পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না
Published: 6th, July 2025 GMT
সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তরুণ সাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন উম্মে ফারহানা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তিনি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানিয়েছেন পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বরলিপি
ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন।
ধন্যবাদ। লেখক হিসেবে এটি আমার প্রথম পুরস্কার। তাই অনুভূতি খুবই নতুন। অবশ্যই আমি অত্যন্ত আনন্দিত। একে নিজের লেখক পরিচয় নিয়ে আরেকটু আত্মবিশ্বাসী হওয়ার ধাপ বলে মনে করছি।
আপনি প্রথম এই পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ কীভাবে জানলেন?
‘সমকাল’ থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। ৪ জুলাই সন্ধ্যায় ঘোষণা দেওয়ার আগে কাউকে বলার কথা নয়। শুধু পরিবারের লোকজন, মানে আমার বাচ্চারা আর ভাইবোনকে জানিয়েছিলাম।
এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি কেমন অর্থ বহন করে?
পুরস্কার মানে এক ধরনের স্বীকৃতি, সম্মান আর অর্থমূল্যটিও নগন্য নয়। আমি পেশায় শিক্ষক, ১৪ বছর চাকরি করার পরেও আমার বেতন এক লক্ষে পৌঁছেনি। কাজেই হঠাৎ এক লাখ টাকা পেয়ে যাওয়া অপ্রত্যাশিত আনন্দ দিয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আপনি কী লক্ষ্য করেছেন এই পুরস্কারের তরুণ ক্যাটাগরীতে বেশ কয়েকবছর ধরে নারীরা বেশি পুরস্কৃত হচ্ছেন, বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
লক্ষ্য করলে দেখবেন ফিকশনে নারীদের সাফল্য গত কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিক হয়ে গেছে সারা বিশ্বেই। নোবেল পেলেন হান কাং, বুকার পেলেন গীতাঞ্জলি শ্রীর পর বানু মুশতাক। এলিফ শাফাক, চিমামান্দা আদিচি ছাড়াও অনেক নারী লেখকদের নাম বলা যাবে যারা খুব ভালো আখ্যান লিখছেন। এখন আর সেই পুরুষ প্রাধান্য জগতের কোথাও নেই। হ্যাঁ, লৈঙ্গিক বৈষম্য রয়েছে, চিরকালই ছিল। কিন্তু সেজন্য সৃজনশীলতাকে তো দমিয়ে রাখা যায় না। পৃথিবীর প্রাচীনতম কবিদের একজন হলেন শ্যাফো, কেমিস্ট্রিতে দুইবার নোবেল পেয়েছেন মেরি কুরি। কোন ক্ষেত্রে আপনি নারীদের অবদান কিংবা প্রতিভার প্রকাশকে অস্বীকার করবেন? এতো দিন আমরা নারীদের দেখিনি কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না।
বেড়ে ওঠার সময় সাহিত্যের অনুকূল পরিবেশ কতটা পেয়েছেন?
‘সাহিত্যচর্চা’র মতো ভারী কথা আমি ব্যবহার করতে চাই না। আমি লেখালেখি করি স্কুল পাস করার পর থেকেই। মা-বোন-ভাইয়ের কাছ থেকে সবসময় উৎসাহ পেয়েছি। বন্ধু আর সহকর্মীরাও সবসময় লেখালেখির ব্যাপারে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমার প্রয়াত স্বামীও আমার প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। ৫টি বইয়ের চারটির অথর ফটো তাঁর তোলা। আমি খুবই প্রভাবিত আর অনুপ্রাণিত আমার প্রিয় লেখকদের দিয়ে। অনেকেই আছেন এই তালিকায়। অরুন্ধতী রয়, টনি মরিসন, অমিতাভ ঘোষ, রোহিন্তন মিস্ত্রি, এলিফ শাফাকসহ আরও অনেকের কাজ আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
সাহিত্যের ভাষা বিনির্মাণে কোন বিষয়কে বেশি গরুত্ব দেন?
ভাষা হচ্ছে নদীর মতো, নিজের গতিতে চলে। ভাষার ব্যাপারে প্রুডারি আমার অপছন্দ। কলকাতার চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত শুদ্ধ ভাষায় আমি বিশ্বাসী নই। ভাষাকে হতে হবে লেখকের নিজস্ব। মনে করুন শাহীন আখতারের ‘সখী রঙ্গমালা’, নোয়াখালীর ভাষাই এই উপন্যাসের সৌন্দর্য। আমি ময়মনসিংহের কলোক্যাল প্রায়ই ব্যবহার করি যেখানে দরকার বলে মনে হয়। তাই বলে ঢাকার সেটিঙে লেখা গল্পে ময়মনসিংহের ডায়লগ জোর করে জুড়ে দিই না। এতো গেল প্রমিত আর অপ্রমিতের আলাপ। এ ছাড়াও গদ্যের ভাষায় যা জরুরি বলে মনে করি তা হলো সাবলীলতা। গদ্যের ভাষা অর্গ্যানিক না হলে পড়া মুশকিল।
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র প র প রস ক র
এছাড়াও পড়ুন:
ছাগল বিক্রি করতে গিয়ে নিখোঁজ, পরে সেপটিক ট্যাংকে মিলল মরদেহ
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই নারী ছাগল বিক্রি করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রযুক্তির সহায়তায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে নিখোঁজ নারীর মুঠোফোন।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত নারীর নাম সুফিয়া খাতুন (৩৪)। তিনি ফুলপুর উপজেলার রূপসী ইউনিয়নের পাতিলগাঁও গ্রামের কেরামত আলীর মেয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের দাদরা গ্রামের একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, দাদরা গ্রামের ফরিদুল ইসলামের বাড়ির পাশে দুর্গন্ধ পেয়ে তাঁরা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুলে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।
নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ওই নারীর ছোট ভাই মো. ইলিয়াছ ২ জুলাই ফুলপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন তারাকান্দায় মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি থানায় গিয়ে পরনের কাপড় দেখে লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় তিনি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে তারাকান্দা থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
পুলিশ জানায়, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে আজ শুক্রবার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওই নারীর স্বজনেরা জানান, গত রোববার বিকেলে সুফিয়া খাতুন ছাগল বিক্রি করতে ফুলপুর উপজেলার আমুয়াকান্দা বাজারে যান। চার হাজার টাকায় ছাগল বিক্রির পর মাকে ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপর তিনি দ্বিতীয় স্বামী রইছ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর স্বামী ফুলপুর উপজেলার পাগলা এলাকার বাসিন্দা এবং আমুয়াকান্দার একটি মাদ্রাসায় বাবুর্চির কাজ করেন। রইছ উদ্দিন তাঁকে রাতের খাবার খাইয়ে রাত আটটার দিকে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িতে তুলে দেন। এরপর সুফিয়া খাতুন এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান। এর পর থেকে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
নিহত সুফিয়া খাতুনের আগের স্বামীর সংসারে ১২ বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান আছে।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, ওই নারীর মুঠোফোনটি পাওয়া যাচ্ছিল না। ওই মুঠোফোনের সূত্র ধরে রোহন মিয়া (৩৫) নামের একজনকে আটক করা হয়। তিনি দাদরা গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে। যেখান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়, তার পাশেই রোহনের বাড়ি।
ওসি আরও বলেন, দ্বিতীয় বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন ওই নারী।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয় বলে আমাদের ধারণা। আটক হওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে নারীর মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। ভিন্ন সিম লাগিয়ে ফোনটি ব্যবহার করছিলেন তিনি। কারা, কীভাবে, কী কারণে ওই নারীকে হত্যা করেছে, তা জানতে আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’