পুরো প্রক্রিয়াটি এখন এলিট পরিচালিত সংস্কারপ্রচেষ্টা
Published: 6th, July 2025 GMT
প্রথম আলো:
সামাজিক শক্তিগুলো কেন তাদের জায়গাটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলো? আপনারা শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা তো দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এমন তো নয় আপনাদের অভিজ্ঞতাটা নতুন…
আসিফ মোহাম্মদ শাহান: এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের দীর্ঘদিন ধরেই খুঁজতে হবে। উত্তরটা এককথায় খুব সোজাভাবে বলা কঠিন। প্রশ্নটি হচ্ছে রাষ্ট্র গঠনের এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সামাজিক শক্তি যাঁরা অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা জায়গা পেয়েছেন কি না। দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো সরকার কি তাঁদের একটা রাজনৈতিক পরিসর দিয়েছে? আমরা যদি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকর্ম দেখি, দুটি বিষয় দেখতে পাব। প্রথমত, এই সামাজিক শক্তিগুলোকে সরকার স্বীকৃতিই দিতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, সামাজিক শক্তিগুলোকে বাছাই করার ক্ষেত্রে সরকারের একটা পিক অ্যান্ড চুজ নীতি ছিল। যখন বাংলা একাডেমির বইমেলায় কোনো ঘটনা ঘটছে কিংবা নারী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিবাসীদের দাবি নিয়ে কোনো বিক্ষোভ হচ্ছে, সরকার সেখানে খুব সহজেই একটা দমনমূলক ভূমিকায় চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ যখন এমন সব দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যাচ্ছেন, যার অনেকগুলোই রাষ্ট্র যে নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই মৌলিক প্রশ্নকেই লঙ্ঘন করে, অথচ সরকার তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছে। সরকার এই পিক অ্যান্ড চুজ নীতি নিয়েছে, কারণ যে এলিট ঐকমত্যে সরকার গঠিত হয়েছে, এখানে তার স্বার্থ রয়েছে। এলিটরা তাদের স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করবে। এলিটরা তাদের স্বার্থের জন্য পিক অ্যান্ড চুজ নীতিতে যাদের দরকার, তাদের জায়গা দিচ্ছে। আর তাদের যাদের দরকার নেই, তাদের জায়গা দিচ্ছে না বা যাদের দাবিয়ে রাখা দরকার, তাদের ওপর খড়্গহস্ত হচ্ছে।
প্রথম আলো:সংস্কারের প্রসঙ্গ এলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব—এ শব্দগুলো ঘুরেফিরে আসছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো তাদের প্রাত্যহিক জীবনে কী পরিবর্তন আসছে, সেটা দেখতে চান। এ পর্যায়ে এসে কি মনে হচ্ছে, সংস্কারপ্রক্রিয়া থেকে সাধারণ মানুষ অনেকটাই বাদ পড়ে গেছেন?
আসিফ মোহাম্মদ শাহান: আমরা যদি সামাজিক আন্দোলন বা শক্তিগুলোকে সংগঠিত করতে পারতাম, তাহলে এখন যে সংস্কারগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছি, তার ধরনটাই অন্য রকম হতে পারত। সাধারণ মানুষ যে ক্ষমতার ভারসাম্য বোঝেন না তা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তিগুলো একবার সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ আসলে কেন দরকার। সাধারণ মানুষ বোঝেন যে সরকারের পরিবর্তন হওয়া দরকার। তাঁরা বোঝেন এক ব্যক্তি, এক দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে। কিন্তু যখন কী প্রক্রিয়ায় এটা করতে হবে, সে প্রশ্ন তখন কিন্তু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, এ বিষয়গুলো তারা বুঝতে পারে না। এখানে একটা বড় ধরনের ব্যর্থতা তৈরি হয়েছে, এই মেকানিজমগুলো সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়নি। একপর্যায়ে মানুষ যখন দেখছেন সংস্কার নিয়ে যে আলাপগুলো হচ্ছে, সেটা তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে এবং যখন দেখছেন যে তাঁরা যখন জন্মসনদ নিতে ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন, আইনি সহায়তা নিতে থানায় যাচ্ছেন, তখন আগের মতোই তাঁদের ঘুষ দিতে হচ্ছে, তখন পুরো রাজনৈতিক পরিসর থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। এখন যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে একটা প্যারাডক্স দেখতে পাবেন। নির্বাচন চান কি না, এ প্রশ্নের উত্তর তাঁরা দেবেন ‘হ্যাঁ’। আর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, এ প্রশ্নের তাঁরা উত্তর দেবেন ‘না’।
এই গণ–অভ্যুত্থান একটা বৈপ্লবিক রূপান্তরের বড় সুযোগ নিয়ে এসেছিল, সে সুযোগটা হারিয়ে গেছে। অন্তত মানুষের অংশগ্রহণকে যদি নিশ্চিত করা যেত, তাহলে একটি সম্ভাবনা তৈরি হতে পারত। আমরা যদি মানুষকে সংগঠিত করতে পারতাম, তাঁদের সম্পৃক্ত করতে পারতাম, তাহলে হয়তো এই বিপ্লব আজ থেকে ৫, ১০, ১৫ বা ২০ বছর পর বাস্তবে রূপ নিতে পারত।
প্রথম আলো:জনগণকে সম্পৃক্ত করার এই দায়িত্ব তো অনেক বেশি রাজনৈতিক দলগুলোর। এত বড় একটা গণ–অভ্যুত্থানের পরও কেন দলগুলো এখানে ব্যর্থ হলো?
আসিফ মোহাম্মদ শাহান: কারণ, কেউই আসলে দীর্ঘ মেয়াদে ভাবেনি কীভাবে মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়, কীভাবে বোঝানো যায় যে পরিবর্তনগুলো তাঁদের 
জীবনের জন্য অপরিহার্য। আমি বারবার বলি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলই বাস্তববাদী। তারা সব সময় হিসাব করে কোন পদ্ধতিতে বা কোন প্রক্রিয়ায় গেলে সহজে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব এবং কোন পথে গেলে ক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ী হওয়া যায়। 
এখানে দোষ-গুণ, ভালো-মন্দের বিষয় নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তার ধরনই এমন। রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে এই যে জনসম্পৃক্ততার প্রশ্ন, জনগণের অংশগ্রহণের প্রশ্ন, এটা তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পর ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে চায়, তার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যদি একজন সাধারণ নাগরিক তাঁর নির্বাচিত সংসদ সদস্য বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নিয়মিত জবাবদিহির আওতায় রাখেন, তাহলে ওই রাজনৈতিক দল যে পেট্রন-ক্লায়েন্ট ব্যবস্থা তৈরি করবে বা রেন্টভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলবে, সেটা বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। ফলে ভবিষ্যতে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথও কঠিন হয়ে পড়বে। তাহলে এই কাঠামোকে বদলানোর কী স্বার্থ পড়েছে রাজনৈতিক দলের। এটা বিএনপির ক্ষেত্রে সত্যি, জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে সত্যি। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এনসিপিও এলিট ঐকমত্যে ঢুকে পড়ছে।
ফলে রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই এমনি এমনি গণপরিসর তৈরি করবে না। দলগুলোর ওপর সেই চাপটা থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চাপটা তৈরি করতে পারত।
আসিফ মোহাম্মদ শাহান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য় দলগ ল র ক ষমত য় দরক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতির স্বার্থে খোলামেলা আলোচনায় বসার আহ্বান জামায়াতের
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ও জাতির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খোলামেলা আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারসহ সব পক্ষ আন্তরিক হলে আলোচনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভোরে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন শফিকুর রহমান।
জাতীয় নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা সময়মতো ঘোষণা করা হবে বলে বলেও জানান তিনি। এছাড়া, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।
বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে, জামায়াতের তালিকা কবে ঘোষণা করা হবে জানতে চাইলে দলের আমির বলেন, “তারাও (বিএনপি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেনি। আমি দেখেছি ২৩৭ টা আসনে তারা তালিকা প্রকাশ করেছেন, আবার এটিও চূড়ান্ত নয়। এরমধ্যেও পরিবর্তন আসতে পারে।”
“আমরা কিন্তু এক বছর আগেই এই তালিকা আঞ্চলিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। চূড়ান্ত তালিকাটা সময়মতো আমরা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করব। তবে যেহেতু আমরা একা ইলেকশন করব না, আরো অনেককে আমরা ধারণ করব, দেশ এবং জাতির স্বার্থে সব দিক বিবেচনা করেই চূড়ান্তভাবে যথাসময়ে আমরা ইনশাআল্লাহ প্রার্থী ঘোষণা করব।”
আসন্ন নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে জামায়াতের আমির বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, আমরা আপনারা দেশবাসী সবাই দেখতে চাই।”
মতানৈক্য গণতন্ত্রের সৌন্দর্য: রাজনীতিতে মতানৈক্য কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি, আমাদের মধ্যে মতানৈক্য থাকবে, তবে দোয়া করেন মতবিরোধ যেন না হয়। মতের ভিন্নতা থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সব দল তো এক দল নয়। সবগুলো দল ভিন্ন ভিন্ন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও মতপার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক।”
“আমরা সকলের মতকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখি। তবে আমরা নিজেরা যে মতটা প্রকাশ করি আমরা চেষ্টা করি চিন্তাভাবনা করে জাতির স্বার্থেই সে মতগুলা প্রকাশ করা হয়। অতএব, মতানৈক্য এটা ডেমোক্রেসির সৌন্দর্য। এটার জন্য এখানে বিরোধ লেগে গেছে অথবা দেশ একেবারে অস্থির হয়ে গেছে আমরা এইটুকু চিন্তা করতে রাজি নই” বলেন তিনি।
খোলামেলা আলোচনার আহ্বান:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি ও গণভোটের বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অলরেডি দিয়ে দিয়েছি।”
সরকার রাজনৈতিক দলসমূহকে সময় বেঁধে দিয়েছেন, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না, উনারা সময় বেঁধে দেই নাই; আমি শুনেছি ভাল করে। উনারা অনুরোধ করেছেন যে, এক সপ্তাহ সময়ের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলা বসে যদি একটা কনসেনসাসে পৌঁছাতে পারে, তাহলে তারা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে। সরকার ভালো কথাই বলেছে।”
তিনি বলেন, “আমরাই সবার আগে আহ্বান জানিয়েছি যে, আসুন, আমরা খোলামেলা আলোচনা করে জাতির স্বার্থে একটা সমাধানে পৌঁছি। আমরা আশা করি, অন্যরা আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন।”
এর আগে গতকাল সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
আমি ‘আমির’ নির্বাচিত হইনি:
আবারো দলের আমির নির্বাচত হওয়া প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, “আমি ‘আমির’ নির্বাচিত হইনি। আমার সহকর্মীরা আমার ওপর একটা দায়িত্বের ভার অর্পণ করেছেন, এই দায়িত্বটা বড় ভারী। আপনারা দোয়া করবেন, দেশ এবং দ্বীনের জন্য এই দায়িত্ব পালনে আল্লাহ যেন আমাকে সাহায্য করেন। আর পাশাপাশি আমি আপনাদেরও সহযোগিতা চাই।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, “আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাবার আগে আরেকবার আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করব। আসলে আপনারা ব্যক্তিগতভাবে জাতির বিবেক আর আপনাদের হাউসগুলো দর্পণ। আমরা সমাজের এই দর্পণ এবং জাতির বিবেকের কাছে দেশ গড়ার অভিযাত্রায় জামায়াতে ইসলামী যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করছে যা দেশ এবং জাতির কল্যাণে আমরা এই সবগুলোতে আপনাদেরও কাছে চাই। কারণ আপনারা এই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নন। আপনারা শুধু সাংবাদিক নন, আপনারা এই দেশের নাগরিকও বটে। অতএব, আমরা যারা নাগরিক অধিকারটা নিশ্চিত করে একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই, এই ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা হবে অগ্রগণ্য, আমরা সেটা প্রত্যাশা রাখি। কারণ সাংবাদিকরা যখন জাতির কল্যাণে সিদ্ধান্ত নেন, জাতি তখন কল্যাণের পথ খুঁজে পায়।”
বিদেশ সফরের কথা তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, “আপনারা হয়ত জানেন গত মাসের ১৯ তারিখ আমি ওমরা করার উদ্দেশ্যে দেশ থেকে বের হয়েছিলাম। তিন দিনে ওমরা সম্পন্ন করার পর ২২ তারিখ সকাল ৯টায় আমেরিকার জেএফকে এয়ারপোর্টে আমি আল্লাহর মেহেরবাণীতে সেখানে পৌঁছাই এবং সেখানে ৮ দিনব্যাপী বিভিন্ন স্তরে সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এবং ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি শহরে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেখা করার সুযোগ হয়েছে।”
“সেখান গুরুত্বপূর্ণ দুটি কথা দুটি মেসেজ তাদেরকে দিয়েছি। একটা হচ্ছে বাংলাদেশ আমাদের সকলের। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা এবং নিষ্পেশন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের পর বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মুক্তির এই সংগ্রামে দেশবাসীর সাথে প্রবাসে যারা ছিলেন, তারাও সমানতালে লড়াই করেছেন। তাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই অবদানের জন্য তাদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আর আমরা বলেছি, প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় অধিকার ভোটাধিকার এত দিন ছিল না। এ দাবি সবার আগে আমরা তুলেছিলাম। আমরা এ দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল জায়গায় প্রবাসীদের হয়ে কথা বলেছি। আমরা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই; এই প্রথমবারের মত ব্যাপক ভিত্তিক আমাদের প্রবাসীদেরকে ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে।”
ভোটার হওয়ার জন্য অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এ জন্য যে সফটওয়ার ইনস্টল করা হয়েছে তা প্রোপারলি ফাংশন করে নাই, যার কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ভোটার হতে পারেননি। আমাদের দাবি থাকবে নির্বাচন কমিশনের কাছে কমপক্ষে আরও ১৫ দিন এই সময় বর্ধিত করা হোক এবং যে জটিলতাগুলো রয়েছে- এগুলো সহজ করে তাদেরকে ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। আরও কিছু সমস্যা আছে; কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলব একজন নাগরিকের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড যথেষ্ট। পাশাপাশি তার যদি একটা ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকে-তাহলে আর কিছুরই প্রয়োজন হয় না। এর বাইরে যে সব শর্ত তা যেন শিথিল করে দেয়।”
তুরস্ক সফর সফল হয়েছে জানিয়ে দলটির আমির বলেন, “তুরস্কে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের আমার গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছে। আর বাংলাদেশি যারা আছেন তাদের সঙ্গে আমার বসা হয়েছে, তাদের কথাও শোনার সুযোগ হয়েছে। আমি আসলে নিজের কোনো প্রয়োজনে দেশ থেকে বের হইনি। আমি বের হয়েছিলাম দেশ এবং জনগণের প্রয়োজনে। যেখানেই গিয়েছে জনগণের স্বার্থকে দেশের স্বার্থকে সামনে রেখেই কথা বলার চেষ্টা করেছি।”
তিনি বলেন, “দুনিয়ার সকলের সাথেই আমরা সম্মানজনক সম্পর্ক চাই। এই সম্পর্কটা হবে মিউচুয়াল রেসপেক্ট এবং ইকিউয়িটির ভিত্তিতে।”
সৌদি আরবে পবিত্র ওমরা পালন এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক সফর শেষে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় ফেরেন।
এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দলের সিনিয়র নেতারা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
দলের নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সংসদ সদস্য মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম ও এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলালসহ কেন্দ্রীয় আরো অনেক নেতাকর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা