গত মে মাসে গুগলের বার্ষিক আই/ও সম্মেলনে ‘ভিও থ্রি’ উন্মোচনের পর থেকেই ভিডিও জেনারেটর টুলটি নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে আগ্রহ বাড়তে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বার্তা থেকে সরাসরি ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম ভিডিও জেনারেটর টুলটিতে সংলাপ ও শব্দও যুক্ত করা যায়, যা কৃত্রিম ভিডিও তৈরির প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এবার নিজেদের এআই চ্যাটবট জেমিনিতে ভিও থ্রি যুক্ত করেছে গুগল। এর ফলে জেমিনি চ্যাটবট ব্যবহারকারীরা বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত ভিও থ্রি ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রাথমিকভাবে ভিও থ্রি শুধু গুগলের ‘এআই আলট্রা’ ব্যবহারকারীদের জন্য চালু করা হয়েছিল। এরপর মে মাসের শেষ দিকে কিছু নির্বাচিত দেশে বসবাসকারী ‘গুগল এআই প্রো’ ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, এখন থেকে বিভিন্ন দেশের জেমিনি ব্যবহারকারীরা সরাসরি ভিও থ্রি ব্যবহার করতে পারবেন।

জেমিনিতে যুক্ত হলেও ভিও থ্রি টুলটির মাধ্যমে ইচ্ছেমতো ভিডিও তৈরি করা যাবে না বলে জানিয়েছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, জেমিনিতে যুক্ত হওয়া ভিও থ্রি টুলটির মাধ্যমে প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিনটি ভিডিও তৈরি করা যাবে। প্রতিটি ভিডিও তৈরির জন্য ব্যবহারকারীদের বিষয়ভিত্তিক বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট প্রম্পট লিখতে হবে। এআই আলট্রা প্ল্যানের গ্রাহকদের জন্য দৈনিক ভিডিও তৈরির সীমা তুলনামূলক বেশি হলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি গুগল।

গুগলের পণ্য বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জশ উডওয়ার্ড জানিয়েছেন, শিগগিরই ভিও থ্রিতে ছবি থেকে ভিডিও তৈরির সুবিধা যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের চাহিদার ভিত্তিতে আরও সাশ্রয়ী মূল্যের সাবস্ক্রিপশন চালুর পাশাপাশি দৈনিক ভিডিও তৈরির সীমা বাড়ানোর বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।

সূত্র: অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক ত কর ব যবহ র র জন য গ গল র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ