৫ আগস্ট এই দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা এখনো পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

রবিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহীতে এনসিপির জুলাই পথযাত্রা শেষে নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে পার্টির অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন।

সারজিস আলম বলেন, “২০২৪ এর জুলাইয়ের পর নতুন জুলাই এসেছে। কিন্তু আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। মনের ভেতরে এখনো আফসোস কাজ করে। গত ৫ আগস্টে এই দেশকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম, সেগুলো এখনো পূরণ হয়নি। কিন্তু যে শহীদরা জীবন দিয়ে গেল, যে সহযোদ্ধারা রক্ত দিল, তাদের আমানত আমরা খেয়ানত করতে পারি না। তাই যতদিন না আমাদের দেখা স্বপ্নগুলো পূরণ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই জুলাই চলবে। আমাদের এই লড়াই চলবে। এই উদ্দেশ্যে ৬৪টি জেলায় আমরা যাচ্ছি।”

আরো পড়ুন:

একটি দলের কারণে মৌলিক সংস্কার আটকে যাচ্ছে: আখতার

চিপায় পড়ে ডিসি-এসপিরা ভাল ব্যবহার করছেন: হাসনাত

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সময় আমরা দেখেছি। আপনি সবাইকে নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু শেখ হাসিনাকে নিয়ে কথা বলা যাবে না। শেখ হাসিনা ফেরেস্তাদেরও ওপরে। ঠিক এই কারণে ফেরেস্তো থেকে ফেরাউন, ফেরাউন থেকে স্বৈরাচার হয়ে উঠেছে। আগামীর বাংলাদেশে যত বড়ই দল হোক, যত বড় নেতা কিংবা নেত্রী হোক, কাউকেই প্রশ্নের উর্দ্ধে রাখা হবে না।”

পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করে তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের প্রশাসন থেকে পুলিশ, ডিসি থেকে এসপি, ওসি থেকে ইউএনও সবাইকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে রাখি, যদি আপনি জেলা-উপজেলার ডিসি, এসপি, ওসি বা ইউএনও হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে ভাল। আর যদি আপনি কোনো দলের হয়ে ওঠেন, তাহলে আওয়ামী লীগের কথা স্মরণ করুন। আপনার অবস্থাও ওই একই রকম হবে। কোনো চাটুকারের আর জায়গা হবে না এই বাংলাদেশে।”

এই ছাত্রনেতা বলেন, “এই উত্তরাঞ্চলে আমরা এতদিন যে বৈষম্যের শিকার হয়েছি, আগামীতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, যদি সেটা এনসিপিও হয়, আমরা এই বৈষম্য মেনে নেব না। চাঁদাবাজ, দখলবাজের বড় পরিচয় সে চাঁদাবাজ, দখলবাজ। যে সিন্ডিকেট চালায়, তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে রক্তচোষা। এদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে। এদের ছেড়ে দিলে হাসিনার মতো আরো স্বৈরাচার এই দেশে তৈরি হবে। আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো স্বৈরাচার তৈরি হতে দেব না।”

এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ মুখ্য, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ডা.

তাসনিম জারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/কেয়া/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট আম দ র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি