জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঐক্যের ভিত্তিতে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে
Published: 6th, July 2025 GMT
জাতীয় নিরাপত্তা কেবল সামরিক সক্ষমতার বিষয় নয়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনীতির বিকাশ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক সংলাপে এই অভিমত দেন বক্তারা। ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস) আয়োজিত এই সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। জনগণের ক্ষমতায়ন ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পারলে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এর মানে এই নয় যে ঐক্য নেই। জাতীয় স্বার্থে সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।
সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারলেই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরোধিতা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জনগণের কাছে জবাবদিহি না–ও থাকতে পারেন। কারণ, তাঁরা দলের প্রতিনিধি হবেন, ব্যক্তির নন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৫-২০ বছর ধরে যে যুদ্ধ চলছে, তা বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার পথ একটাই—জনগণের হাতে ব্যালট পেপার তুলে দেওয়া, যাতে তাঁরা স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ঐক্যের একমাত্র পথ হচ্ছে গণতন্ত্র। এটি নিশ্চিত হলে ঐক্য নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।’
সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
আলোচনায় জাতীয় ঐক্যের ধারণাকে গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী হিসেবে বর্ণনা করেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, এটি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যকে দমন করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, বর্তমান জাতিরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক করপোরেশন ও আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) মতো সংস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফরহাদ মজহারের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে গণপ্রতিরক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। যেখানে জনগণের সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি থাকবে। বর্তমান সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর এই সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না, বরং জনগণের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। কেবল বেতনভুক্ত সেনাবাহিনী দিয়ে দেশ রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা বলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা কেবল সামরিক সক্ষমতার বিষয় নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনীতির বিকাশ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও অভিমত দেন বদিউল আলম মজুমদার।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হলে তাঁদের আপত্তি নেই। তবে যেনতেন একটি নির্বাচন তাঁরা চান না। পিআর পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, যেমন আমরা ট্র্যাডিশনাল (প্রচলিত) নির্বাচনের বিপরীতে পিআর পদ্ধতি চাচ্ছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকার অধীনে চাচ্ছি, এটা আমাদের দলীয় এজেন্ডা, অন্যদেরও এজেন্ডা আছে।’
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, আলোকচিত্র সাংবাদিক শহিদুল আলম, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ন শ চ ত কর গণতন ত র র জন ত ক ব এনপ র জনগণ র র জন য ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে কুমিল্লার সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ভোটকেন্দ্র পরিচালক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডা. তাহের বলেন, “আরপিও, সংস্কার কিংবা হ্যাঁ/না গণভোট—কোনো কিছুই এখন বিএনপি মানছে না। সরকার যদি তার নিরপেক্ষতা হারায়, তাহলে দেশের জনগণ তার প্রতি আস্থা হারাবে। তখন জনগণ আন্দোলনে নামবে।”
তিনি আরো বলেন, “জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে সরকার যদি অপকৌশল করে, তাহলে জনগণ আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে।”
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কুমিল্লা অঞ্চল টিম সদস্য ও সাবেক জেলা আমীর আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান, কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি মুফতি মাহবুবুর রহমান এবং শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মজিবুর রহমান ভূঁইয়া।
উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চৌদ্দগ্রাম পৌর আমীর মাওলানা ইব্রাহীম, জামায়াত নেতা আয়ুব আলী ফরায়েজী, সাবেক উপজেলা দক্ষিণ আমীর শাহ মিজানুর রহমান, উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আব্দুর রহিম এবং পৌর সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন ওপেল প্রমুখ।
ঢাকা/রুবেল/এস