পদ্মাতীরের কুঠিবাড়ি থেকে দেশের শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পার করেছে গৌরবের ৭২ বছর। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিতে রেখেছে অবিস্মরণীয় অবদান। উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ সারাদেশেই শিক্ষার এক অমূল্য কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

সবশেষ ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানেও রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অনন্য। তবে প্রতিষ্ঠার সাত দশক পেরিয়ে গেলেও কাটেনি শিক্ষক ও আবাসন সংকট, রয়েছে সেশনজটও।

মাত্র ১৬১ জন নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজারের অধিক। সঙ্গে যুক্ত আছেন ১ হাজার ১২ জন শিক্ষক ও বিপুল সংখ্যক গবেষক। ৭৫৩ একরের ক্যাম্পাস জুড়ে মোট ১২টি অনুষদ, ৫৯টি বিভাগ ও ছয়টি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ আধুনিক অবকাঠামো রয়েছে। রয়েছে ১৪টি একাডেমিক ভবন, ১৭টি আবাসিক হল, আন্তর্জাতিক ডরমিটরি, গ্রন্থাগার, আইসিটি সেন্টার, জাদুঘর, স্টেডিয়াম, সুইমিং পুলসহ নানা সুবিধা।

আরো পড়ুন:

জবিতে বিপণন শিক্ষার ১৮ বছর উদযাপন

জুলাই আন্দোলনকারীদের দেশ ছাড়তে বলা শিক্ষকদের পদোন্নতি, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

শিক্ষা ও গবেষণায় নানামুখী সফলতা

রাবি শিক্ষা ও গবেষণায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গৌরবময় অবস্থান গড়ে তুলেছে। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.

মনজুর হোসেনের নেতৃত্বে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মসলিন পুনরুদ্ধারে সাফল্য, পানিকে আর্সেনিক দূষণমুক্ত করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গ্রিন চিলি পাউডার ও সজনে পাতার গুঁড়া তৈরি, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএইচএম খুরশীদ আলমের চার সবজি থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ, তুঁত গবেষণায় ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী আবিষ্কার, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের পাটের বিকল্প আঁশ উদ্ভাবন, ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেনের উন্নত প্রজাতির মাছ গবেষণা এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছের ৮ প্রজাতির হাওড়ে ফিরিয়ে আনার অবদান অন্যতম।

এছাড়া, বিরল অর্কিড কাঞ্চন, ফুলের জীবন্ত চিত্রকর্ম, মাটি ছাড়া ঘাস ও আনারস চাষে টিস্যু কালচার প্রযুক্তি উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন এগ্রোনমি বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু রেজার দেশের প্রথম সাপের বিষের ডেটাবেইজ তৈরি, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার শোভনের গেছো শামুকের ক্যাপটিভ প্রজননে সাফল্য এবং একই বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ হোসেনের হাত ধরে আর্সেনিক দূষণ ও স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গবেষণা।

এদিকে, লবণ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণের টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দেশের প্রথম সফল গবেষণা করেছেন ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। প্লাজমা টেকনোলজি ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ তালুকদার এবং পদার্থবিদ্যায় রাবির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার বসাকের সফলতাও দেশের গবেষণা ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শিক্ষার্থীসহ ভর্তি হয়েছেন ১৮ জন বিদেশি শিক্ষার্থী। বর্তমানে নয়টি দেশের ৩৩ জন শিক্ষার্থী রাবিতে বিভিন্ন পর্যায়ে অধ্যয়ন করছেন।

গবেষণায় জাতীয় শীর্ষ ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা

সবশেষ যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নেচার ইনডেক্স র‍্যাংকিং মার্চ ২০২৫ অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মধ্যে গবেষণায় শীর্ষস্থান দখল করেছে। এর আগে, স্কোপাসের জরিপে দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গবেষণায় সবার শীর্ষে অবস্থান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইউএস গ্লোবাল নিউজ র‍্যাংকিং ২০২৫ অনুযায়ী বিশ্বের গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় এর অবস্থান ৬৩৮তম।

এ বছরের ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাংকিংয়ে দেশের শীর্ষস্থান অর্জন করেছে রাবি। তাছাড়া বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞান গবেষকের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবসহ ১৫ জন গবেষক স্থান পেয়েছেন। গবেষণার গুণমান ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এক উজ্জ্বলতম অবস্থানে পৌঁছেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

উচ্চশিক্ষায় রাবি শিক্ষার্থীদের সাফল্য

গত ছয় মাসে ৩৪ জন রাবি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী সম্প্রতি আমেরিকার পৃথক চার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন। সবশেষ ২৭ জুন মাস্টার্সের ফল প্রকাশের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের আহমেদ সাইফ যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন।

বিজেএস-বিসিএসে রাবির বাজিমাত

এই বছর ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৬২ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর মধ্যে, পররাষ্ট্র ক্যাডারে চতুর্থ ও অ্যাডমিনে পঞ্চমসহ ১৭ জন, শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম, দ্বিতীয়সহ পুলিশে ১০ম, লাইভস্টকে তৃতীয়, আনসারে ষষ্ঠ, খাদ্য ও আনসারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন রাবির মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সের এক বিভাগ থেকেই ১৫ জন শিক্ষার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে, গত ৪ বছর টানা প্রথম স্থান অর্জনসহ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষাতেও বরাবরের মতো সফল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সবশেষ ১৭তম বিজেএসে রাবির আইন অনুষদ থেকে মোট ২৮ জন শিক্ষার্থী সহকারী জজ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে, শুধু আইন বিভাগের ৪০তম ব্যাচ থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন ১২ জন। তাছাড়া মাস্টার্স শেষ হওয়ার পূর্বে জজ হওয়ার নজির রয়েছে, যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি শিক্ষায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাতীয় উন্নয়নে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো অনেক বেশি অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব এবং সরকারি সহায়তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, “বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিকভাবে সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক গবেষণায়ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান তৈরি করেছে। তবে আমাদের দায়িত্ব হলো বাজার চাহিদাভিত্তিক গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা। এজন্য কারিকুলাম আধুনিকায়নের চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরো বলেন, “শুধু কারিকুলাম যথেষ্ট নয়, শিক্ষার্থীদেরও আত্মপ্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিজেএস বা বিসিএসে যারা সফল, তারা নিজ উদ্যোগেই এগিয়ে এসেছে। অথচ অনেকেই যোগ্যতা থাকার পরও প্রেরণা ও তাগিদের অভাবে পিছিয়ে পড়ে। তাই এমপ্লোয়াবিলিটির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতায় পৌঁছাতে পারলে রাবি শিক্ষার্থীরা সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, “আবাসিক সংকট কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে নতুন পাঁচটি হল নির্মাণের প্রস্তাব সরকারের কাছে প্রেরণ করেছে। এর পাশাপাশি ছেলেদের একটি নতুন হলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ, ডিসেম্বরের মধ্যেই সেখানে ১১ শতাধিক শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাবেন। মেয়েদের একটি হলের কাজও শেষের দিকে, আগামী বছরেই উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”

তিনি আরো বলেন, “সেশনজট নিরসনে প্রতিটি বিভাগের সেমিস্টার ও পরীক্ষাগুলো যেন নির্ধারিত সময়েই শেষ হয়, সে বিষয়েও নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই এই সংকট কেটে যাবে। তাছাড়া ২০ তলা বিশিষ্ট নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ভবনটি উদ্বোধনের পর শ্রেণিকক্ষের সংকটও দূর হবে।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “দেশের দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের সঙ্গে ৭৩ বছরে পদার্পণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব স্টেকহোল্ডারকে শুভেচ্ছা জানাই।”

গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাবি বর্তমানে গবেষণা, র‍্যাংকিং ও উচ্চশিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো করছে। সম্প্রতি নেচার ইনডেক্সে আমরা দেশসেরা হয়েছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো ভালো করবে বলে আশাবাদী। আমরা শিক্ষক-গবেষকদের পাশাপাশি ছাত্র-গবেষকদেরও উৎসাহ দিতে বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি।”

তিনি আরো বলেন, “সার্বিকভাবে একাডেমিক সংস্কার ও মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি বিভাগে কারিকুলাম আধুনিকায়নের কাজ চলছে। একাডেমিক শৃঙ্খলা ও ক্লাস পরিচালনায় ক্রেডিট ফলো হচ্ছে কি না, তা তদারকি করা হচ্ছে। শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে টিচার ইভালুয়েশন চালু হবে। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে নাম-রোলবিহীন কোডিং-ডিকোডিং ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন শ ক ষ র থ এক ড ম ক ত হয় ছ ন অবস থ ন স ফল য ষকদ র প রথম সবশ ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যাংক খাত সংস্কার: সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য তিন বছরের পরিকল্পনা বহুপ্রতীক্ষিত উদ্যোগ; এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এই পথনকশার লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দেউলিয়াত্ব আইন সংস্কার, খেলাপি ঋণের (এনপিএল) সমাধান, সংকট ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি এই পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়েছে। বিষয়টি প্রশংসনীয়।

এই পথনকশায় পরিষ্কার ও কাঠামোবদ্ধ সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব পদক্ষেপ ব্যাংক খাতের গভীর সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এই উদ্যোগে সমর্থন দিচ্ছে।

তবে এই পরিকল্পনার জটিলতা ও ব্যাপকতার কারণে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। সফলতা শুধু নতুন আইন প্রণয়ন নয়, বরং সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে। সময়মতো ও কার্যকর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার দীর্ঘদিনের দুর্বলতা। অতীতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরোধ এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সংস্কার কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। কাঠামোগত সমস্যাগুলো আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে প্রোথিত। দেশে ছোট ও দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি, মূলধন পর্যাপ্ত নয় এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন। বর্তমানে ২০ শতাংশের বেশি ঋণ অনাদায়ি (নন পারফর্মিং) এবং ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়তে পারে। যদি এই সংস্কার কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ভবিষ্যতেও নানা ধাক্কার মুখে পড়বে। টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে না এই খাত। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক খাতের অবস্থা উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বাস্তব অগ্রগতি অর্জনের জন্য সরকারকে এই পথনকশা আইন আকারে প্রণয়ন ও প্রয়োগের দিকে নজর দিতে হবে। আরও যা যা দরকার, তা হলো প্রথমেই দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করে অধিকতর শক্তিশালী ও স্থিতিশীল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা; বাংলাদেশ ব্যাংককে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ওপর পূর্ণ স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব দেওয়া; জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে খেলাপি ও চুরি হওয়া অর্থের পুনরুদ্ধার স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা ইত্যাদি। অন্যদিকে কার্যকর ঋণ পুনর্বিক্রয় বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কমবে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এসব সংস্কারের সফলতা নির্ভর করছে বাস্তবায়নের ওপর। ভালো পরিকল্পনা জরুরি হলেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ় অঙ্গীকার ছাড়া কার্যকর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং নতুন সরকারের কাঁধে বর্তায়।

সেলিম রায়হান: নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যাংক খাত সংস্কার: সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর
  • চিচিঙ্গা চাষে সফল কৃষক নুরুল
  • এ সপ্তাহের রাশিফল (৫-১১ জুলাই)
  • চা শ্রমিকদের অনুপ্রেরণা ইতি গৌড়