স্বীকারোক্তি দেওয়া থেকে পিছিয়ে গেলেন ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’
Published: 6th, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বাচ্চু মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েও শেষ পর্যন্ত দেননি। আজ রোববার পুলিশ এ কথা জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কড়ইবাড়ি গ্রামে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়। তাঁরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭)।
পুলিশ জানায়, হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ছয় আসামিকে রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করে বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ। বিকেলে পাঁচজনকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক ছিদ্দিক আজাদ।
আজ সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো.
এই ছয়জনকে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা ও মুরাদনগরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তারের বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-১১-এর অধিনায়ক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মেম্বার বাচ্চু মিয়ার পরিকল্পনায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে ওই দিন রাতে তাঁদের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হলে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাঁদের।
বাচ্চু মিয়া ছাড়া গ্রেপ্তার অপর পাঁচজন হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল আওয়াল, বাচ্চু মিয়ার ছেলে সন্দিগ্ধ আসামি আতিকুর রহমান, রবিউল আওয়ালের ছেলে মো. বায়েজ মাস্টার, মামলার ৩৩ নম্বর আসামি ও পাশের হায়দরাবাদ গ্রামের দুলাল এবং তাঁর ছেলে সন্দিগ্ধ আসামি আকাশ।
হত্যার ঘটনায় শুক্রবার রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন রোকসানা বেগমের বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে স্থানীয় আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহকে। তাঁকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
‘আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই’আসামিদের আদালতে হাজির করার আগেই রোববার বিকেল চারটার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন মামলার বাদী রিক্তা আক্তার। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বারবার বলতে থাকেন, ‘আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। খুনিরা যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলবে।’
রিক্তা আক্তার বলেন, ‘শিমুল চেয়ারম্যান এখনো গ্রেপ্তার না হওয়াতে আমরা বেশি আতঙ্কে আছি। শিমুল চেয়ারম্যানই মূল হোতা।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনার শুরু থেকেই নিহতদের পরিবারকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। আজও তাঁদের বাড়ির সামনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে ছেলেমেয়েসহ মাকে হত্যা: ৬৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তা
কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে মাদক ব্যবসার অভিযোগ তুলে ছেলেমেয়েসহ মাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় অবশেষে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে নিহত রোকসানা বেগমের মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহসহ ৬৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বাঙ্গরা বাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, তিনজনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওসি মাহফুজ বলেছেন, “সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদিল শাহরিয়ারের নেতৃত্বে একটি দল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মুরাদনগরের আকবপুর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে মো. সবির আহমেদ (৪৮) ও মো. নাজিমউদ্দীন বাবুলকে (৫৬) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়।”
এর আগে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহতদের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে সেগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয়রা ভয়ে জানাজা বা কবর খোঁড়ায় অংশ নিতে রাজি হননি। পরে পুলিশের সহায়তায় মরদেহগুলো দাফন করা হয়।