বেশি দেশ বিশদভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। সরকার, বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উৎস থেকে তথ্য গ্রহণ করে লেখকরা মানবিক দুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক ধ্বংসের একটি চিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
ল্যাটিন আমেরিকায় খরার কারণে পানামা খালে পানির স্তর মারাত্মকভাবে কমে যায়, জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং বাণিজ্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং খরচ বৃদ্ধি পায়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে যান চলাচল এক তৃতীয়াংশেরও বেশি কমে গিয়েছিল।
২০২৪ সালের প্রথম দিকে মরক্কো টানা ছয় বছর খরার সম্মুখীন হয়, যার ফলে ৫৭ শতাংশ পানির ঘাটতি দেখা দেয়। স্পেনে বৃষ্টিপাতের অভাবের কারণে জলপাই উৎপাদনে ৫০ শতাংশ হ্রাসের ফলে জলপাই তেলের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়, অন্যদিকে তুরস্কে ভূমি অবক্ষয়ের ফলে দেশের ৮৮ শতাংশ মরুভূমির ঝুঁকিতে পড়ে যায় এবং কৃষির চাহিদা জলাধার খালি করে দেয়। অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে বিপজ্জনক গর্ত তৈরি হয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বিশ্বের পানি সংকট সম্পর্কে সাম্প্রতিক সতর্কতার ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেছে। আগের তুলনায় স্বাদু পানির চাহিদা আরো তীব্র হয়েছে। তবে বৈশ্বিক উত্তাপের সংমিশ্রণ বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তন করে শুষ্ক অঞ্চলগুলোকে আরো শুষ্ক করে তুলছে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অবিরাম বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে আরো তীব্র মেঘ বিস্ফোরণ ঘটছে। এছাড়া পানি সম্পদের ব্যাপক অব্যবস্থাপনা এবং দূষণ বিশ্বকে খরার দ্বারপ্রান্তে ফেলেছে।
গত শরতে প্রকাশিত বিশ্বের পানি সম্পদের অবস্থা সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি দশকের শেষ নাগাদ স্বাদু পানির চাহিদা সরবরাহের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাড়বে এবং আগামী ২৫ বছরে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি খাদ্য উৎপাদন ব্যর্থতার ঝুঁকিতে পড়বে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কাজে আসছে না ৫৩ লাখ টাকায় নির্মিত ন্যায়কুঞ্জ
হবিগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার নিশ্চিতের লক্ষ্যে তৈরি করা হয় ‘ন্যায়কুঞ্জ’। নির্মাণ শেষে সেটি উদ্বোধন করলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না বিচারপ্রার্থীরা।
উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও চালু করা হয়নি এ ভবনটি। কারণ, এর জন্য প্রয়োজনীয় আসবাব সরবরাহ করা হয়নি। সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আদালত প্রাঙ্গণে নান্দনিক এই স্থাপনা নির্মাণ করে। সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০২৪ সালের ২ মে এটি উদ্বোধন করেছিলেন।
আদালতে আসা মনির হোসেন নামে এক বিচারপ্রার্থী জানান, ন্যায়কুঞ্জ নামে যে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য তা ছিল অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। অনেক বিচারপ্রার্থী আদালতে এসে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার
হন। এখানে এসে বিশ্রামসহ শৌচাগার ব্যবহার করতে পারলে দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজনের সুবিধা হতো।
রহিমা বেগম নামে আরেক নারী বলেন, ‘পুরুষরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারলেও অনেক ক্ষেত্রে নারীরা অসুবিধায় পড়েন। বিশেষ করে শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে ন্যায়কুঞ্জটি দ্রুত চালু হলে সুবিধা হতো।’
আশিক মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘মূলত বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে। বছর পেরিয়ে গেলেও তার সুফল পাচ্ছেন না কেউ। দ্রুত ন্যায়কুঞ্জটি চালু করা না গেলে অবকাঠামোও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার আজিজুল ইসলাম আজিজ জানান, আদালতে আসা লোকজন যাতে বিশ্রাম নিতে পারেন এবং শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন তার ব্যবস্থা রয়েছে ন্যায়কুঞ্জে। ভবনটি নান্দনিক এবং বিশ্রামের জন্য আদর্শ স্থান। আদালতে আগতদের সময় কাটানোর ভোগান্তি লাঘবে এটি নির্মাণ হয়েছে। আসবাব সরবরাহ না করায় এটি চালু হচ্ছে না।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বকুল বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি ব্যাহত হচ্ছে। আদালতে আসা ব্যক্তিদের অপেক্ষার জন্য এটি করা হয়েছিল। এতে করে তাদের ভোগান্তি অনেকাংশেই কমে যেত। আসবাব সরবরাহ না করায় ভবনটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দ্রুত এটি চালু করা প্রয়োজন।’