২৬ মাসে কাটা হয়েছে ১৩ লাখ গাছ, সবচে বেশি কোথায়, ঢাকায় কত
Published: 6th, July 2025 GMT
রাজধানীর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত সাত মসজিদ সড়কের বিভাজকে ছিল বড় গাছ। গাছগুলো ছায়া দিত। ২০২৩ সালের মে মাসে সেগুলো কেটে ফেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পরে লাগানো হয় ছোট শোভাবর্ধনকারী গাছ।
ধানমন্ডিতে গত ২৭ জুন গিয়ে দেখা যায়, সড়ক বিভাজকে নানা জাতের ফুলগাছ। এতে সৌন্দর্য বেড়েছে। তবে পথচারীরা আর ছায়া পান না। হারিয়ে গেছে বড় গাছের প্রশান্তির ছায়া।
কথা হয় রিকশাচালক মো.
এভাবে সরকারি প্রকল্পে নিয়মিত গাছ কাটা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে গাছ লাগানো হয় না। রাজধানীতে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা যেমন কমছে, তেমনি সারা দেশে কমছে বনভূমি।
বেসরকারি সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) হিসাব বলছে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সরকারি প্রকল্পে প্রায় ১৩ লাখ গাছ কাটা পড়েছে। সংস্থাটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য সংকলন করে এ হিসাব করেছে।
আরডিআরসির ‘লগিং অব প্ল্যান্টস ইন বাংলাদেশ (২০২৪-২০২৫)’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সরকারি প্রকল্পে প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। অন্যদিকে আগের বছরে একই গবেষণায় বলা হয়েছিল, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত কাটা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ গাছ।
সর্বশেষ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ মাসে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে খুলনা জেলায়—৮৫ হাজার। এরপর রয়েছে লক্ষ্মীপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও যশোর। কম গাছ কাটা পড়েছে শেরপুর, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা জেলায়। ঢাকায় কাটা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২৯৬টি গাছ।
ঢাকায় যেসব জায়গায় গাছ কাটা হয়েছে, তার একটি পান্থকুঞ্জ পার্ক। গত বছর দ্রুতগতির উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) সম্প্রসারণের কাজ করতে এ পার্কের গাছ কাটা হয়। একই পরিণতি হয়েছে ফার্মগেট এলাকার শহীদ আনোয়ারা পার্কের। একসময় সেখানে কয়েক শ গাছ থাকলেও মেট্রোরেলের কার্যালয় ও স্থাপনা নির্মাণ করতে সেগুলো কাটা হয়েছে।
মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ আনোয়ারা পার্কের কোনোটাই স্থায়ী স্থাপনা নয়। তাঁরা শিগগিরই জায়গায়টি পার্ক পুনঃস্থাপনের জন্য গণপূর্তকে বুঝিয়ে দেবেন।
খুলনার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে গত বছর কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদীর পাড়ের ৫০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। পরে সমালোচনার মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আবার গাছ রোপণের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে গত এক বছরে কোনো গাছ লাগায়নি পাউবো।
পাউবোর খুলনা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধের কাজ শেষ না করে গাছ লাগালে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজ শেষ হলেই আমরা গাছ লাগাব।’
আরডিসির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে গাছ কাটায় ১২টি সরকারি সংস্থার নাম উঠে এসেছে। সংস্থাগুলো হলো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা মৎস্য কার্যালয়, রাজশাহী জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, যশোর জেলা পরিষদ, মেহেরপুর জেলা পরিষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের প্রকল্পের প্রয়োজনে গাছ কাটা যেতে পারে। কিন্তু ততসংখ্যক গাছ কি লাগানো হয়? গাছ রক্ষা করে প্রকল্পের নকশা করা যায় কি না, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের অনুমোদনসংক্রান্ত সভাগুলোতে সিদ্ধান্ত থাকে যে গাছ কাটা যাবে না। একেক প্রকল্প একেক মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে যে গাছ কাটা পড়বে, তা পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয় না। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে গাছ রেখে কীভাবে প্রকল্প ডিজাইন (নকশা) করা যায়, সেটা তারা প্রস্তাব করে না। বিভিন্ন প্রকল্পে গাছ কাটা বন্ধে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটা উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
আরডিআরসির গবেষণায় আসা হিসাবের চেয়ে ঢাকায় অনেক বেশি গাছ কাটা পড়ে বলে মনে করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার জনসংখ্যার তুলনায় গাছের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রকল্পে গাছ যেন কাটা না যায়, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক প রকল প পর ব শ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ