গাজীপুরে চাঁদাবাজির টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে যুবক খুন
Published: 6th, July 2025 GMT
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় চাঁদাবাজির টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে জাহিদুল ইসলাম (২৮) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের বড়কান্দা গ্রামের মৃত হারিছউদ্দিনের ছেলে।
নিহত জাহিদুলের স্ত্রী শিফা আক্তার জানান, শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলে ভাত খাওয়ার পর তার স্বামীকে দুই বন্ধু মুন্না ও মইনুল মোবাইল ফোনে কল করে ডেকে নেন। এরপর রাত ১০টার দিকে জানতে পারেন, জাহিদুলকে কুপিয়ে স্থানীয় আড়াল বাজারের উত্তরপাশে খান বাড়ি এলাকায় ফেলে রাখা হয়েছে। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে জাহিদুলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। সেখানে রাত ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শিফা আক্তার আরো জানান, তার স্বামী জাহিদুল বাড়িতে তেমন একটা থাকে না। তার বন্ধু মইনুল, মুন্না, সৈকত ও মারুফ প্রায়ই তাকে ফোন করে বাইরে নিয়ে যেতেন। গত রমজান মাসে তারা জাহিদুলকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে সেবার প্রাণে বেঁচে ফিরলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মসমর্পণ
জমি নিয়ে বিরোধে নারীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি জাহানারা বেগম নামের এক নারীর বাড়ি নির্মাণের কাজ থেকে আদায় করা ৫০ হাজার টাকা চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে জাহিদুলের সঙ্গে মইনুল, মুন্না, সৈকত ও মারুফের বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জেরে শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলে তারা জাহিদুলকে ডেকে নিয়ে যান। পরে বিষয়টি মীমাংসা না হওয়ায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে আড়াল বাজারের পাশে পাটক্ষেতে নিয়ে গিয়ে তাকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সনমানিয়া ইউনিয়নে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নিয়ে মারুফ-বাবু গ্রুপ, মইনুল গ্রুপ ও আমির হোসেন গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ সব সন্ত্রাসীদের ভয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি আড়াল পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য তাদের হামলার শিকার হয়েছেন। দুই মাস আগেও এই ধরনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এক যুবক গুরুতর আহত হন।
সনমানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য তৌহিদুজ্জামান সরকার তপন বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে আহত জাহিদুলকে হাসপাতালে পাঠানোর পর আড়াল পুলিশ ফাঁড়ির দুই সদস্য ফাঁড়িতে ফেরার পথে বর্ণমালা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের ধাওয়ার শিকার হন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আব্দুল গাফফার নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করা হয়। এ সময় অপর দুজন পালিয়ে যায়।’’
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, যারা হত্যা করেছেন এবং যিনি নিহত হয়েছেন, তারা সবাই একই চক্রের সদস্য। তারা এলাকায় মাদক কারবার, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/রফিক/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য জ হ দ লক ক রব র সদস য মইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
মানিকগঞ্জে তাজিয়া মিছিল দেখতে সড়কের পাশে মানুষের ভিড়
মানিকগঞ্জে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে জেলা শহরের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছিল মানুষের ভিড়।
আজ রোববার পবিত্র মহররমের তাজিয়া মিছিল দেখতে তাঁরা এই দীর্ঘ পথে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান করেন। সড়কের পাশে ভবনগুলোর ছাদেও মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মানিকগঞ্জে শত বছরের প্রাচীন গড়পাড়া ইমামবাড়ি অন্যান্য বারের মতো এবারও পবিত্র আশুরা পালন করছে। এ উপলক্ষে ১০ দিন ব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে দেশের অন্যতম বড় তাজিয়া মিছিল বের হয়। হজরত ইমাম হোসেনের শেষ মঞ্জিলের নকশা ‘তাজিয়া’, তাঁর নিজের ব্যবহার করা ঘোড়া ‘দুলদুল’ এবং কারবালা যুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী নিশান নিয়ে হাজার হাজার ইমামভক্তরা এই শোকমিছিলে অংশ নেন। বিগত সময়ের মতো এবারও শোকমিছিলে ‘হায় হোসেন, হায় ইমাম’ শোকধ্বনি গাইবেন ইমামভক্তরা।
এ শোকমিছিল মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হয়ে জেলা শহরে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিল দেখতে সহস্রাধিক মানুষ সড়কের দুই পাশে ভিড় করেন।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাজিয়া মিছিল দেখতে আসা শামীম হোসেন বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলে কারবালার ময়দানে শোকাবহ ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সমবেদনা জানাতে এখানে এসেছি।’
মিছিল শেষে আজ সন্ধ্যায় সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে ইফতার ও মাগরিবের নামাজের পর আশুরার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা সম্পর্কে এক সভা হয়। এতে গড়পাড়া ইমামবাড়ি দরবার শরিফের প্রধান খাদেম এবং বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ভিএসজেএ) সভাপতি শাহ আরিফুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় হজরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। সভায় হজরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ শোকসভায় কারবালার মহান শহীদদের মহান আত্মত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করেন। আলোচনা সভা শেষে ইসলাম ও বিশ্ব শান্তির উদ্দেশ্যে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। গড়পাড়া ইমামবাড়ির অন্যতম খাদেম শাহ্ শাহজাদা রহমান বাঁধন এ পর্ব পরিচালনা করেন।
এদিকে শোকমিছিল উপলক্ষে গড়পাড়া ইমামবাড়ি ও জেলা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়। মিছিলে সুশৃঙ্খলা রক্ষায় ইমামবাড়ির স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া সেনাসদস্যরা সড়কে টহলের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে গড়পাড়া ইমামবাড়ির পাশে তিন দিনব্যাপী মেলা বসেছে। মেলায় গেরস্তালি বিভিন্ন জিনিসপত্র, মনিহারি, লোহা-তামার জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষজন মেলায় ভিড় করেন।
শাহ আরিফুর রহমান বলেন, ‘মুসলমানদের কাছে ১০ মহররমের দিন অত্যন্ত শোকের। ইয়াজিদ চেয়েছিল রাজতন্ত্র কায়েম করতে। তবে ইসলাম তথা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নীতি ও আদর্শের মধ্যে রাজতন্ত্র ছিল না। ইসলাম উদার ও শান্তির ধর্ম। ইমাম হোসেন ও তাঁর মাতামহ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী চলতে বলেছেন। দেখিছেন ইসলাম সত্য ও শান্তির ধর্ম; ইসলাম অসত্য, অন্যায় ও অবিচারের ধর্ম নয়। ইমাম হোসেনের সেই শিক্ষাই আমাদের নেওয়া উচিত।’