মানিকগঞ্জে তাজিয়া মিছিল দেখতে সড়কের পাশে মানুষের ভিড়
Published: 6th, July 2025 GMT
মানিকগঞ্জে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে জেলা শহরের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছিল মানুষের ভিড়।
আজ রোববার পবিত্র মহররমের তাজিয়া মিছিল দেখতে তাঁরা এই দীর্ঘ পথে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান করেন। সড়কের পাশে ভবনগুলোর ছাদেও মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মানিকগঞ্জে শত বছরের প্রাচীন গড়পাড়া ইমামবাড়ি অন্যান্য বারের মতো এবারও পবিত্র আশুরা পালন করছে। এ উপলক্ষে ১০ দিন ব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে দেশের অন্যতম বড় তাজিয়া মিছিল বের হয়। হজরত ইমাম হোসেনের শেষ মঞ্জিলের নকশা ‘তাজিয়া’, তাঁর নিজের ব্যবহার করা ঘোড়া ‘দুলদুল’ এবং কারবালা যুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী নিশান নিয়ে হাজার হাজার ইমামভক্তরা এই শোকমিছিলে অংশ নেন। বিগত সময়ের মতো এবারও শোকমিছিলে ‘হায় হোসেন, হায় ইমাম’ শোকধ্বনি গাইবেন ইমামভক্তরা।
এ শোকমিছিল মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হয়ে জেলা শহরে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিল দেখতে সহস্রাধিক মানুষ সড়কের দুই পাশে ভিড় করেন।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাজিয়া মিছিল দেখতে আসা শামীম হোসেন বলেন, ‘তাজিয়া মিছিলে কারবালার ময়দানে শোকাবহ ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সমবেদনা জানাতে এখানে এসেছি।’
মিছিল শেষে আজ সন্ধ্যায় সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে ইফতার ও মাগরিবের নামাজের পর আশুরার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা সম্পর্কে এক সভা হয়। এতে গড়পাড়া ইমামবাড়ি দরবার শরিফের প্রধান খাদেম এবং বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ভিএসজেএ) সভাপতি শাহ আরিফুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় হজরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। সভায় হজরত ইমাম হোসেনের আত্মার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ শোকসভায় কারবালার মহান শহীদদের মহান আত্মত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করেন। আলোচনা সভা শেষে ইসলাম ও বিশ্ব শান্তির উদ্দেশ্যে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। গড়পাড়া ইমামবাড়ির অন্যতম খাদেম শাহ্ শাহজাদা রহমান বাঁধন এ পর্ব পরিচালনা করেন।
এদিকে শোকমিছিল উপলক্ষে গড়পাড়া ইমামবাড়ি ও জেলা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়। মিছিলে সুশৃঙ্খলা রক্ষায় ইমামবাড়ির স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া সেনাসদস্যরা সড়কে টহলের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে গড়পাড়া ইমামবাড়ির পাশে তিন দিনব্যাপী মেলা বসেছে। মেলায় গেরস্তালি বিভিন্ন জিনিসপত্র, মনিহারি, লোহা-তামার জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনাসহ বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষজন মেলায় ভিড় করেন।
শাহ আরিফুর রহমান বলেন, ‘মুসলমানদের কাছে ১০ মহররমের দিন অত্যন্ত শোকের। ইয়াজিদ চেয়েছিল রাজতন্ত্র কায়েম করতে। তবে ইসলাম তথা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ছ ল দ খত ম ন কগঞ জ শ কম ছ ল গড়প ড় ইসল ম সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
পবিত্র আশুরা আজ
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটি শোকের। ৬১ হিজরির এই দিনে ফোরাত নদী-তীরবর্তী কারবালার ময়দানে শহীদ হন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)। তিনি হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমার (রা.) পুত্র। হজরত আলীর মৃত্যুর পর খলিফা হন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। জীবদ্দশাতেই তিনি পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন।
তবে ইয়াজিদের কাছে বায়াত নিতে অস্বীকৃতি জানান ইমাম হোসেন (রা.)। প্রতিবাদে মদিনা ছেড়ে কুফায় হিজরতের জন্য যাত্রা করেন তিনি। পরে কারবালা ময়দানে সঙ্গীদের নিয়ে যাত্রাবিরতি করেন। ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর অনুসারীদের আটক করে মদিনায় ফিরিয়ে নিতে ইয়াজিদের নির্দেশে উমর ইবনে সাদ বিন আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে।
আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ইমাম হোসেনের শিবিরে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তারা। পানির অভাবে কাফেলার নারী-শিশুরা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লেও ইমাম হোসেন আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান। ১০ মহররম অবরোধের বিরুদ্ধে অসম এক যুদ্ধে ইমাম হোসেন ও তাঁর ৭২ সঙ্গী শহীদ হন। শিমার ইবনে জিলজুশান কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হোসেনকে হত্যা করে।
ইসলাম ধর্মমতে, ১০ মহররম আশুরার দিনেই কেয়ামত হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) এই দিনে রোজা রাখতেন।
কারবালার শোকাবহ স্মরণ ছাড়াও মুসলমানদের কাছে ১০ মহররম গুরুত্বপূর্ণ দিন। শিয়া মতাবলম্বীরা ইমাম হোসেনের শোকে এ দিনে মাতম করেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হয় তাজিয়া মিছিল।
আশুরা উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জোগাবে। তিনি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।