রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ ওসিকে আটকে চাঁদাবাজির’ অভিযোগ
Published: 6th, July 2025 GMT
যশোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রেস্ট হাউজে ‘ওসিসহ নারীকে আটকে চাঁদাবাজির’ অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ সংক্রান্ত সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ওসি এক নারীকে নিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন। এ সময় এক ছাত্রদল নেতা ৫-৬ জন সহযোগীকে নিয়ে সেখানে যান। ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ওসির কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে আপোসরফা শেষে তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়। গত ৩০ জুন এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়ে।
ফুটেজে দেখা গেছে, ৩০ জুন সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট। এক নারীকে নিয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন রেস্ট হাউজের কপোতাক্ষ কক্ষে উঠেন ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। এর ঘণ্টা দুয়েক পরে রেস্ট হাউজে ৫-৬ জন সহযোগীদের নিয়ে হাজির হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সনি। রেস্ট হাউজটির দরজা ধাক্কা দিতেই বাইরে বেরিয়ে আসেন ওসি। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কক্ষে প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেন তিনি। এক পর্যায়ে টেনে-হিঁচড়ে ওসিকে সঙ্গে নিয়েই কক্ষে প্রবেশ করেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, ‘নারী নিয়ে একান্তে’ সময় কাটানোর অভিযোগ তুলে ছাত্রদলনেতা সনি ওসির কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। দিতে অস্বীকৃতি জানালে শুরু করেন ভাঙচুর ও ভিডিও ধারণ। আনসার সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারীকে মারধরও করেন তারা। একপর্যায়ে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে দুই লাখ টাকায় রফাদফা করেন তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাজির হলে ছাত্রদলনেতা সনি ওসিসহ নারীকে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেন।
ঘটনার দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেটে দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্য রাজু জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় একজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলোতে প্রবেশ করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর ঘণ্টাখানেক পরে এলাকার কিছু লোকজন বাংলোর ভেতরে প্রবেশের পর দরজা আটকে দেন এবং ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। এরপর আরও অনেকে আসেন, থানা থেকে পুলিশের লোকজন আসেন। তবে ভেতরে কি ঘটেছে তা তিনি জানেন না।
রেস্ট হাউজের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরুণ হোসেন জানান, কার্যত পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনায় তিনি ওসি সাইফুল ইসলামকে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সঙ্গে আনা নারীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়েছিলেন। আর সাইফুল ইসলাম রেস্ট হাউজে অবস্থানকালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পাউবো ও থানার লোকজন সেখানে যান।
পাউবো রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, ওসি সাইফুল স্ত্রী পরিচয়ে একজন নারীকে নিয়ে বাংলোয় ওঠেন। তিনি নিজে দরজা খুলে দেন। এর কিছু সময় পর ওসি স্যার নাস্তা আনতে তাকে শহরের একটি হোটেলে পাঠান। আর সাইফুল ইসলাম ওই নারীসহ কক্ষে ঘণ্টা খানেক অবস্থান করার পরে এলাকার কিছু লোকজন প্রবেশ করেন। রেস্ট হাউজের সামনে এসে দরজা ধাক্কধাক্কি করেন। এর কিছুক্ষণ পর সাইফুল ইসলাম দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর চক্রটি তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই নারীসহ ঘরে ঢোকায়। এসময় সাইফুল ইসলাম টাকা বের করে দেন চক্রের লোকজনের হাতে। লেনদেন তিনি দেখে ফেলায় এবং রেস্ট হাউজে অবস্থান করার চেষ্টা করায় তাকেও মারপিট করে ও ভাঙচুর করে। বাবুর্চি মিজানকেও মারধর করে তারা।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওসিকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে সেখানে বহিরাগতরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায়। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খতিয়ে দেখছে।
এদিকে, সিসিক্যামেরার ফুটেজে ছাত্রদল নেতার কাছে হেনস্তার শিকারের দৃশ্য দেখা গেলেও তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার এক বন্ধুকে নিয়ে যশোরে একটা কাজে এসেছিলেন। তাকে নিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থানের সময় পূর্বপরিচিত কয়েকজন ছাত্রনেতা আসেন। তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সনি দাবি করেন, ‘নারীসহ একজন লোক রেস্ট হাউজে অবস্থান করছেন স্থানীয়দের মাধ্যমে এমন সংবাদ পেয়ে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে কোনো নারীর অবস্থান পাননি।’
সিসিটিভি ফুটেজে নারী, ওসিসহ তাকে দেখা গেছে এমন তথ্য জানানো হলো তিনি অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সত্য নয়। আর যেহেতু নারী পাওয়া যায়নি; তাই ওসির সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে চলে আসেন।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, পাউবো রেস্ট হাউজে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তবে পুলিশ সেখানে গিয়ে কাউকে পায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: যশ র ছ ত রদল ন ত অবস থ ন কর ছ ত রদল ন র সহ ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
করোনায় একজনের মৃত্যু, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৯৪
দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর করোনায় ২৪ জনের মৃত্যু হল। আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন বরগুনা জেলায়। বরগুনা সদর হাসপাতালে ৬৬ জন রোগী এক দিনে ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গুতে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১১ হাজার ৯৫৪ জনে, আর মারা গেছেন ৪৫ জন। সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগীর ৪৪ শতাংশই বরিশাল বিভাগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত একদিনে সারা দেশে ২৩৯ জন সন্দেহজনক ব্যক্তির করোনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ জনের। পাশাপাশি ওই সময় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন পুরুষ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স ছিল ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। করোনায় এ বছর মারা যাওয়া ২৪ জনের মধ্যে নারী ১৩ জন, বাকি ১১ জন পুরুষ।
এ বছর করোনায় বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগে মারা গেছে ৯ জন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ৩ জন ও সিলেট বিভাগে ২ জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের ৫ দিনে এক হাজার ৬৫৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন তিন জন। সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ২৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৫৭ জন, বাকি ৮৭৯ জন অন্যান্য বিভাগে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বছরের জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন এবং মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন ও জুনে ৫ হাজার ৯৫১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন জন, এপ্রিলে সাত জন, মে মাসে তিন জন ও জুন মাসে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।