ইংল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে যাওয়া প্রধান কোচ ফিল সিমেন্স নিশ্চয়ই কলম্বোয় খোঁজখবর রেখেছেন। নিজের ডেপুটি মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে একাদশ এবং গেম প্ল্যান নিয়ে আলোচনা হয়তো করেছেন ভিডিও কলে। তিনি এসব না করে থাকলেও আজ সুখী মানুষের একজন সিমন্স। কারণ গত নভেম্বর থেকে একের পর এক ম্যাচ হেরে আইসিসির ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে অবনমিত হচ্ছিল দলটি। সেখান থেকে উত্তরণের পথ দেখছিলেন না কোচ। 

বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার কাছে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং কলাপসের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমর্থকরাও হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একটি জয় খুব প্রয়োজন ছিল। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আরাধ্য জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। যেখানে ১১ জনের কম-বেশি ভূমিকা থাকলেও জয়ের নায়ক বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। কুশল মেন্ডিসকে ঠিক সময়ে আউট করা এবং ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার দারুণ প্রাপ্তি। স্লগে মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সেদিক থেকে দেখলে মেহেদী হাসান মিরাজের টস জয়, আগে ব্যাটিং করা, পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে ২৪৮ রানের সংগ্রহ এবং এই রান ডিফেন্ড করতে বোলারদের প্রাণান্ত চেষ্টার ফসল ১৬ রানের জয়। 

এর আগে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম বলেছিলেন, কলম্বোয় দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে ক্যান্ডিতে যেতে চান। সিরিজ ১-১ ব্যবধান করা সম্ভব হলে ক্যান্ডিতে সিরিজ জয়ের সুযোগ থাকবে। সেই রোমাঞ্চকর জায়গায় এখন বাংলাদেশ। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ আশাবাদী কলম্বোর জয় পাল্লেকেলের শেষ ম্যাচে ভালো খেলতে আত্মবিশ্বাস জোগাবে, ‘সিরিজে সমতা আসায় সবারই ভালো করার তাড়না থাকবে। আমরা কিছু কিছু জায়গায় উন্নতি দেখাতে পারলে ভালো একটি ম্যাচ হবে আশা করি।’ 

প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেটে রান তাড়া করা কঠিন। পিচে ফাটল ধরায় দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনারদের জন্য সুবিধা থাকে। প্রথম ম্যাচে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও কামিন্দু মেন্ডিস ৭ উইকেট নিয়ে সেটা প্রমাণ করেছেন। গতকাল বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম ৫ উইকেট শিকার করে সেই দাবিকে জোরালো করেন। কুশল মেন্ডিসকে দিয়ে ব্রেকথ্রু দেন তানভীর। মূল্যবান এই উইকেট পতনের পরই বাংলাদেশের হাতে চলে আসে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। এক এক করে ব্যাটারদের সাজঘরে ফেরান বাঁহাতি এ স্পিনার। 

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেট প্রাপ্তিতে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তানভীর বলেন, ‘আমি বয়সভিত্তিক দলে খেলিনি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থেকে উঠেছি। আমি জানি বোলিং ভালো করলে সুযোগ আসবে। চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিয়ে বোলিং করতে। আলহামদুলিল্লাহ ৫ উইকেট পেয়েছি।’ 

বিপিএলে ভালো বোলিং করায় টি২০ দলে নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। আবার আমিরাত ও পাকিস্তান সফরে গিয়ে নিজের বোলিং অ্যাকশন পরিবর্তন করে ছন্দ হারিয়েছিলেন। পরে তাওহীদ হৃদয়ের পরামর্শে পুরোনো অ্যাকশনে বোলিং করে কলম্বোর ওয়ানডে ম্যাচে সফল হলেন।

প্রথম দুই ওভারে ২২ রান দিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিলেন তানভীর। রক্ষণাত্মক বোলিং কৌশল নেওয়ার চিন্তা করায় অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ হাত খুলে বোলিং করতে বলেন, ‘ওই সময় ক্যাপ্টেন আমাকে বলেছেন, তানভীর তুমি পারবে, উইকেটের জন্য বল করো; যা হওয়ার হবে। অধিনায়কের পরিকল্পনা মতো বোলিং করে সফল হয়েছি।’ 

গতকাল জিতলেও ব্যাটিং নিয়ে খুশি হতে পারেননি মিরাজ, ‘আমরা ভালো খেলায় ম্যাচটি জিতেছি। বোলিং খুবই ভালো হয়েছে। তবে ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতি করতে হবে। আজ ইমন যেভাবে খেলেছে, হৃদয় মাঝে জুটি করেছে, শামীম পাটোয়ারি ভালো করেছে। বিশেষ করে, শেষদিকে তানজিম সাকিব যেভাবে হাসারাঙ্গাকে দুটি চার মেরেছে, তা প্রশংসা পাওয়ার মতো।’ 

১৭০ রানে ৮ উইকেট শিকারের পর বাংলাদেশের জয়টা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। সেখান থেকেই ম্যাচটি কঠিন করে দেন লঙ্কান জানিথ লিয়ানাগে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে। মুস্তফিজ তাঁকে আউট করায় শেষদিকে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। পরে চামিরাকে আউট করে সাকিব জয়ের খুশি কেনেন। নিজেদের বোলিং বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মিরাজ বলেন, ‘বোলিংটা ভালো হয়েছে। মাঝে শামীম ও তানভীর ৯ ওভার  খুবই ভালো করেছে। শামীম যে উইকেটটি নিয়েছে আসালঙ্কার সেটি মহামূল্যবান ছিল। অনেক দিন পরে দলে ফিরে শামীম যেভাবে খেলেছে, তাকে কৃতিত্ব দিতে হবে। এই ধারাবাহিকতা রেখে পরের ম্যাচগুলোতে উন্নতি করতে হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ৫ উইক ট কলম ব

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ