দখল করা পূর্ব জেরুজালেমের আত-তুর এলাকায় গত ১৬ জুন ইসরায়েলি স্নাইপারদের হামলায় ২১ বছরের উদাই আবু জুমা আর ১২ বছরের ইয়াস আবু মুফরেহ মারাত্মকভাবে আহত হয়। প্রাণঘাতী ‘ডামডাম’ গুলি ছোড়া হয়েছিল তাদের দিকে। পরের দিনই জায়গাটা পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। থেকে গিয়েছিল রক্তাক্ত পিৎজার একটি বাক্স আর গুলির ছিদ্র।

ঘটনার রাতে দুই চাচাতো ভাই উদাই ও ইয়াস আত-তুরে তাদের দাদার বাড়ির সামনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে জড়ো হয়েছিল। উদাই ও ইয়াসের দাদির হজ থেকে ফেরা উপলক্ষে আবু জুমা’ পরিবারের সবাই একত্র হয়েছিল। তা ছাড়া পরিবারের এক মেয়ে ফিলিস্তিনের জাতীয় ‘তাওজিহি’ পরীক্ষায় ভালো ফল করার কারণে সবাই আনন্দিত ছিল।

গত ১৩ জুন ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাত শুরু হলে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দখল করা আত-তুর এলাকার দুটি প্রধান প্রবেশমুখে ব্যারিকেড বসায়। তবে পরিবারের সদস্যদের মতে, ঘটনার রাতে এলাকা ছিল একেবারে শান্ত। একটি গাড়ির পাশে বসে পিৎজা খাচ্ছিল ইয়াস ও উদাই। হঠাৎ করে তাদের ওপর ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর গুলি চালানো হয়। ১০টি গুলির মধ্যে দুটি লাগে ইয়াস ও উদাইয়ের গায়ে। পিৎজার ওপর ছড়িয়ে পড়ে রক্ত।

ইয়াসের মা নাসরিন আবু মুফরেহ বলেন, ‘সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। আমরা বুঝতেই পারিনি কী হচ্ছে। আমাদের রাস্তায় তো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য কোনো হুমকিও ছিল না।’

পরে আশপাশের বাড়ির নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, দূরের একটি ছাদে অবস্থান নেওয়া দুই ইসরায়েলি স্নাইপার সদস্য পরিবারটির ওপর গুলি চালিয়েছেন। গুলি চালানোর আগে তারা কোনো হুঁশিয়ারি সংকেতও দেননি।

ইয়াস ও উদাইকে নিয়ে পরিবারটি দ্রুত হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। ইসরায়েলি পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়ে ইয়াসের বাবা রায়েদকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশের অভিযোগ, পারিবারিক সেই জমায়েতের সময় ইয়াস ও উদাই মলোটভ ককটেল ছুড়েছে এবং আতশবাজি ফুটিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে।

ইয়াস ও উদাইকে প্রথমে আত-তুরের আল মাকাসেদ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের পশ্চিম জেরুজালেমের আইন কেরেম এলাকার হাদাসা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

আত-তুরের হাসপাতালে গিয়েও পরিবারটিকে বাধা দেয় পুলিশ। ইয়াসের মা নাসরিন আতঙ্কিত হয়ে পুলিশকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা একটা শিশুকে এভাবে গুলি করলেন কীভাবে?’

পুলিশ তখন বলেছিল তারা জানে না কার গুলিতে ওই দুজন আহত হয়েছে। তারা এই ঘটনাকে ‘পারিবারিক কলহ’ বলে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ইয়াস এখনো বেঁচে আছে—এটাই সৌভাগ্য। গুলি তার হৃৎপিণ্ডের মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার পাশ দিয়ে গেছে। গুলির আঘাতে তাঁর বাঁ কাঁধে বিশাল ক্ষত তৈরি হয়েছে। এতে তার স্নায়ু ও রক্তনালি অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আর উদাইয়ের গুলি লেগেছে পেটে। পরে সেটি পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে তাঁর স্নায়ু, রক্তনালি আর মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরিবারের আশঙ্কা, ইয়াসের হাত হয়তো চিরদিনের মতো অচল হয়ে যাবে। আর উদাই হয়তো আর কখনো হাঁটতে পারবেন না।

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরিবারকে জানান, ওদের শরীরে যে গুলি লেগেছে তা ছিল ‘ডামডাম’ গুলি। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, এই ধরনের গুলি এতটাই প্রাণঘাতী যে যুদ্ধেও ব্যবহার করা নিষেধ। পূর্ব জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধক্ষেত্র বলা না হলেও, জায়গাটি এখনো অবৈধভাবে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে।

আত-তুরে আবু জুমা’ পরিবারের বাড়ির পাশের গলিতে গুলি চলেছিল। সেখানে এখন শুধু একটা পিৎজার বাক্সই পড়ে আছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র ইসর য় ল র ওপর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে নৌকায় বসিয়ে নদীতে ডুব দিয়ে আর উঠতে পারেননি তিনি

চার বছর বয়সী মেয়ে রুসফিয়াকে নিয়ে বাড়ির পাশের করতোয়া নদীতে গোসল করতে গিয়েছিলেন মাসুম আল মামুন (৪২)। নদীর ধারে বেঁধে রাখা নৌকায় মেয়েকে বসিয়ে রেখে পানিতে ডুব দিয়েছিলেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ বাবাকে উঠতে না দেখে দৌড়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি মাকে জানায় রুসফিয়া। পরে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। পরে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর উদ্ধার হয়েছে মাসুমের লাশ।

রোববার বিকেলে পঞ্চগড় পৌরসভার আহমদনগর এলাকাসংলগ্ন করতোয়া নদীতে এ ঘটনা ঘটে। মৃত মাসুম আল মামুনের বাড়ি আহমদনগর এলাকায়। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন।

নিহত মাসুম আল মামুনের মামাতো ভাই জাফর আহমদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নদীতে নেমে তাঁকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে বিকেল ছয়টার দিকে পানির নিচে মাসুমকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তাঁরা শুনেছেন মাসুমের হৃদ্‌রোগ ছিল। পানিতে ডুব দেওয়ার পর তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, ‘খবর পেয়ে বিকেল পাঁচটার দিকে আমরা নিখোঁজ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারে নদীতে নামি। এ সময় আমাদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনও নদীতে নেমেছিলেন। প্রায় ৪৫ মিনিট খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ করেই স্থানীয় একজনের পায়ে মানুষের শরীরের মতো কিছু একটা লাগে। পরে সেখান থেকে মাসুম আল মামুনের লাশ খুঁজে পাই। পরে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।’

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ