জৈন তীর্থংকর ঋষভ দেব পদ্মাসনে বসে চক্ষু মুদে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন। তাঁর ধ্যানমগ্ন মূর্তির দুই পাশে ও ওপরে–নিচে সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট কুঠুরির আকৃতির ভেতরেও জৈন সাধকদের ধ্যানমগ্ন মূর্তি। এই মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছিল রাজশাহীতে। জৈন তীর্থংকরদের মধ্যে ঋষভ দেব হলেন প্রথম তীর্থংকর। তথাগত গৌতম বুদ্ধের জন্মের ও পূর্বকালে তাঁর আবির্ভাব। পাথরে খোদিত মূর্তি থেকে ঋষভ দেবকে চিত্রকলায় জনসাধারণের সামনে তুলে এনেছেন তরুণ শিল্পী জারীন তাসনিম।

গত শুক্রবার থেকে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৫৫ লেক ড্রাইভ রোডের অ্যালবিয়ান আর্ট গ্যালারিতে শুরু হয়েছে জারীন তাসনীমের ‘মাটি, মূর্তি ও মানস’ নামের প্রথম একক শিল্পকলা প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামিম রেজা।

‘মাটি, মূর্তি, মানস’ প্রদর্শনীটি বেশ আলাদা। উপমহাদেশের প্রাচীন ধর্ম, দর্শনের প্রবর্তক ও প্রচারক যেসব মহাজন কালজয়ী হয়ে আছেন, তাঁদের অনেক মূর্তি সংরক্ষিত আছে দেশের বিভিন্ন জাদুঘর ও প্রত্নস্থলে। আরও সংরক্ষিত রয়েছে বৈদিক, পৌরাণিক, লৌকিক অনেক দেবদেবীর বহু রকমের মূর্তি। আধ্যাত্মিকতা ছাড়াও এসব মূর্তির যেমন বিপুল প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে এর নান্দনিক সৌন্দর্য। একেক মূর্তির আছে একেক রকমের গড়ন, ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে অনন্য এসব ভাস্কর্য। ধর্মীয় অনুভূতি ব্যতিরেকেই এসব ভাস্কর্যের সৌন্দর্য উপভোগ করেন সাধারণ দর্শকেরা। জারীন তাসনিম সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেশের বিভিন্ন জাদুঘর ও প্রত্নস্থলের ঘুরে ঘুরে পাথরে খোদিত প্রাচীন ধর্মগুরু ও দেবদেবীদের মহাকালের অতীত থেকে চিত্রকলার মাধ্যমে তুলে এনেছেন বর্তমানের আলোয়। প্রদর্শনীতে চিত্রকলার পাশাপাশি রয়েছে টেরাকোটার কাজ। 

মূল ভাস্কর্যের ব্যঞ্জনা দর্শদের কাছে পৌঁছে দিতে জারীন তাসনিম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন চারকোল। কারণ, এই ভাস্কর্যগুলো মূলত কালো পাথর খোদাই করে তৈরি করা হয়েছিল কয়েক শ কিংবা সহস্র বছর আগে। চারকোলে কালো রঙের পাশাপাশি পাথরের কাঠিন্য বেশ চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। ড্রয়িংগুলো অনুশীলন পর্যায়ের হলেও যথেষ্ট নৈপুণ্যের প্রকাশ আছে। আলো-আধাঁরের প্রক্ষেপণ ও পটভূমির সঙ্গে দেহাবয়বের অনুপাত—এসব মিলিয়ে কাজগুলোতে একরকম ত্রিমাত্রিক আবহ সৃষ্টি হয়েছে, যা দর্শকদের মনে অনেকটা মূর্তিগুলো দেখার অনুভব জাগায়। 

ছবির পাশাপাশি টেরাকোটার কাজ আছে ছয়টি। টেরাকোটাগুলো অবশ্য পৌরাণিক বিষয়ের নয়। জারীন তাসনিম চারুকলার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যকলায় স্নাতক। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, শিক্ষাসফরে বিভিন্ন প্রত্নস্থান ভ্রমণ করতে গিয়ে প্রাচীন মূর্তির প্রতি তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। একটা সময় বিভিন্ন জাদুঘর ও প্রত্নস্থানে গিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করেন। 

প্রদর্শনী চলবে ১১ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা অবধি খোলা থাকবে সবার জন্য। দেখতে এলে অতীত ঐতিহ্যের এই নান্দনিক ছবি শিল্পানুরাগীদের ভালো লাগবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ স কর য

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগরে ‘বাউলের দ্রোহ’ গানের আসর বন্ধের অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে

সারা দেশে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গতকাল রোববার বিচারগানের আসরের আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। তবে অনুষ্ঠানটি জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গতকাল রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।


প্রশাসনের দাবি, বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা চলছে। গানের উচ্চ শব্দে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছিল—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজকদের অনুরোধ করলে তাঁরা গান বন্ধ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, আয়োজক ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাত ৯টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি শিক্ষার্থীভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপে গানের উচ্চ শব্দে পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোস্ট করেন। রাত ১০টার দিকে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে যায়।

প্রক্টর এসে গান বন্ধ করতে বললে আমরা বলি, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যেহেতু পালাগান, এটা শেষ হলেই বন্ধ করে দেব। কিন্তু প্রক্টর ডিরেক্ট এসে বলছেন, “প্রোগ্রাম বন্ধ, গান থামাও।”নবীন কিশোর গোস্বামী, আয়োজকদের একজন

এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আয়োজকদের শব্দ কমানোর এবং রাত ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ জানান। এরপর আয়োজকেরা শব্দ কমিয়ে অনুষ্ঠান চালাতে থাকেন।

রাত ১টার দিকে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দ বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান চালাবেন বলে ঘোষণা দেন। পরে সোয়া একটার দিকে তাঁরা হ্যান্ডমাইক ও ছোট সাউন্ডবক্স নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে গান বাজাতে থাকেন।

রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।সিফাতউল্লাহ সিফাত, ভিপি, তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদ

একপর্যায়ে প্রক্টর পরিবহন চত্বরে ‘বাউলের দ্রোহের’ মঞ্চে গিয়ে আয়োজকদের গান বন্ধ করতে বলেন। তখন আয়োজকদের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, এ সময় প্রক্টর দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব আহমেদকে গালিগালাজও করেন।

আয়োজকদের অন্যতম নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী নবীন কিশোর গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানের সাউন্ড ছিল খুবই কম। শুধু মনিটরে সাউন্ড ছিল। তারপরও প্রক্টর এসে গান বন্ধ করতে বললে আমরা বলি, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যেহেতু পালাগান, এটা শেষ হলেই বন্ধ করে দেব। কিন্তু প্রক্টর ডিরেক্ট এসে বলছেন, “প্রোগ্রাম বন্ধ, গান থামাও।” অনেক মানুষ সাক্ষী আছেন।’

পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দের গানের প্রতিবাদস্বরূপ একদল শিক্ষার্থী মাননীয় ভিসি স্যারের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁরাও কিছুটা উচ্চ স্বরে কিছু অ্যাকটিভিটিস করেছেন। সেগুলোও আমরা তাঁদের কাছে আশা করি না।এ কে এম রাশিদুল আলম, প্রক্টর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অন্যদিকে গভীর রাতে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান বাজান কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) সিফাতউল্লাহ সিফাত বলেন, ‘রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।’

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে বাউল সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে ফরহাদ মজহার বললেন, পেটালে পিটুনি খাব২৪ নভেম্বর ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শব্দ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। কারণ, তাদের পরীক্ষা চলছে, এখন পরীক্ষার মৌসুম। অনেক শিক্ষার্থী গানের উচ্চ শব্দে মাইগ্রেনের সমস্যার কথাও জানিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজকদের শব্দ কমাতে বলেছিলাম। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য অনুরোধ করলে তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় চায় এবং সে সময়ের পর আমার অনুরোধে অনুষ্ঠান শেষ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং বাজে শব্দ ব্যবহার করেছে।’

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আরেকদল শিক্ষার্থীর গান বাজানো প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, ‘পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দের গানের প্রতিবাদস্বরূপ একদল শিক্ষার্থী মাননীয় ভিসি স্যারের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁরাও কিছুটা উচ্চ স্বরে কিছু অ্যাকটিভিটিস করেছেন। সেগুলোও আমরা তাঁদের কাছে আশা করি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই টাইব্রেকারের রোমাঞ্চ, সোনারগাঁও-জাহাঙ্গীরনগর-ব্র্যাকের জয়োৎসব
  • জাহাঙ্গীরনগরে হলের নির্মাণ খরচের নথিপত্র চেয়ে প্রকল্প কার্যালয়ে তালা
  • জাহাঙ্গীরনগরে ‘বাউলের দ্রোহ’ গানের আসর বন্ধের অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে