ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘সি’তে বাহরাইন ও তুর্কেমেনিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি র‍্যাঙ্কিংয়ে বেশ ওপরে থাকা মিয়ানমারকেও হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচে বাংলাদেশ গোল করেছে ১৬টি এবং হজম করেছে মাত্র ১ গোল। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ঋতুপর্ণা–তহুরারা কতটা দাপুটে ফুটবল খেলেছে।

বাছাইপর্বে দাপুটে ফুটবল খেললেও এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের লড়াইটা সহজ হবে না। টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাওয়া ১২ দলের মধ্যে ১১ দলের নামই চূড়ান্ত হয়েছে। র‍্যাঙ্কিংয়ে এই ১১ দলের প্রত্যেকটির অবস্থান বাংলাদেশের ওপরে। এমনকি এখন পর্যন্ত সুযোগ পাওয়া দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই আছে, যারা র‍্যাঙ্কিংয়ে এক শর বাইরে।

২০২৬ সালের এশিয়ান কাপে আয়োজক হিসেবে খেলবে অস্ট্রেলিয়া, র‍্যাঙ্কিংয়ে যাদের অবস্থান ১৫ নম্বরে। এ ছাড়া ২০২২ এশিয়ান কাপের শীর্ষ তিন দল হিসেবে বাছাইপর্বে না খেলেই জায়গা করে নিয়েছে চীন (১৭), দক্ষিণ কোরিয়া (২১), এবং জাপানও (৭)।

আরও পড়ুনরাত আড়াইটায় ঋতুপর্ণাদের সংবর্ধনার আগে এ বিষয়গুলো ভেবেছেন কি ১ ঘণ্টা আগে

বাছাইপর্বে ‘বি’ গ্রুপে ৪ ম্যাচের ৪টিতে জিতে এশিয়ান কাপের টিকিট পেয়েছে ভারত, র‍্যাঙ্কিংয়ে যাদের অবস্থান ৭০ নম্বরে। এ নিয়ে  ১০ম বারের মতো এশিয়ান কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করল ভারতের মেয়েরা। গ্রুপ ‘ডি’–তে সব ম্যাচ জিতে শীর্ষে থেকে এশিয়ান কাপে যাওয়া চীনা তাইপের অবস্থান র‍্যাঙ্কিংয়ে ৪২। ৩৭ নম্বরে থাকা ভিয়েতনাম গ্রুপ ‘ই’ থেকে পেয়েছে শতভাগ সাফল্য।

এশিয়ান কাপের টিকিট পেয়েছে ভারতও।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ছ ইপর ব র অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সাহেব আলীতে শুরু, বাটলারে স্বপ্নপূরণ

২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পথচলা শুরু বাংলাদেশ নারী দলের। প্রথম ম্যাচেই ১-০ গোলে হার। তবে সেই হতাশা বেশি দিন থাকেনি। পরের ম্যাচে ৩১ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কাকে ২-০ গোলে হারিয়ে আসে প্রথম জয়।

সেই শুরু থেকে আজ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী দল খেলেছে ফিফা–স্বীকৃত টায়ার-১ শ্রেণির ৬৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর মধ্যে জয় ২৭টি, হার ৩১টি, ড্র ১১টি। ১৫ বছরের এই পথচলায় সবচেয়ে উজ্জ্বল অর্জন—প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া।

কোচ সাহেব আলী বেঁচে থাকলে আজ নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন। ১৯৭৭ সালের ১০ আগস্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ২২ জন ছাত্রীকে নিয়ে ঢাকায় প্রথম মেয়েদের ফুটবলের অনুশীলন শুরু করেছিলেন তিনিই। তখন সাহেব আলী বলেছিলেন, এই মেয়েদের মধ্যেই ভবিষ্যতের ফুটবলার আছে। ৭-৮ জন অনেক দূর যেতে পারে। কিন্তু অর্থাভাবে কয়েক দিনের মধ্যেই সেই অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ নীরবতা।

২০০৩ সালে ফিফা ও এএফসির চাপ না থাকলে হয়তো সেই নীরবতা আজও থাকত। বাধ্য হয়েই বাফুফে আবার চালু করে নারী ফুটবল। মাঠে এসে তখন ম্যাচ পণ্ড করে দেয় একশ্রেণির মানুষ। বাফুফে পিছিয়ে আসে। কিন্তু মেয়েদের ফুটবল চালু না রাখলে অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় ফিফা। সেই হুমকিই যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

আরও পড়ুনপাহাড়ি কন্যা ঋতুপর্ণা, যাঁর বাঁ পায়ের জাদুতে ইতিহাসের সামনে বাংলাদেশ০২ জুলাই ২০২৫

২০০৭ সালে ‘ভিশন এশিয়া’ প্রকল্পের অধীনে প্রথম মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বাফুফে। ২০০৯ সালে শুরু হয় জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। এরপর গোলাম রব্বানীকে নারী দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর হাত ধরেই শুরু নতুন যাত্রা। যদিও বাফুফে ভবনে দীর্ঘমেয়াদি আবাসিক ক্যাম্পের আয়োজন দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভঙ্গুর কাঠামোর মধ্যে শুধু ক্যাম্প করে আর কত দূর যাওয়া যাবে? মেয়েদের অদম্য ইচ্ছার জোরে কত দূর যাওয়া যায়, তা তো আজ প্রমাণিতই।

২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের সময়টায় দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে সাফের বাইরে প্রথম কোনো দল হিসেবে উজবেকিস্তানের সঙ্গে খেলার সুযোগ আসে। অলিম্পিক বাছাইয়ের সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।

গোলের পর আনন্দে কেঁদেই ফেললেন ঋতুপর্ণা চাকমা। উচ্ছ্বসিত মারিয়া মান্দা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাহেব আলীতে শুরু, বাটলারে স্বপ্নপূরণ