কোনাবাড়ীতে পানিতে ভাসছিল মাদ্রাসার দুই ছাত্রের লাশ
Published: 6th, July 2025 GMT
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ীতে ডোবায় গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে মাদ্রাসার দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকালে মেট্রো থানার দেওয়ালিয়া দির্ঘীর পাড় গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া দুই শিশু হলো- রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার বড় মির্জাপুর শঠিবাড়ী গ্রামের আকমলের ছেলে মো. জুনায়েদ (১২)। সে বাবা-মার সঙ্গে দক্ষিণ দেওয়ালিয়াবাড়ী এলাকায় ইউনুস মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থেকে বাগানবাড়ি চার রাস্তার মোড় আল ইসলামিয়া ক্যাডেট মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। অন্যজন, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার তাতলা গ্রামের মো.
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকালে তারা দুইজন ওই ডোবায় গোসল করতে নামে। সাঁতার না জানায় তারা ডোবার মাঝখানে গেলে তলিয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে ডোবার পাশেই ঈদগাহ মাঠে ফুটবল খেলছিলো ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা। হঠাৎ শামীম নামে এক শিশু তাদের দুইজনের মরদেহ পানিতে ভাসতে দেখে চিৎকার শুরু করে। পরে আশেপাশের লোকজন এসে ডোবা থেকে ওই দুই শিশুর মরদেহ মাটিতে তোলা হয়।
মো. রুবেল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ছোট্ট শিশুদের চিৎকারে এগিয়ে এসে দেখি ডোবায় দুই শিশুর মরদেহ ভাসছে। পরে আমিসহ কয়েকজন পানিতে নেমে তাদের মরদেহ ওপরে তুলি। এর মধ্যে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ওই দুই শিশুর পরিবারের সদস্যরা এসে তাদের সন্তানদের শনাক্ত করে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন কোনাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পরিবারের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ দাফনের আবেদন করা হয়েছে। পরে ওই দুই শিশুর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল শ উদ ধ র র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।