প্রথম আলো:

সামাজিক শক্তিগুলো কেন তাদের জায়গাটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলো? আপনারা শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা তো দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এমন তো নয় আপনাদের অভিজ্ঞতাটা নতুন…

আসিফ মোহাম্মদ শাহান: এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের দীর্ঘদিন ধরেই খুঁজতে হবে। উত্তরটা এককথায় খুব সোজাভাবে বলা কঠিন। প্রশ্নটি হচ্ছে রাষ্ট্র গঠনের এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সামাজিক শক্তি যাঁরা অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা জায়গা পেয়েছেন কি না। দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো সরকার কি তাঁদের একটা রাজনৈতিক পরিসর দিয়েছে? আমরা যদি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকর্ম দেখি, দুটি বিষয় দেখতে পাব। প্রথমত, এই সামাজিক শক্তিগুলোকে সরকার স্বীকৃতিই দিতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, সামাজিক শক্তিগুলোকে বাছাই করার ক্ষেত্রে সরকারের একটা পিক অ্যান্ড চুজ নীতি ছিল। যখন বাংলা একাডেমির বইমেলায় কোনো ঘটনা ঘটছে কিংবা নারী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিবাসীদের দাবি নিয়ে কোনো বিক্ষোভ হচ্ছে, সরকার সেখানে খুব সহজেই একটা দমনমূলক ভূমিকায় চলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ যখন এমন সব দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যাচ্ছেন, যার অনেকগুলোই রাষ্ট্র যে নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই মৌলিক প্রশ্নকেই লঙ্ঘন করে, অথচ সরকার তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছে। সরকার এই পিক অ্যান্ড চুজ নীতি নিয়েছে, কারণ যে এলিট ঐকমত্যে সরকার গঠিত হয়েছে, এখানে তার স্বার্থ রয়েছে। এলিটরা তাদের স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করবে। এলিটরা তাদের স্বার্থের জন্য পিক অ্যান্ড চুজ নীতিতে যাদের দরকার, তাদের জায়গা দিচ্ছে। আর তাদের যাদের দরকার নেই, তাদের জায়গা দিচ্ছে না বা যাদের দাবিয়ে রাখা দরকার, তাদের ওপর খড়্গহস্ত হচ্ছে। 

প্রথম আলো:

সংস্কারের প্রসঙ্গ এলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব—এ শব্দগুলো ঘুরেফিরে আসছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো তাদের প্রাত্যহিক জীবনে কী পরিবর্তন আসছে, সেটা দেখতে চান। এ পর্যায়ে এসে কি মনে হচ্ছে, সংস্কারপ্রক্রিয়া থেকে সাধারণ মানুষ অনেকটাই বাদ পড়ে গেছেন? 

আসিফ মোহাম্মদ শাহান: আমরা যদি সামাজিক আন্দোলন বা শক্তিগুলোকে সংগঠিত করতে পারতাম, তাহলে এখন যে সংস্কারগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছি, তার ধরনটাই অন্য রকম হতে পারত। সাধারণ মানুষ যে ক্ষমতার ভারসাম্য বোঝেন না তা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তিগুলো একবার সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ আসলে কেন দরকার। সাধারণ মানুষ বোঝেন যে সরকারের পরিবর্তন হওয়া দরকার। তাঁরা বোঝেন এক ব্যক্তি, এক দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে। কিন্তু যখন কী প্রক্রিয়ায় এটা করতে হবে, সে প্রশ্ন তখন কিন্তু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, এ বিষয়গুলো তারা বুঝতে পারে না। এখানে একটা বড় ধরনের ব্যর্থতা তৈরি হয়েছে, এই মেকানিজমগুলো সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়নি। একপর্যায়ে মানুষ যখন দেখছেন সংস্কার নিয়ে যে আলাপগুলো হচ্ছে, সেটা তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে এবং যখন দেখছেন যে তাঁরা যখন জন্মসনদ নিতে ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন, আইনি সহায়তা নিতে থানায় যাচ্ছেন, তখন আগের মতোই তাঁদের ঘুষ দিতে হচ্ছে, তখন পুরো রাজনৈতিক পরিসর থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। এখন যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, তাহলে একটা প্যারাডক্স দেখতে পাবেন। নির্বাচন চান কি না, এ প্রশ্নের উত্তর তাঁরা দেবেন ‘হ্যাঁ’। আর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, এ প্রশ্নের তাঁরা উত্তর দেবেন ‘না’। 

এই গণ–অভ্যুত্থান একটা বৈপ্লবিক রূপান্তরের বড় সুযোগ নিয়ে এসেছিল, সে সুযোগটা হারিয়ে গেছে। অন্তত মানুষের অংশগ্রহণকে যদি নিশ্চিত করা যেত, তাহলে একটি সম্ভাবনা তৈরি হতে পারত। আমরা যদি মানুষকে সংগঠিত করতে পারতাম, তাঁদের সম্পৃক্ত করতে পারতাম, তাহলে হয়তো এই বিপ্লব আজ থেকে ৫, ১০, ১৫ বা ২০ বছর পর বাস্তবে রূপ নিতে পারত। 

প্রথম আলো:

জনগণকে সম্পৃক্ত করার এই দায়িত্ব তো অনেক বেশি রাজনৈতিক দলগুলোর। এত বড় একটা গণ–অভ্যুত্থানের পরও কেন দলগুলো এখানে ব্যর্থ হলো? 

আসিফ মোহাম্মদ শাহান: কারণ, কেউই আসলে দীর্ঘ মেয়াদে ভাবেনি কীভাবে মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায়, কীভাবে বোঝানো যায় যে পরিবর্তনগুলো তাঁদের
জীবনের জন্য অপরিহার্য। আমি বারবার বলি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলই বাস্তববাদী। তারা সব সময় হিসাব করে কোন পদ্ধতিতে বা কোন প্রক্রিয়ায় গেলে সহজে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব এবং কোন পথে গেলে ক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ী হওয়া যায়। 

এখানে দোষ-গুণ, ভালো-মন্দের বিষয় নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তার ধরনই এমন। রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে এই যে জনসম্পৃক্ততার প্রশ্ন, জনগণের অংশগ্রহণের প্রশ্ন, এটা তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পর ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে চায়, তার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। যদি একজন সাধারণ নাগরিক তাঁর নির্বাচিত সংসদ সদস্য বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নিয়মিত জবাবদিহির আওতায় রাখেন, তাহলে ওই রাজনৈতিক দল যে পেট্রন-ক্লায়েন্ট ব্যবস্থা তৈরি করবে বা রেন্টভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলবে, সেটা বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। ফলে ভবিষ্যতে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথও কঠিন হয়ে পড়বে। তাহলে এই কাঠামোকে বদলানোর কী স্বার্থ পড়েছে রাজনৈতিক দলের। এটা বিএনপির ক্ষেত্রে সত্যি, জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে সত্যি। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা এনসিপিও এলিট ঐকমত্যে ঢুকে পড়ছে।

 ফলে রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই এমনি এমনি গণপরিসর তৈরি করবে না। দলগুলোর ওপর সেই চাপটা থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চাপটা তৈরি করতে পারত।

আসিফ মোহাম্মদ শাহান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক র য় দলগ ল র ক ষমত য় দরক র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।

আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ