মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান যে পাঁচজনকে নিয়ে কথা বলেছেন, তাঁরা দেশে আসেননি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 6th, July 2025 GMT
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের ‘জঙ্গি ট্যাগ’ দেওয়া ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশে যে তিনজনকে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের কেউ জঙ্গি না। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রেস রিলিজও দিয়েছিল। মূলত ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রপ্তানি কার্গো ভিলেজ ও সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের হিমাগার পরিদর্শন করেছেন। পরে সেখানে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান যে পাঁচজনকে নিয়ে কথা বলেছে—সেই পাঁচজন দেশে আসেনি। তাদের সঙ্গে আমাদের সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা তদন্ত করে দেখব। তবে বাংলাদেশে এদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
গত ১০ মাসে আপনারা জঙ্গিবাদের কোনো তথ্য দিতে পেরেছেন—এমন প্রশ্ন তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন ছিল, তখন দিয়েছেন। এখন নেই, তাই দিতে পারেন না। বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই।’
রপ্তানি কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এখান থেকে শাকসবজি, ফলমূল প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানি প্রক্রিয়া দেখার জন্যই তিনি কার্গো ভিলেজ পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে আমাদের ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানি করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। সে সময় আমাদের ব্যবসায়ীদের অনেকেই কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন।’ উপদেষ্টা এ সময় বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশের রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে, সেহেতু এখানে যে কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে, সেটিকে আরও বড় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা
কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়ার পরিকল্পনায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী রিক্তা আক্তারও তাঁর মা, ভাই ও বোনকে হত্যার জন্য বাচ্চু মিয়া (৫৫) ও তাঁর সহযোগীদের দায়ী করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে মো. রাসেল মিয়া (৩৫) এবং মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকিকে (২৯)
কুপিয়ে হত্যা করেন হামলাকারীরা। এ ছাড়া সেখানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭) বর্তমানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিহত রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে গতকাল শনিবার বাঙ্গরা বাজার থানায় বাচ্চু মিয়াসহ ৩৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাব-১১–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, মামলার এজাহারনামীয় আসামি বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল (৫৫) ও দুলাল (৪৫) ছাড়াও আতিকুর রহমান (৪২), বয়েজ মাস্টার (৪৩) ও আকাশকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানী ও কুমিল্লায় একাধিক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকের্যাব–১১–এর অধিনায়কের দেওয়া সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য এবং মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, গত ১ জুন রবিউল আওয়ালের একটি মুঠোফোন চুরি হয়। এর জন্য বোরহান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধর করেন বাচ্চু মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। তখন ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে বোরহানের বাবা জসীম উদ্দিন স্থানীয় মাতবরদের কাছে যান। এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে একপর্যায়ে তিনি রোকসানা বেগমের কাছে যান। পরে বোরহানের বাবা ছেলের সন্ধান চেয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি মামলা করেন।
র্যাব–১১–এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তখন বাচ্চু মিয়াসহ অন্যদের ধারণা হয়, রোকসানা বেগমের পরামর্শে জসীম উদ্দিন থানায় মামলা করেছেন। তখন মব সৃষ্টি করে বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা সেদিন রোকসানার বাড়িতে হামলা করে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেন।
মামলার এজাহারে রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার সময় রোকসানাদের পরিবারকে ঘেরাও করেন বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা। বাড়ির সামনে এসে তাঁরা রোকসানার নাম ধরে ডাকতে থাকেন। রোকসানা ঘর থেকে বের হয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর মাথায় একটি কোপ দেন। বাচ্চু মিয়ার পূর্বপরিচিত স্থানীয় চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাছির মিয়াও রোকসানার মাথায় কোপ দেন। এ সময় মাকে বাঁচাতে ঘর থেকে ছুটে আসেন তাঁর ছোট মেয়ে জোনাকী। তখন জোনাকীর মাথায় কোপাতে থাকেন শিমুল বিল্লাহ, রফিকসহ কয়েকজন। জোনাকি ও রোকসানাকে কোপানোর খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে করে তখন বাড়িতে আসেন রোকসানার ছেলে রাসেল। তখন শিমুল বিল্লাহসহ অন্যরা রাসেলকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলে হত্যা করেন। এ সময় রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা
এগিয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর হাতে থাকা রামদা দিয়ে মাথায় কোপ দেন। তখন রুমা পড়ে যান। এ সময় অন্যরাও তাঁর মাথায় কোপাতে থাকেন। পরে মামলার বাদী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর
৯৯৯–এ ফোন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও ততক্ষেণ তিনজন খুন হয়ে সেখানেই পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।