ঘনিয়ে আসছে ৯ জুলাই, এরপর কী করবেন ট্রাম্প
Published: 6th, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ৯০ দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন, তা শেষ হতে আর মাত্র কয়কে দিন বাকি। ৯ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কী ঘটবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
এই সময়সীমা পার হওয়ার পর পরিস্থিতি কী হবে, সেটা এখন ‘যার যার কল্পনা’ বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গেছে। তবে এ নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন, কিছু ক্ষেত্রে যার হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। সেই দিনটিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে আখ্যা দেন। বাস্তবতা হলো, তা ছিল গত ১০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক। এর জেরে দ্রুতই বিশ্বজুড়ে মন্দা শুরু হবে, অর্থনীতিবিদেরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
৯ এপ্রিল থেকে এসব শুল্ক কার্যকর হবে, এই আশঙ্কায় ওয়াল স্ট্রিটে অস্থিরতা শুরু হয়। বন্ড বাজারেও তার প্রভাব পড়ে। এরপর ট্রাম্প তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। বলেন, বিনিয়োগকারীরা বেশ অস্থির হয়ে উঠেছিলেন, ভয় পাচ্ছিলেন, সে কারণে তাঁর পিছিয়ে আসা।
সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া প্রায় সব পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে। তবে শেয়ারবাজারের যে ক্ষতি হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠা যায়নি। মূল্যস্ফীতির হারেও পরিবর্তন আসেনি। আবার শুল্ক বাড়লে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে সব অর্জন মুছে যেতে পারে।
বহু বৈঠক ও আলোচনা শেষে বলা হচ্ছিল, বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি হলো বলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি চুক্তি ঘোষিত হয়েছে, যার একটি ভিয়েতনামের সঙ্গে, সেই চুক্তিও চূড়ান্ত হয়নি, বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, আরও অনেক চুক্তি হবে। একই সঙ্গে ট্রাম্প হুমকি দিচ্ছেন, যেসব দেশ চুক্তি করবে না, তাদের তিনি চিঠি দিয়ে জানাবেন, তাদের রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র কী হারে শুল্ক আরোপ করবে।
জুলাইয়ের ৯ তারিখ ঘনিয়ে আসার আগে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিলের শুল্কহার ফিরিয়ে আনা হতে পারে কিংবা তা আরও বাড়ানো হতে পারে। তবে ‘যেসব দেশ আন্তরিকভাবে আলোচনা করছে’, তাদের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে; যদিও কারা এর আওতায় পড়বে, সেটা স্পষ্ট নয়। শেষ কথা বলার ক্ষমতা ট্রাম্পের হাতে, কিন্তু তিনিও দ্বিধায় আছেন বলে মনে হয় বলে সংবাদে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা চাইলে যা খুশি করতে পারি, সময়সীমা বাড়াতেও পারি, কমাতেও পারি। তিনি বিষয়টি সংক্ষেপে সেরে ফেলতে চান। সবাইকে একটা করে চিঠি পাঠিয়ে বলতে চান, ‘অভিনন্দন, আপনারা এখন থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবেন।’
আরেকবার ট্রাম্প বলেন, ‘কোন দেশ আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছে, তা দেখা হবে—ভালো না খারাপ। কিছু দেশের বিষয়ে চিন্তাই নেই, সোজা একটা বড় সংখ্যা পাঠিয়ে দেব।’ শুক্রবার তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চিঠি পাঠানো শুরু করবেন। ‘শুল্কহার হবে ১০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে’।
আশার বিষয় হলো, এসব নতুন হার আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে, অর্থাৎ এখনো আলোচনার সুযোগ আছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে ট্রাম্প যে চুক্তি করেছেন, তাতে সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, এটি তিন মাসের বিরতির সময়ের দ্বিগুণ। ফলে দেখা যাচ্ছে, চুক্তি করেও অনেক দেশ আগের চেয়ে বেশি শুল্কের খপ্পরে পড়ছে।
তবে এপ্রিলের ঘোষণামতে ভিয়েতনামের জন্য ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারিত ছিল, সেদিক থেকে দেখলে ২০ শতাংশ যেন কিছুটা স্বস্তিই।
বিশ্লেষকদের মতে, এটা ট্রাম্পের কৌশল হতে পারে। প্রচারণার সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, তিনি বিদেশি পণ্যে বেশি শুল্ক বসিয়ে রাজস্ব বাড়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প ও চাকরি ফেরাতে চান।
ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের বৈশ্বিক ইকুইটি বিভাগের প্রধান উলরিকে হফম্যান-বারচার্ডি বলেন, ‘মোটের ওপর, যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম চুক্তিকে আমরা ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখি, ভবিষ্যতের আরও টেকসই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির পথ দেখাতে পারে এটি।’
উলরিকে হফম্যান আরও বলেন, চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও আমরা মনে করি, বাজার ধীরে ধীরে এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে। শেষমেশ ট্রাম্প প্রশাসন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অগ্রাধিকার দেবে, বিশেষ করে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র সময়স ম
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’